ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে পুরো বিশ্বের মতো প্রতিবাদে শামিল হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। বিষয়টিকে হামাসকে সমর্থন হিসেবে উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের এমন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেছেন আলোচিত-সমালোচিত লেখক, ঔপন্যাসিক এবং নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সালমান রুশদি। খবর গার্ডিয়ান।
সম্প্রতি জার্মান টেলিভিশন প্রোগ্রাম আরবিবি-টোয়েন্টিফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রুশদি বলেন, গাজায় হতাহতের সংখ্যা দেখে যে কোনো মানুষেরই বিচলিত হয়ে পড়ার কথা। তবে আমি চাই বিক্ষোভকারীরা হামাসের কথাও উল্লেখ করুক। কারণ তাদের জন্যই এসব শুরু হয়েছে। হামাসকে একটি ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে আখ্যা দিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, তরুণ বা প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের পক্ষে হামাসকে সমর্থন করা অদ্ভুত মনে হয়।
‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ খ্যাত লেখক রুশদি আরও বলেন, তারা স্বাধীন ফিলিস্তিনের কথা বলে। আমি এমন একজন ব্যক্তি, যে জীবনের বেশিরভাগ সময় সম্ভবত আশির দশক থেকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছি। কিন্তু আমি মনে করি, এই মুহূর্তে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বিদ্যমান থাকলে সেটি হামাস দ্বারা পরিচালিত হতো। এটিকে তারা তালেবানের মতো রাষ্ট্রে পরিণত করত। এটা হয়ে যেত ইরানের একটি ক্লায়েন্ট স্টেট।
সাক্ষাৎকারে রুশদি প্রশ্ন তোলেন, বর্তমানে পশ্চিমা বিভিন্ন রাষ্ট্রে চলমান বামপন্থীদের প্রগতিশীল আন্দোলন কি আরেকটি তালেবান রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চায়? ইসরায়েলের পাশে ঠিক ইরানের মতো আরেকটি রাষ্ট্র তারা বানাতে চায়?
তিনি বলেন, গাজায় মৃত্যুর ঘটনায় যে আবেগি প্রতিক্রিয়া দেওয়া হচ্ছে তা পুরোপুরি ঠিক। কিন্তু যখন এটি ইহুদিবিদ্বেষ, এমনকি কখনো কখনো হামাসের সমর্থনের দিকে ঝুঁকে পড়ে, তখনই এটি সমস্যা সৃষ্টি করে। বিক্ষোভকারীদের উচিত অন্তত হামাসকে চলমান এই যুদ্ধের জন্য দায়ী করা।
ডানপন্থী আমেরিকান ভাষ্যকার এবং ইসরায়েলপন্থী আইনজীবী রিচার্ড হানানিয়া সালমান রুশদির এই মন্তব্যকে সমর্থন করে বলেন, একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে হামাস তাদের সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটাবে এবং সেটি বিশ্বের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে। তাই যারা মনে করে আঞ্চলিক শান্তি ফিরিয়ে আনতে সঠিক শান্তি চুক্তি দরকার, তারা আসলে পাগল।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত বুকার পুরস্কারজয়ী লেখক সালমান রুশদি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিক। ১৯৮৮ সালে ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ নামে একটি উপন্যাস প্রকাশের পর তার বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্মের অবমাননার অভিযোগ ওঠে। কিছুদিন পর ইরানের তৎকালীন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি রুশদির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। সেখানে তার মাথার দাম তিন মিলিয়ন ডলার ধার্য করা হয়। তখন থেকে তিনি আত্মগোপনেই ছিলেন দীর্ঘদিন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: