সম্প্রতি গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনের তাড়ানোর আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী মন্ত্রী বেজালেল স্মোতরিচ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইতামার বেন গেভির। তাদের এমন মন্তব্যকে দায়িত্বহীন এবং উসকানিমূলক বলে নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে এ ধরনের প্রচেষ্টা সমর্থন করবে না বলেও জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রিসভার সদস্যরা যেন ভবিষ্যতে ‘বেফাঁস’ কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকেন, সেদিকে নজর রাখতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে কঠোর বার্তাও দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
২ জানুয়ারি, মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এ সম্পর্কে বলেন, ‘ইসরায়েলের দুই মন্ত্রী বেজালেল স্মোতরিচ এবং ইতামার বেন গেভির যে মন্তব্য করেছেন, তা স্পষ্টভাবে দায়িত্বহীন এবং উসকানিমূলক। এ ধরনের মন্তব্য মোটেই সমর্থনযোগ্য নয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ইসরায়েল ইস্যুতে যে নীতি অনুসরণ করে— তার সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়।’
‘ভবিষ্যতে মন্ত্রিসভার সদস্যরা যেন এ ধরনের বেফাঁস কোনো মন্তব্য না করেন, সেজন্য ব্যবস্থা নিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানানো হচ্ছে।’
গত সোমবার ইসরায়েলে এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বেজালের স্মোতরিচ বলেন, গাজা উপত্যকায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের অবশ্যই উপত্যকা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে হবে।
একই দিন ভিন্ন একটি অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেন গেভির মন্তব্য করেন, ‘এই যুদ্ধ গাজাবাসীর সমানে অন্যদেশে অভিবাসনের সুযোগ এনে দিয়েছে। এই সুযোগ হারানো তাদের জন্য উচিত হবে না।’
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে হামাস যোদ্ধারা অতর্কিত হামলা চালানোর পর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থলবাহিনীও।
ইসরায়েলি বাহিনীর টানা দেড় মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন ২২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এই নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী, শিশু, অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরী এবং বয়স্ক লোকজন।
আহত হয়েছেন আরও ৫৪ হাজার ৯৬৮ জন এবং এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ৭ হাজার জন।। এছাড়া হাজার হাজার পরিবার বাড়িঘর-সহায় সম্বল হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণে।
অন্যদিকে, হামাসের গত ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস এবং গাজাকে পরিপূর্নভাবে নিরস্ত্রীকরণ করার আগ পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলবে। যুদ্ধের থেকেই ইসরায়েলকে সামরিক, কূটনৈতিক, রাজনৈতিক এবং গোয়েন্দা সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।
মঙ্গলবারের বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘গাজা উপত্যকায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা উপত্যকা ছেড়ে কোথাও যাবে না। যুক্তরাষ্ট্র কেবল সেখানে হামাসের শাসনের অবসান এবং ভবিষ্যতে যেন কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারে, সেই ব্যবস্থা দেখতে চায়।’
‘আমরা আগেও বলেছি, আবারও পরিষ্কার ও দৃঢ়ভাবে বলছি, গাজা উপত্যকা সবসময় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও তা ই থাকবে।’
সূত্র : রয়টার্স, আনাদোলু এজেন্সি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: