তাইওয়ানের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের সমর্থনের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা স্থগিত করেছে চীন। ১৭ জুলাই বুধবার এই পদক্ষেপকে ‘দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি বৈশ্বিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টায় বড় আঘাত হতে পারে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
নভেম্বর মাসে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক অস্ত্র বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছিল। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং জো বাইডেনের মধ্যে শীর্ষ সম্মেলনের আগে অবিশ্বাস কমানোর একটি প্রচেষ্টা ছিল। এরপর থেকে এই বিষয়ে আর কোনও প্রকাশ্য ঘোষণা আসেনি।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বুধবার বলেছেন, তাইওয়ানের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলমান আলোচনার জন্য রাজনৈতিক পরিবেশকে গুরুতরভাবে বিপন্ন করেছে।
লিন বলেন, ফলে, চীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এবং নিরস্ত্রীকরণের নতুন ধাপের আলোচনা স্থগিত করা হবে। এর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি আরও বলেন, চীন আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে যোগাযোগ বজায় রাখতে ইচ্ছুক। তবে যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের মূল স্বার্থকে সম্মান করতে হবে এবং সংলাপ ও বিনিময়ের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত তৈরি করতে হবে।
১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাইপের বদলে বেইজিংকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়। তবে তাইওয়ানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী এখনও যুক্তরাষ্ট্র। চীন ক্রমাগত এর নিন্দা জানিয়ে আসছে।
গত চার বছর ধরে তাইওয়ান চীনের সামরিক তৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। প্রায় প্রতিদিন চীনের যুদ্ধবিমান এবং যুদ্ধজাহাজগুলো টহল ও মহড়া চালাচ্ছে। জুনে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের জন্য প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের দুটি অস্ত্র বিক্রি অনুমোদন করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার চীনের পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেছেন, বেইজিং রাশিয়ার নেতৃত্ব অনুসরণ করছে। তারা বলছে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অন্যান্য চ্যালেঞ্জ থাকা অবস্থায় অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে অংশগ্রহণ করা যাবে না।
মিলার বলেন, আমরা মনে করি এই পন্থা কৌশলগত স্থিতিশীলতাকে দুর্বল করে। এটি অস্ত্র দৌড়ের গতিশীলতার ঝুঁকি বাড়ায়। দুঃখজনকভাবে, এই আলোচনা স্থগিত করে চীন কৌশলগত ঝুঁকি পরিচালনা এবং ব্যয়বহুল অস্ত্র দৌড় প্রতিরোধের প্রচেষ্টা গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে আমরা, যুক্তরাষ্ট্র, চীনের সঙ্গে ঝুঁকি হ্রাসের জন্য নির্দিষ্ট পদক্ষেপগুলোর বিকাশ ও বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩ হাজার ৭০০টি পারমাণবিক ওয়ারহেডের মজুদ রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৪১৯ টি কৌশলগত পারমাণবিক ওয়ারহেড। ওয়াশিংটনের অনুমান, চীনের ৫০০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে তা এক হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: