৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন। বিশ্বজুড়ে দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। কারণ, এই নির্বাচনের ফল বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতিতে বিরাট প্রভাব ফেলবে। তাই শুধু বিশ্ববাসী নন, বিশ্বনেতারাও তৎপর। তার মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অন্যতম। অভিযোগ রয়েছে ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছিলেন পুতিন। ওই নির্বাচনে ট্রাম্প বিজয়ী হন। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ওই নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগও আনে পুতিনের বিরুদ্ধে।
চ্যাথাম হাউসের রাশিয়া ও ইউরোশিয়া প্রোগ্রামের সহযোগী ফেলো তিমোথি অ্যাশ বলেন, নানা রকম কারণে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকে পছন্দ করেন পুতিন। কারণ, তিনি ট্রাম্পের বিষয়টি কোমলভাবে ভাবেন। নির্বাচিত হলে ইউক্রেন যুদ্ধে দেশটিকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা কর্তন করবেন। রাশিয়ার ওপর থেকে তুলে নেবেন নিষেধাজ্ঞা।
টিমোথি অ্যাশ আরও বলেন, আমার মনে হয় ট্রাম্পের দিকে তাকিয়ে পুতিন ভাবেন তারই প্রতিচ্ছবি। তারই মতো একজন কতৃত্ববাদী। ট্রাম্পকে তিনি বুঝতে পারেন বলে মনে করেন। উপরন্তু পুতিন গণতান্ত্রিক পশ্চিমা ব্যবস্থাকে ঘৃণা করেন। রাশিয়ার নেতা ভাবে এবারও ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদের মতো হবে। একই রকম ন্যাটো ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতি অবহেলা করবেন। তবে রাশিয়ান বিশ্লেষকরা মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রে যিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হোন না কেন, রাশিয়ার কর্মকর্তারা মনে করেন রাশিয়ার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন হবে না।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল রাজনীতি নিয়ে নিজের চিন্তাভাবনা প্রকাশ করেছেন পুতিন। ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন পুতিন। তখন তিনি ট্রাম্প সম্পর্কে বলেন, তিনি একজন উজ্জ্বল ও মেধাবী ব্যক্তি। এতে কোনো সন্দেহ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পুতিনকে দায়ী করে বলে, ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করে ট্রাম্পকে বিজয়ী করতে যুক্তরাষ্টের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছেন পুতিন। যুক্তরাষ্ট্রে সিনেটের উভয় পক্ষের একটি রিপোর্টে দেখা যায়, নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে রাশিয়া। এ বছর ৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের এক গোয়েন্দা ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে ইঙ্গিত দেন যে, ২০২৪ সালের এই নির্বাচনে রাশিয়ার পছন্দ ট্রাম্প।
অফিস অব দ্য ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের ওই কর্মকর্তা বলেন, অতীতের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় এবারো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে না। কারণ, ইউক্রেন যুদ্ধে ডেমোক্রেট সরকার পুতিনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সেপ্টেম্বরে কমলা হ্যারিস সম্পর্কে পুতিন বলেন, তার হাসি বিস্ফোরক এবং সংক্রামক। তিনি ভালো করছেন। সম্ভবত তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেবেন না। অক্টোবরে বিখ্যাত সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড তার নতুন বই ‘ওয়ার’-এ দাবি করেন, ট্রাম্প ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্টের পদ হারানোর পর পুতিনের সঙ্গে কমপক্ষে সাতবার ফোনে কথা বলেছেন। তবে এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ট্রাম্পের নির্বাচনি শিবির।
অন্যদিকে ট্রাম্প নিজে বলেছেন, বব উডওয়ার্ড হলেন একজন গল্পকার। একজন বাজে গল্পকার। তিনি যে সুনাম কুড়িয়েছিলেন, তা হারিয়েছেন। অক্টোবরের শেষের দিকে ব্রিকস সামিট শেষের দিকে পুতিন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে সবকিছু করার বিষয়ে কথা বলেছেন ট্রাম্প। আমি আশা করি এ বিষয়ে তিনি আন্তরিক হবেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: