নিউইয়র্কে বাংলাদেশি মিলিয়নিয়ার খুন : চুরি গোপন ও প্রেমিকাকে হারানোর ভয়েই হত্যা করেন পিএস

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২৬ মে ২০২৪ ০৯:০৮

 বাংলাদেশি প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ফাহিম সালেহ  : সংগৃহীত ছবি বাংলাদেশি প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ফাহিম সালেহ : সংগৃহীত ছবি

চার বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে খুন হন বাংলাদেশি প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ফাহিম সালেহ (৩৩)। ২৫ মে, শুক্রবার এই মামলার বিবাদীর আইনজীবী আদালতকে জানিয়েছেন, ফাহিমকে খুন করেন তাঁরই ব্যক্তিগত সহকারী। মানসিক চাপ থেকেই তিনি তাঁর বসের শিরশ্ছেদ করেন।

আইনজীবীর বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাহিমের ব্যক্তিগত সহকারী টাইরেস হ্যাসপিল (২৫) কয়েক হাজার ডলার চুরি করেছিলেন। ধরা পড়ার ভয়ে তিনি মানসিকভাবে অস্থির ছিলেন। আবার ধরা পড়ে গেলে ফরাসি বান্ধবী মেরিন শ্যাভেজ ছেড়ে যেতে পারেন সেই ভয়ও করছিলেন তিনি।

বিবাদীর আইনজীবী স্যাম রবার্টস ম্যানহাটন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বলেন, এই পরিস্থিতিতে পড়েই হ্যাসপিল ঘটনার দিন ফাহিম সালেহর অ্যাপার্টমেন্টে যান। সেখানে তাঁকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। লোয়ার ইস্ট সাইড অবস্থিত ফাহিমের ওই বাড়ির দাম ২৪ লাখ ডলার।

আইনজীবী রবার্টস, ১২ সদস্যের জুরিকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, হ্যাসপিল ‘চরম মানসিক অস্থিরতায়’ ভুগছিলেন, যা তাঁকে হত্যাকাণ্ডের দিকে পরিচালিত করে।

হ্যাসপিলের ভয় ছিল, প্রেমিকা মেরিন শ্যাভেজ যদি তাঁর ৪ লাখ ডলার চুরি করার কথা জেনে ফেলেন তাহলে ছেড়ে চলে যাবেন। এই পরিস্থিতি তাঁর সামনে ছিল দুটি বিকল্প: আত্মহত্যা, নয়তো হত্যা। আইনজীবী বলেন, হ্যাসপিল পরের বিকল্পটিই বেছে নেন।

ফাহিম সালেহ ছিলেন ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট এবং নাইজেরিয়াভিত্তিক মোটরবাইক স্টার্টআপ গোকাডার সিইও। তাঁর করপোরেট অ্যাকাউন্ট থেকে ৯০ হাজার ডলার অদৃশ্য হওয়ার পর ২০২০ সালের জানুয়ারি হ্যাসপিলকে সন্দেহ করতে শুরু করেন ফাহিম।

শেষ পর্যন্ত হ্যাসপিলের কাছেই টাকাটির সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু সালেহ একজন অভিভাবক হিসেবে সরাসরি হ্যাসপিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেননি, বরং তিনি তাঁকে টাকাটি ফেরত দেওয়ার সময় দিয়েছিলেন। কিন্তু হ্যাসপিল সুযোগ নিতে থাকেন। তিনি সালেহর কোম্পানির টাকা একটি পেপ্যাল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে স্থানান্তর করেন। কিন্তু এবারও ধরা পড়ে যান তিনি।

ম্যানহাটনের সহকারী জেলা অ্যাটর্নি লিন্ডা ফর্ড আদালতকে জানান, এরপর হ্যাসপিল লাশ এবং অর্থের লেনদেন গোপন করার পরিকল্পনা আঁটেন।

হ্যাসপিল লাশ ও রক্ত পরিষ্কার করার জন্য একটি দোকান থেকে কিছু জিনিসপত্র কিনেছিলেন। বাড়ি থেকে সেই দোকানে যাতায়াতে ভাড়া মিটিয়েছিলেন সালেহর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে।

হত্যাকাণ্ডের বর্ণনায় কৌঁসুলিরা বলেছেন, হ্যাসপিল মুখোশ পরে সালেহর বাড়িতে যান। এরপর টেসার দিয়ে তাঁকে অচেতন করে ছুরিকাঘাত করেন। পরদিন মৃতদেহটি টুকরো টুকরো করেন এবং মাথা বিচ্ছিন্ন করেন।

হত্যার পর হ্যাসপিল ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে ঘর পরিষ্কার করেন। তবে একটি ‘অ্যান্টি-ফেলন ডিস্ক’ সেখানে রয়ে যায়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সেটি উদ্ধার করে। ডিস্কটিতে থাকার নম্বরটি টেসারের সঙ্গে মিলে যায়। হত্যাকাণ্ডের এক মাস আগে তাঁর ব্রুকলিনের ঠিকানা থেকে তিনি সেটি অর্ডার করেছিলেন।

সালেহের চাচাতো ভাই প্রথম তাঁর মৃতদেহ আবিষ্কার করেন। বেশ কয়েকটি কোনোভাবে যোগযোগ করতে না পেরে তিনি নিজেই পরীক্ষা করার জন্য অ্যাপার্টমেন্টে এসেছিলেন।

মেরিন শ্যাভেজকে হারানোর ভয়ে খুন করেছেন হ্যাসপিল এমন দাবি করা হলেও হত্যাকাণ্ডের দুই দিন পরই তাঁকে এক রহস্যময় নারীর সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। দুজনে মিলে একগুচ্ছ বেলুন কিনতে দেখা যায় তাঁদের।

কৌঁসুলিরা বলেছেন, হ্যাসপিল তাঁর নতুন বান্ধবীর জন্মদিনে প্রচুর দামি উপহার ও কেক দিয়েছিলেন।

হ্যাসপিল এই হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত হলে কমপক্ষে ২০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে তাঁর আইনজীবীরা আশা করছেন, ‘মানসিকভাবে বিপর্যস্ত’ হয়ে পড়ায় তিনি হত্যা করেছেন, বিধায় আদালত ৫ থেকে ২৫ বছরের লঘুদণ্ড দেবেন।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: