প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট ফৌজদারি অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ৩০ মে, বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কের একটি আদালত ব্যবসায়িক নথিপত্রে তথ্য গোপনের অভিযোগে করা মামলায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। তার বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করা হবে আগামী ১১ জুলাই। খবর বিবিসি, আল জাজিরা।
জানা গেছে, আলোচ্য মামলার ৩৪টি অভিযোগের সব কটিতেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন রিপাবলিকান দলের এই নেতা। আগামী ১১ জুলাই সাজা হিসেবে ট্রাম্পকে কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে। তবে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকে জরিমানা করার সম্ভাবনাই বেশি।
এদিকে রায় ঘোষণার পর আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, এটি অপমানজনক। এটি পুরোপুরি একটি সাজানো মামলা, যা পরিচালনা করেছেন একজন দুর্নীতিবাজ বিচারক। আদালতের এই রায় তার জন্য মানহানিকর। রায়ে তিনি ন্যায়বিচার পাননি। আদালতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যাবেন বলে উল্লেখ করেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।
৭৭ বছর বয়সী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দায়ের করা এই মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালে স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সময় তিনি এ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। বিষয়টি নিয়ে মুখ না খুলতে স্টর্মিকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেওয়া হয়। ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন তার হাতে এ অর্থ তুলে দিয়েছিলেন। বিষয়টি পুরোপুরিভাবে সবার আড়ালে রাখতে ব্যবসায়িক নথিপত্রেও এ বিশাল লেনদেনের তথ্য গোপন করা হয়েছিল। যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলেও ট্রাম্প বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন। রায় ঘোষণার পরও ট্রাম্পের আইনজীবীরা দাবি করছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।
নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে দীর্ঘ পাঁচ সপ্তাহ ধরে এ মামলার শুনানি চলে। এরপর রায় নিয়ে ১১ ঘণ্টা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করেন ১২ জন বিচারকের বেঞ্চ। পরে বৃহস্পতিবার ট্রাম্পের ব্যাপারে তারা এ রায় ঘোষণা করেন। সাজার রায় দেওয়া হবে আরও প্রায় দেড় মাস পর। ট্রাম্পের পক্ষ থেকে অবশ্য উচ্চ আদালতে আপিল করার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এসব মামলা চললেও রায়টি এলো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে। আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির পক্ষ থেকে ট্রাম্পই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তবে রায় যেটাই হোক না কেন, আপাতত এর কারণে তার নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় কোনো বাধা আসবে না।
অবশ্য এই মামলাটি ছাড়াও বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল বদলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দায়ের করা মামলা এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেয়াদ শেষের পরও হোয়াইট হাউস থেকে সরকারি গোপন নথিপত্র সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে করা মামলা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: