আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বলতে গেলে ‘অস্বস্তিকর’ পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। গণতন্ত্র-মানবাধিকারের মতো বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বারবার সতর্কতা উচ্চারণ করলেও আমলে নেয়নি বাংলাদেশ সরকার; বরং অনেক ক্ষেত্রে পাল্টা অভিযোগও তুলেছে।
গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু দুই দিনের সফরে ঢাকায় এলেও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কারও সঙ্গে বৈঠক বা কথাবার্তাও হয়নি। তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয় এবং দ্রুত নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় যাচ্ছেন আলোচনার জন্য।
১৫ সেপ্টেম্বর, রবিবার অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবে ওই প্রতিনিধি দল। দলে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের (অর্থ মন্ত্রণালয়) অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান নেতৃত্ব দেবেন। তার সঙ্গে দলে আরও থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) পক্ষ থেকে অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) এবং সরকারের অধীন বেসামরিক বৈদেশিক সাহায্য প্রদানকারী সংস্থা ইউএসএআইডি’র প্রতিনিধিরাও দলে রয়েছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে অত্যন্ত ইতিবাচক পরিবেশে যুক্তরাষ্ট্র দলের বৈঠক হবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার রাতে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের আলোচনা শুরু করার আগে আমি কোনও ধরনের মন্তব্য করতে চাই না, যেটি আলোচনার স্বাভাবিকতা ক্ষুণ্ন করে। আমি শুধু এটি বলতে পারি যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রতিনিধি দল আসছে; তারা যে এই সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় সেটির বড় প্রতিফলন ঘটছে এর মাধ্যমে। প্রতিনিধি দলের সদস্যদের পরিচয় দেখলে বোঝা যায় এই আলোচনা বহুমাত্রিক হবে। এটি শুধু একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে মধ্যে সীমিত থাকবে না। আমরাও এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
উল্লেখ্য, প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ওয়ার্কিং লাঞ্চ করবে দলটি। পৃথকভাবে দলের কয়েকজন সদস্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে টেকনিক্যাল মিটিং করবেন।
সহযোগিতার মূল ফোকাস
প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছে ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। স্বাভাবিকভাবে এবারের সফরে মূল আলোচনার ফোকাস আর্থিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা হবে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কয়েকটি ক্ষেত্রে ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের বিশেষায়িত জ্ঞান রয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাত সংস্কার, মুদ্রা ব্যবস্থাপনা, আর্থিক খাতে নজরদারিসহ (ফিন্যান্সিয়াল ওয়াচডগ) রয়েছে। আমাদের চাহিদা অনুযায়ী তারা সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের যেকোনও ধরনের কারিগরি সহায়তা ও বিশেষজ্ঞ জ্ঞান দিতে রাজি আছে যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে নির্দিষ্টভাবে তাদের কাছে যদি আমাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরা সম্ভব হয়, তবে সহায়তা করবে তারা।’
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে অনেক ধরনের সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সহায়তা চাইলে তারা সহায়তা করবে। ঢালাওভাবে ব্যাংকিং খাতে সমস্যা সমাধানে সহায়তা চাইলে সেটি কার্যকর হবে না।’
সাধারণভাবে অন্য দেশকে ঋণ দেয় না যুক্তরাষ্ট্র। সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনকে বৃহৎ আকারে ঋণ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তু সেটি বিশেষ পরিস্থিতির কারণে। ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হওয়ার কারণে বিষয়টি অনেক জটিল।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সাধারণভাবে ঋণ দেয় না। এরপরও যদি কেউ ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করে, তাদের নির্বাচনের বছরে এটি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
তিনি বলেন, ‘তবে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যেমন- বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফ থেকে ঋণ পেতে সহায়তা করতে পারে।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: