কমলা হ্যারিসকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে একটি ওয়েবসাইটে

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:৫৭

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে কমলা হ্যারিসকে নিয়ে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন কমলা। এ ঘটনাটি ঘটেছে ২০১১ সালে, স্যান ফ্রান্সিসকো শহরে, যার ফলে এক ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরী শারীরিক অক্ষমতার শিকার হয়েছে। 

তথ্যগুলো প্রচারিত হয়েছে রহস্যজনক এক ওয়েবসাইট থেকে। গত ২ সেপ্টেম্বর নিবন্ধটি ওই ওয়েবসাইটে প্রকাশ পেয়েছে, যারা নিজেদের ‘কেবিএসএফ-স্যান ফ্রান্সিসকো নিউজ’ নামের গণমাধ্যম বলে দাবি করে থাকে। এরইমধ্যে পোস্টটি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে কিছু পোস্টে ডানপন্থী ব্যবহারকারীদের দাবি, এর ভিউ কয়েক মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে।

তবে এই নিবন্ধে অসংখ্য ভুল তথ্য খুঁজে পেয়েছে আন্তর্জাতিক একটি সংবাদমাধ্যম। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, নিবন্ধটি ভুয়া। আর ওয়েবসাইটটিও এখন অফলাইন হয়ে গেছে।


প্রকাশিত ওই নিবন্ধে অভিযোগ কী?

একটি অনলাইন নিবন্ধ, যার সঙ্গে রয়েছে একটি পাঁচ মিনিট দীর্ঘ সাক্ষাৎকার। এতে এমন একজন নারীর সাক্ষাৎকার আছে, যিনি নিজেকে ২৬ বছর বয়সী আলিশিয়া ব্রাউন হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তার দাবি, তিনি এখন শারীরিকভাবে অক্ষম।

তবে তার পরিচয় নিশ্চিত করার মতো কোনো তথ্য বা তার বর্ণনা আদৌ সত্যি কি না, সে প্রমাণ মেলেনি এতে। ভিডিও ধারণ করার সময় তিনি নিচে বসে ছিলেন ও ভিডিওতে তার পায়ের অংশ দেখা যায়নি, এবং তিনি এক অজানা জায়গা থেকে কথা বলছেন।

এ নিবন্ধে তাকে ‘আলিশা’ ও ‘আলিশিয়া’ উভয় নামে সম্বোধন করা হয়েছে, তাও কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই।

ভিডিওতে তিনি দাবি করেন, ২০১১ সালের জুনে স্যান ফ্রান্সিসকোতে নিজের মায়ের সঙ্গে রাস্তা পার হওয়ার সময় তাকে একটি গাড়ি চাপা দেয়। পরবর্তীতে তিনি আরও যোগ করেন, তাকে চাপা দেওয়া ব্যক্তিটি ছিলেন কমলা হ্যারিস। তবে, তিনি এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাননি।

ভিডিওর বর্ণনাকারী দাবি করেছেন, ওই নারী ১১টি অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে গেছেন, যেখানে তারা দুটি এক্স-রে’র ছবিও দেখান। তবে এ ঘটনা ঘটার বা এর সঙ্গে হ্যারিসের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এদিকে ওয়েবসাইটির নিবন্ধন সংশ্লিষ্ট তথ্য খতিয়ে দেখেছে বিবিসি ভেরিফাই। এতে দেখা যায়, ওয়েব ডোমেইনটি মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ ২০ আগস্ট সেট আপ করা হয়েছিল। এছাড়া স্যান ফ্রানিস্কোতে ‘কেবিএসএফ’ নামের কোনো সংবাদ আউটলেট থাকার হদিসও মেলেনি।

ওয়েবসাইটটি এখন অফলাইনে নেওয়া হয়েছে ও এতে এখন আর প্রবেশ করা যাচ্ছে না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।

নিবন্ধের শুরুতে দেওয়া ছবিতে একটি বিধ্বস্ত গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনের ক্লোজ আপ শট দেখা গেছে, যেখানে গাড়ির পাশে থাকা রোডের একটি কোণায় সম্ভবত একজন পুলিশ অফিসার ও বেশ কিছু সংখ্যক অগ্নি নির্বাপন বাহিনীর সদস্যরা দাঁড়িয়ে আছেন।

বিবিসি ভেরিফাই ওই ছবি ডাউনলোড করে অনলাইনে এর আগের বিভিন্ন সংস্করণ খুঁজে দেখেছে, যেখানে তারা একটি ‘রিভার্স ইমেজ’ সার্চ টুল ব্যবহার করেছে। এতে দেখা যায়, এর আসল পোস্টটি ২০১৮ সালে গুয়ামের মাঙ্গিলাও গ্রামে ঘটে যাওয়া এক সড়ক দুর্ঘটনার নিবন্ধ।

পরবর্তীতে এই একই রিভার্স ইমেজ সার্চ টুল ব্যবহার করে ভিডিও’তে দেখানো এক্স-রে’গুলোও পরীক্ষা করা হয়। এতে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এইসব ছবি বিভিন্ন মেডিকেল গবেষণাবিষয়ক নিবন্ধ থেকে নেওয়া, যেগুলো পোস্ট হয়েছে ২০১০ ও ২০১৭ সালে।

সেইসব নিবন্ধ অনুসারে, প্রথম এক্স-রে’টি চীনের এক হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৫৮ বছর বয়সী এক রোগীর। আর দ্বিতীয় এক্স-রে’টি নেদারল্যান্ডসের ‘রাডবউড ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার’-এ ভর্তি হওয়া এক ১২ বছর বয়সী কিশোরীর।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: