জাতিসংঘের সদর দপ্তরে আরবি ভাষা দিবস উদযাপিত

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:২১

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি


বিশ্ব আরবি ভাষা দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত এ সভায় জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হওয়ার ৫০ বছর উদযাপন করা হয়। সৌদি আরবে সাংস্কৃতিক মন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতায় ও কিং সালমান গ্লোবাল একাডেমি ফর অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজের সহযোগিতায় তা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আরব দেশগুলোর কূটনীতিক ও জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অংশ নেন। তারা মানবসভ্যতার ইতিহাস, দর্শন ও শিল্পকলায় আরবি ভাষার অবদান তুলে ধরেন।

জাতিসংঘের প্রেসিডেন্ট ডেনিস ফ্রান্সিস বলেন, ‘আরবি ভাষার পরিব্যাপ্তি এখন সুবিশাল অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত। আরব উপসাগর থেকে মরক্কো ও মৌরিতানিয়া পর্যন্ত যোগাযোগের বৈচিত্র্যময় সেতু হিসেবে তা কাজ করছে। তা ছাড়া অন্যান্য ভাষায় আরবি ভাষার প্রভাব এতটা গভীর যে তা মুছে ফেলা যায় না। জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখায় এর সমৃদ্ধ অবদানের বিষয়টি আরবদের গভীর প্রভাবের সাক্ষ্য বহন করে।’

জাতিসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল আমিনা মোহাম্মদ বলেন, ‘বিশ্বের অনেকের কাছে আরবি শুধু একটি ভাষা নয়; বরং এর চেয়েও অনেক বেশি। আরবি থেকে ইংরেজিতে অনেক শব্দ সংযুক্ত হয়েছে যা আরব বিশ্বের কাছে পশ্চিমারা কতটা ঋণী তার প্রমাণ বহন করে। সারা বিশ্বের সবার কাছে যে আরবি শব্দটি খুবই পরিচিত তা হলো ‘সালাম’। এর অর্থ- শান্তি। সবার অন্তরে এর শক্তিশালী একটি বার্তা রয়েছে। আশা করব, আজকের এই উদযাপন সবাইকে এ ভাষার প্রতি অনুপ্রাণিত করবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এ ভাষা ধারণে উৎসাহ জোগাবে।’

কিং সালমান গ্লোবাল একাডেমি ফর অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজের মহাসচিব ড. আবদুল্লাহ আল-ওয়াশমি বলেন, ‘ভাষার বৈচিত্র্য আমাদের পরস্পরের কাছে নিয়ে আসে। ভাষার ভিন্নতা মহান আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম। আরবি ভাষার ইতিহাস কয়েক হাজার বছরের হলেও আমরা এখনো তা বুঝতে পারি। এমনকি হিজাজ ও নাজদ অঞ্চলে দেড় হাজার বছর আগে রচিত কবিতার পঙক্তিগুলো আমরা আবৃত্তি করছি এবং এর অর্থ উপলব্ধি করতে পারছি। আমরা তা সন্তানদের শেখাচ্ছি।’

জাতিসংঘে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আবদুল আজিজ বিন মুহাম্মাদ আল-ওয়াসেল বলেন, ‘আরবি ভাষা নিজের সাংস্কৃতিক পরিচয় সংরক্ষণ করেছে। এর রয়েছে মহান ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ ইতিহাস। চতুর্দশ শতক পর্যন্ত জ্ঞান-বিজ্ঞা, শিল্প-সাহিত্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণে এর প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। তা মানবসভ্যতার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের অন্যতম স্তম্ভ।’

এদিকে আরবি ভাষাকে জাতিসংঘের ছয়টি দাপ্তরিক ভাষার একটি হিসেবে ঘোষণার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। গতকাল সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) ফ্রান্সের প্যারিসে ইউনেসকোর সদর দপ্তরে বিশ্ব আরবি ভাষা দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা বা ইউনেসকো তা উদযাপন করে। আরবি ভাষা দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘আরবি : কবিতা ও শিল্পের ভাষা’। সৌদিভিত্তিক সংস্থা সুলতান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় চার দিনব্যাপী একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

প্রতিবছর ১৮ ডিসেম্বর বিশ্ব আরবি দিবস পালিত হয়। ২০১২ সাল থেকে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা বা ইউনেসকোর উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়। এই বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো, ‘আরবি : কবিতা ও শিল্পের ভাষা’। আরবি ভাষা বর্তমান বিশ্বের সর্বাধিক প্রচলিত ভাষাগুলোর অন্যতম।

আরববিশ্বের ২৫টি দেশ ছাড়াও পৃথিবীর অনেক দেশে তা দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইসলাম ধর্মের পবিত্র কোরআন, হাদিস ও মুসলিম মনীষী ও বিজ্ঞানীদের রচনার ভাষা হিসেবে তা ব্যবহৃত হয়। কয়েক হাজার বছর পার হলেও আরবি ভাষা আপন মহিমায় সমুজ্জ্বল হয়ে আছে আজ পর্যন্ত।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: