ভারত-রাশিয়ার বন্ধুত্বে উদ্বিগ্ন ওয়াশিংটন

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১১ জুলাই ২০২৪ ০৯:৩৬

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি

দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে রাশিয়া গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর এটিই তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। স্থানীয় সময় গত সোমবার সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে দিল্লি থেকে মস্কোর উদ্দেশে যাত্রা করেন তিনি। সন্ধ্যায় মস্কো পৌঁছে রাতে ক্রেমলিনে তাঁর সম্মানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দেওয়া নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন।

মস্কোয় মোদিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান পুতিন। করমর্দন ও আলিঙ্গনের পর একান্ত আলোচনায় বসেন দুই নেতা। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে মোদির এ সফরে নজর রাখার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার মোদির রাশিয়া সফর প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘রাশিয়া সফরে গিয়ে নরেন্দ্র মোদি কী বক্তব্য দেন, সে বিষয়ে আমরা নজর রাখব। তবে ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার বন্ধুত্বের বিষয়ে ওয়াশিংটন ইতিমধ্যেই দিল্লির কাছে উদ্বেগ জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আশা করে, ভারত বা যেকোনো দেশ যখন রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে, তখন তাঁরা মস্কোকে জাতিসংঘ সনদ মেনে চলার কথা মনে করিয়ে দেবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থানের সমালোচনা করে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, তারা হিংসায় জ্বলছে। নিবিড়ভাবে এ সফরের দিকে নজর রাখছে তারা। তাদের নজরদারিই এই বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলছে।

সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সোমবার ক্রেমলিনে দুই নেতার বৈঠকের শুরুতে মোদিকে তৃতীয় দফায় ভারতের ক্ষমতায় ফেরার জন্য শুভেচ্ছা জানান পুতিন। তিনি বলেন, এ জয় এমনি এমনি আসেনি। দীর্ঘদিনের কঠোর পরিশ্রমের ফল এ জয়। ভারতের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি নিয়ে মোদির স্বতন্ত্র চিন্তাভাবনা আছে। দেশের মানুষের স্বার্থে তিনি কঠিন সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসেন না। সারাটা জীবনই দেশের জন্য কাজ করেছেন। দেশের মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন। মানুষও ব্যালটের মাধ্যমে তার প্রতিদান দিয়েছেন।

উচ্চ বেতনের চাকরির আশায় ভারত থেকে প্রতিবছর বহু মানুষ রাশিয়ায় যান। অভিযোগ রয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই ভারতীয়দের অনেককেই রুশ বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়। এ ছাড়া অসাধু ট্রাভেল এজেন্টদের মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে অনেক ভারতীয় নাগরিক রুশ বাহিনীতে যোগদান করেছেন। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণে বাধ্য করা হয় তাঁদের। রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে ভারতীয়দের নিহত হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে পুতিনের কাছে উদ্বেগ জানান মোদি। জবাবে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে ভুক্তভোগীদের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আশ্বস্ত করেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

খবরে বলা হয়েছে, বৈঠকে পুতিনকে ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানার আহ্বান জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না। আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমেই কেবল এ ক্ষেত্রে সাফল্য আসতে পারে।

সোমবার মোদির রাশিয়া সফরের মধ্যেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের একটি শিশু হাসপাতালে হামলা চালায় রুশ বাহিনী। এতে ৩৭ জন নিহত হন। সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনে রাশিয়ার চালানো সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা এটি। এ ঘটনার কঠোর সমালোচনা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

গতকাল মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় শিশু হাসপাতালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। দুঃখজনক ঘটনা হলো, এই দিনটিতেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশের নেতা বিশ্বের সবচেয়ে জঘন্য অপরাধীকে আলিঙ্গন করেছেন।’



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: