যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান মনোনীত প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারাভিযান বিশ্বজুড়ে নজর কাড়ছে। যদিও তাদের প্রচারাভিযানে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে মূলত ইউক্রেন ও গাজায় চলমান যুদ্ধের পাশাপাশি চীনের সঙ্গে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা কেন্দ্রে রয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার দুটি পারমাণবিক সজ্জিত প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি ভারত ও পাকিস্তান এই নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি নজর রাখছে।
ভারত ও পাকিস্তানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা উভয় প্রার্থীর সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সাময়িকী নিউজউইকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ভারতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বিশেষভাবে উন্নতির পথে। শীতল যুদ্ধের সময়কার তিক্ত সম্পর্ক এই শতাব্দীতে উষ্ণ হয়েছে। ট্রাম্প ও তার উত্তরসূরি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অধীনে এই সম্পর্কের বিকাশ হয়েছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেছেন যে তারা ট্রাম্প বা হ্যারিস উভয়ের সঙ্গেই গঠনমূলকভাবে কাজ করতে সক্ষম হবেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র নিউজউইককে বলেছেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিস্তৃত বৈশ্বিক কৌশলগত অংশীদারত্ব রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বলেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অংশীদারত্বের সম্পর্ক রয়েছে, যা উভয় দেশেরই সমর্থন পেয়েছে এবং আমরা এটিকে আরও শক্তিশালী করতে আত্মবিশ্বাসী।
ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত অংশীদারত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ব্যক্তিগত রসায়ন স্পষ্ট ছিল ২০১৯ এবং ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ‘হাউডি মোদি’ এবং ‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। ট্রাম্পের মেয়াদকালে কৌশলগত অংশীদারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং এটি চীনের প্রভাব প্রতিহত করার পাটাতন হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২০ সালে ভারতীয়রা ট্রাম্পের প্রতি আস্থা রেখেছিল। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, বাইডেন ও ট্রাম্পের প্রতি ভারতীয়দের আস্থা প্রায় সমান।
গত বছর বাইডেন প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় তাদের বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তি করেছিল। বাইডেন ও মোদির সফরগুলোর মাধ্যমে সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। যদিও কিছু উত্তেজনা রয়ে গেছে, বিশেষ করে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক অংশীদারত্ব নিয়ে। বাইডেন প্রশাসন এই বিষয়টি নিয়ে সতর্ক থেকেছে। বাইডেনের সময়কালে ট্রাম্প-যুগের শুল্ক বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে। তবে ভারতে মানবাধিকার বিষয়ে হ্যারিসের মন্তব্যগুলো সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
কমলা হ্যারিসের অতীত মন্তব্যগুলো পাকিস্তানে ভালোভাবেই গ্রহণ করা হয়েছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র নিউজউইককে বলেছেন, কাশ্মির সম্পর্কে ২০১৯ সালে করা মন্তব্যগুলো আমাদের আশ্বস্ত করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কূটনৈতিক পদক্ষেপের আশা করে পাকিস্তান। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য মনোযোগ কামনা করে ইসলামাবাদ। পাকিস্তান চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কেও ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত মাসুদ খান বলেছেন, আমরা চাই যুক্তরাষ্ট্রে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকুক। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অবস্থার প্রভাব বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতির ওপর পড়ে।
তিনি আরও বলেন, আমরা কামনা করি এমন রাজনৈতিক পরিস্থিতি, যা আরও সুসংহত সমাজের জন্য সহায়ক হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: