যুদ্ধবিরতি বিলম্বের জন্য হামাসকে দোষারোপ বাইডেনের

মুনা নিউজডেস্ক | ১৬ জুন ২০২৪ ০১:০৪

ছবি : সংগৃহীত ছবি : সংগৃহীত

 

ইসরাইলি হেলিকপ্টার বৃহস্পতিবার রাফাতে হামলা চালিয়েছে। বাসিন্দারা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আরেকটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে হামাসকে ‘সবচেয়ে বড় বাধা’ উল্লেখ করার পরই হামাস যোদ্ধারা দক্ষিণ গাজা শহরের রাস্তায় দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করছে। ইসরাইলের উত্তর সীমান্তেও উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। হামাসের মিত্র হিজবুল্লাহর সামরিক অবস্থানগুলো লক্ষ্য করে আরো আক্রমণ এবং লেবাননে ইসরাইলি হামলায় একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ভাগ্য নিয়ে ব্যাপক শঙ্কা এবং মে মাসের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায় সত্ত্বেও ইসরাইলি বাহিনী ওই মাসেই রাফাহতে স্থল অভিযান শুরু করে।


বাসিন্দারা আরো জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাফাহ শহরের পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক আগুন লেগেছে।

বাসিন্দাদের একজন এএফপি’কে বলেন, ‘ইসরাইলি কামান এবং যুদ্ধজাহাজ ছাড়াও যুদ্ধবিমান, অ্যাপাচি (হেলিকপ্টার) এবং কোয়াডকপ্টার থেকে খুব তীব্র গোলাবর্ষণ হচ্ছিল। যার সবগুলোই রাফাহ শহরের পশ্চিমে আঘাত করছিল।’


হামাস বলেছে, তাদের যোদ্ধারা মিশরের সাথে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার সীমান্তের কাছে শহরের রাস্তায় ইসরাইলি সেনাদের সাথে লড়াই করছে।


Advertisement: 2:04

Close PlayerUnibots.com
ইতালিতে একটি জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে, বাইডেন গাজা যুদ্ধবিরতি এবং বন্দী মুক্তির বিষয়ে একটি চুক্তিতে হামাসকে ‘এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বাধা’ বলে অভিহিত করেছেন।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছি যা জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ, জি-৭ এবং ইসরাইলিদের দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বাধা হলো হামাস এতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেছে যদিও তারা অনুরূপ কিছু জমা দিয়েছে।’


তিনি আরো বলেন, ‘এটি ফলপ্রসূ হয় কি-না তা দেখার বিষয়।’


হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরাইলের প্রতিশোধমূলক সামরিক অভিযানে গাজায় কমপক্ষে ৩৭ হাজার ২৩২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। যাদের বেশিভাগই নারী ও শিশু।

ইসরাইল যখন রাফাতে স্থল অভিযান শুরু করে তখন একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা স্থগিত হয়ে যায়। কিন্তু মে মাসের শেষের দিকে বাইডেন একটি চুক্তি সুরক্ষিত করার জন্য একটি নতুন প্রচেষ্টা শুরু করেছিলেন।

সোমবার জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করে একটি মার্কিন খসড়া প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে এবং বৃহস্পতিবার জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎস বলেন, জি-৭ নেতারা ‘প্রয়োজনীয় সম্মতি দেয়ার জন্য বিশেষ করে হামাসকে আহ্বান জানিয়েছেন।’


মঙ্গলবার গভীর রাতে মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিশরকে জবাব দিয়েছে হামাস।


মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, হামাসের প্রস্তাবিত কিছু সংশোধনী ‘কাজযোগ্য এবং কিছু নয়।’ তিনি এই সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্য সফরে ছিলেন।

হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ওসামা হামদান বলেন, হামাস ‘একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরাইলি সৈন্যদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার’ চেয়েছে। এই দাবিগুলো ইসরাইল বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে।

যুদ্ধ গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি করেছে, হাসপাতালগুলো পরিষেবার বাহিরে এবং জাতিসঙ্ঘের দুর্ভিক্ষের সতর্কতা জারি রয়েছে।

জাতিসঙ্ঘের একটি তদন্ত বুধবার উপসংহারে পৌঁছেছে যে যুদ্ধের সময়ে ইসরাইল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গাজায় তীব্র অপুষ্টির জন্য পাঁচ বছরের কম বয়সী ৮ হাজার শিশুর চিকিৎসা করা হয়েছে।

যেহেতু বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা রোববার থেকে ঈদুল আযহা উদযাপনের প্রস্ততি নিচ্ছেন, বাস্তুচ্যুত গাজা উম্মে থায়ের নাসির বলেন, এই অনুষ্ঠানের জন্য ‘আমাদের প্রস্ততির কিছু নেই’।

উত্তর গাজার বেইত লাহিয়াতে তিনি বলেন, ‘শিশুরা তাদের বাবাকে জামা-কাপড় কিনতে বলে’ কিন্তু মৌলিক পণ্য থেকে খেলনা পর্যন্ত যেকোনো কিছুর দাম সাধ্যের বাইরে।

তিনি বলেন, ‘তাদের বাবা এগুলো কোথা থেকে কিনবেন? তিনি আট মাস ধরে বেকার এবং এক তাঁবু থেকে অন্য তাঁবুতে চলে যাচ্ছেন, তাদের খারার যোগানোই অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’


অন্য এক বাস্তুচ্যুত গাজান ফাদি নাসির এএফপি’কে বলেন, ‘সাধারণ সময়ে’ বাড়ি এবং রাস্তাগুলো উৎসবের জন্য সজ্জিত করা হয়। তবে ‘আজ আমাদের আর একটি বাড়িও নেই এবং সাজানোর কিছু নেই’।

তিনি আরো বলেন, ‘ঈদের কোনো অনুভূতি নেই।’

গাজা যুদ্ধের পতন নিয়মিতভাবে ইসরাইল-লেবানন সীমান্তে অনুভূত হয়, যেখানে ভয়াবহ আন্তঃসীমান্ত গোলা বিনিময় বৃদ্ধি পেয়েছে।

হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা ইসরাইলের হামলায় একজন কমান্ডার নিহত হওয়ার প্রতিশোধ নিতে রকেট এবং ড্রোন দিয়ে ইসরাইলে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করেছে।

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলেছে, বেশিভাগ উৎক্ষেপণ বাধা দেয়া হয়েছে এবং অন্যরা আগুন জ্বালিয়েছে।

পরে, লেবাননের ন্যাশনাল নিউজ অ্যাজেন্সি জানিয়েছে, ইসরাইলি ‘যুদ্ধবিমানগুলো দেশটির দক্ষিণে একটি বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালায়’, এতে একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং সাতজন আহত হয়।

ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ হুসেইন বলেন, সম্ভাব্য ‘যুদ্ধের সম্প্রসারণ শুধুমাত্র লেবাননের জন্য নয়, সমগ্র অঞ্চলের জন্যই একটি বিপদ’।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: