অন্য দেশের যুদ্ধে ব্যয় না করে গুরুত্বপূর্ণ খাতে অর্থ ব্যয় করা উচিত যুক্তরাষ্ট্রের

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:০৪

প্রতীকী ছবি প্রতীকী ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে সিনেটে সম্প্রতি পাস হওয়া বৈদেশিক সহায়তা বিল। যুক্তরাষ্ট্রের বুদ্ধিজীবীদের মতে, গুরুত্বপূর্ণ খাতকে অবহেলিত রেখে অস্ত্র ও বিভিন্ন দেশের যুদ্ধের কাজের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। 

গত মঙ্গলবার ইউক্রেন, ইসরায়েল ও তাইওয়ানকে সহায়তার জন্য ৯৫ বিলিয়ন (সাড়ে ৯ হাজার কোটি ডলার) ডলারের একটি বিল অনুমোদন দেয় সিনেট। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা বাবদ ৯০০ কোটি ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এর কিছু অংশ গাজা উপত্যকায় অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের জন্য দেওয়া হতে পারে।

তবে সিনেটে বিলটি পাস হওয়ার পর বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের গৃহায়ণ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর চেয়ে অস্ত্র খাতকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টিকে উদ্বেগের বলে মনে করেন ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজের ন্যাশনাল প্রায়োরিটিজ প্রজেক্টের কর্মসূচি পরিচালক লিন্ডসে কোশগারিয়ান। তিনি জানান, ‘৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বাজেট, এর মানে হলো যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় বাজেটের পরিমাণ উল্লেখজনক পরিমাণে বেড়েছে। আর এর উল্লেখযোগ্য অংশ যুদ্ধের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। কোথায় কোথায় বরাদ্দগুলো যাচ্ছে, তা নিয়ে ব্যাপক অমিল আছে।’

চলতি সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে কয়েকজন পর্যবেক্ষকও সহায়তা বিলটির সমালোচনা করেছেন। তাঁরা প্রয়াত র‌্যাপার টুপ্যাক শাকুরের র‌্যাপ গানের অংশবিশেষ তুলে ধরে লিখেছেন, ‘গট মানি ফর ওয়ার, বাট কান্ট ফিড দ্য পুওর’ (যুদ্ধের জন্য টাকা আছে, কিন্তু আমরা দরিদ্রদের খাওয়াতে পারি না)।’

সিনেটের বিলটিতে অন্যান্য খাতে বরাদ্দের পাশাপাশি ইউক্রেনের জন্য ৬ হাজার কোটি ডলার সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা এবং ইসরায়েলের জন্য ১ হাজার ৪১০ কোটি ডলার নিরাপত্তা সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

বিলটির সমালোচকেরা মনে করেন, অস্ত্রের জন্য অর্থ বরাদ্দের অর্থ হলো ‘ভালো পথে আসা অর্থের বাজে কাজে ব্যবহার’।

সিনেটে পাস হওয়া বিলটি রিপাবলিকান পার্টি নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে পাঠানো হবে। তবে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন ইঙ্গিত দিয়েছেন, পরিষদে তিনি বিলটি নিয়ে ভোটাভুটি করার সুযোগ দেবেন না। তিনি অভিবাসন বিধিতে সংস্কারের বিষয়টিকে ওই সহায়তা প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।

১৯৬০-এর দশকে সাবেক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনের প্রশাসনের সময়ে ভিয়েতনাম যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে গিয়েছিল। ওই প্রশাসন ‘দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ কর্মসূচি থেকে সরে গিয়েছিল। লিন্ডন বি জনসনের প্রশাসন থেকেই মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার সামাজিক কর্মসূচি খাতে বিনিয়োগ কমিয়ে সামরিক কর্মসূচিতে বড় আকারে বিনিয়োগ করতে থাকে।

গত মে মাসে ন্যাশনাল প্রায়োরিটিজ প্রজেক্ট নামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের ঐচ্ছিক বাজেটের (জরুরি নয় এমন খাতের জন্য বরাদ্দ) ৬২ শতাংশ এসব কর্মসূচিতে খরচ হয়েছে।

গত মঙ্গলবার কংগ্রেসের ডেমোক্রেটিক সদস্য কোরি বুশ এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই দেশে এবং দেশের বাইরে মানবিক সহায়তা খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। করদাতাদের অর্থ যেন ঢালাওভাবে কোনো অন্তহীন যুদ্ধের পেছনে খরচ না হয়ে যায়, কংগ্রেসকে অবশ্যই তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের স্থানীয় লোকজনের জন্য গৃহায়ণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামাজিক কর্মসূচি খাতে বিনিয়োগ প্রয়োজন।’



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: