৭০ বছর লোহার সিলিন্ডারে পার করে অবশেষে মারা গেলেন পল

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১৪ মার্চ ২০২৪ ১৯:৪৮

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

৬ বছর বয়সে পোলিও-তে আক্রান্ত হন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাসের বাসিন্দা পল আলেকজান্ডার। তার ফুসফুস পর্যন্ত বিকল হয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসকদের বিশেষভাবে তৈরি একটি লোহার সিলিন্ডারে নিজের পুরো শরীর ঢুকিয়ে কৃত্রিমভাবে শ্বাস–প্রশ্বাস সচল রেখেছিলেন তিনি। শুধু মাথা ছিল বাইরে। এভাবে ৭০ বছর পার করে অবশেষে মারা গেলেন তিনি।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে।

১৯৫২ সালে ছয় বছরে বয়সে পোলিও আক্রান্ত হন পল। এরপর সম্পূর্ণ পঙ্গুত্বের লক্ষণ দেখা দেয় তাঁর মাঝে। দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর এক যান্ত্রিক ফুসফুসের ভেতর জেগে ওঠেন তিনি। পল আলেকজান্ডারকে নাম দেওয়া হয়েছিল ‘লোহার ফুসফুসওয়ালা মানব’।

লোহার এক বিশেষ ধরনের সিলিন্ডার আকৃতির কাঠামোর মধ্যেই তিনি এতোদিন বেঁচে ছিলেন। সিলিন্ডারটি ফুসফুসের মতো কাজ করত। গত সোমবার ৭৮ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। পলের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছে তাঁর চিকিৎসার জন্য অনলাইনে তহবিল সংগ্রহকারী সংস্থা গো ফান্ড মি।

তাঁর মৃত্যুতে তহবিল সংগ্রহের সংগঠক ক্রিস্টোফার উলমার বলেন, ‘পল, আপনাকে সবাই মিস করবে, আপনাকে স্মরণ করা হবে। আমাদের সঙ্গে আপনার গল্প ভাগ করে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।’

পোলিও সংক্রমণের পর পলের ফুসফুস থেকে জমাট বাঁধা রক্ত অপসারণ করতে ট্র্যাকিওটমি করেছিলেন একজন চিকিৎসক। এরপর লোহার চেম্বারে রাখা হয় তাঁকে। লোহার চেম্বারটি ডায়াফ্রাম হিসেবে কাজ করছিল।

লোহার কাঠামোটির ভেতরে ছিল পলের পুরো শরীর। বাইরে ছিল শুধু মাথা। ফলে সার্বক্ষণিক সেবিকাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারতেন না। এতোদিন বেঁচে ছিলেন শরীর পরিষ্কার করা ছাড়াই।

১৯৫০–এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে পোলিওর প্রাদুর্ভাবের সময় লোহার ফুসফুসের ভেতরে রাখা অনেক শিশুর মধ্যে একজন ছিলেন পল আলেকজান্ডার। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং আইনের ডিগ্রি অর্জন করেন। কিন্তু লোহার ফুসফুস ছেড়ে আর বের হতে পারেননি। ২০২০ সালের এপ্রিলে তিনি স্মৃতিকথাও প্রকাশ করেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে টিকাদান কর্মসূচির কারণে এখন বিরল রোগে পরিণত হয়েছে এক সময়ের আতঙ্ক পোলিও। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে লন্ডন থেকে নেওয়া নর্দমার নমুনায় পোলিও ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সেটিকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। তবে সংক্রমণের কোনো ঘটনা তখন পাওয়া যায়নি।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: