ইহুদিবিদ্বেষ: পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৪:১৪

পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটি : সংগৃহীত ছবি পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটি : সংগৃহীত ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাঙ্গনে ইহুদিবিদ্বেষের উত্থান নিয়ে কংগ্রেসে শুনানির পর সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করেছেন ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার প্রেসিডেন্ট এলিজাবেথ ম্যাগিল। গতকাল ৯ ডিসেম্বর শনিবার অভিজাত আইভি লিগভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

এলিজাবেথ ম্যাগিল ‘স্বেচ্ছায়’ পদত্যাগ করেছেন বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান স্কট বক। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘গত মঙ্গলবার ম্যাগিল যেন ম্যাগিল ছিলেন না। নৈতিক প্রশ্নের জবাবে অনেকটা আইনজীবীর ভঙ্গিতে উত্তর দিয়েছিলেন তিনি। আর এটাই ভুল হয়েছিল।’

স্কট বক নিজেও পদত্যাগ করেছেন বলে এএফপিকে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মুখপাত্র।

ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষ বাড়ার বিষয়ে গত ৫ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের কমিটিতে শুনানি হয়। সেখানে করা মন্তব্যের জেরে ম্যাগিলসহ যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন।

শুনানিতে প্রত্যেকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, যে শিক্ষার্থীরা তাঁদের ক্যাম্পাসে ‘ইহুদিদের গণহত্যার’ ডাক দিয়েছিলেন, তাঁরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন কি না। এই তিনজন শুনানিতে বেশ দীর্ঘ, আইনানুগ এবং আপাতদৃষ্টিতে এড়িয়ে যাওয়ার মতো উত্তর দিয়েছিলেন বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।

মঙ্গলবারের শুনানিতে রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান এলিস স্টেফানিক তিন প্রেসিডেন্টকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, ইহুদিদের গণহত্যার ডাক দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম বা আচরণবিধি লঙ্ঘন কি না। স্টেফানিকের কার্যালয় অনুসারে, এই প্রশ্নের কোনো সুনির্দিষ্ট জবাব দেননি ম্যাগিল।

তারপর আবার উত্তরের জন্য স্টেফানিক চাপ দিলেও ম্যাগিলের কাছ থেকে জবাব হিসেবে কোনো হ্যাঁ কিংবা না শুনতে পাননি তিনি। এরপর স্টেফানিক বলেন, ‘সুতরাং উত্তরটি হ্যাঁ।’ এর জবাবে ম্যাগিল বলেন, এর উত্তর প্রেক্ষাপটের ওপর নির্ভর করে।

অন্য প্রেসিডেন্টদের কাছ থেকেও অনুরূপ উত্তর শুনে ক্ষেপে যান স্টেফানিক। তিনি রাগে ফেটে পড়ে বলেন, ‘এর উত্তর প্রেক্ষাপটের ওপর নির্ভর করে না। উত্তরটি হ্যাঁ এবং এ কারণেই আপনাদের পদত্যাগ করা উচিত।’

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিন গে তার ক্যাম্পাসে ইহুদিবিরোধী সহিংসতার হুমকির আরও জোরালো নিন্দা করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য পরে ক্ষমা চেয়েছিলেন।

ম্যাগিলের পদত্যাগের পর হার্ভার্ড ও ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) প্রেসিডেন্টদের ইঙ্গিত করে কংগ্রেসওম্যান এলিস স্টেফানিক সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, ‘সঠিক কাজটি করুন। বিশ্ব আপনাদের দেখছে।’

মঙ্গলবারের শুনানিতে তিন প্রেসিডেন্টের উত্তরের পর প্রতিক্রিয়া হয় তীব্র। যুক্তরাষ্ট্রের ৭৪ জন আইনপ্রণেতা ম্যাগিল এবং হার্ভার্ড ও এমআইটির প্রেসিডেন্টের অবিলম্বে অপসারণের দাবিতে চিঠি লিখেছেন। ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ায় ১০ কোটি ডলার অনুদান প্রত্যাহার করেছেন এক দাতা।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় গণহত্যা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এর ধাক্কায় যুক্তরাষ্ট্র ও এর ক্যাম্পাসগুলোয় ইহুদি ও মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আচরণের মাত্রাও বেড়েছে। জ্বালাময়ী ও বিদ্বেষপূর্ণ কথা এতটাই বেড়েছে যে, বাক্‌স্বাধীনতা ও বিদ্বেষপূর্ণ কথার সীমানা কোথায়, তা নিয়েও চলছে বিতর্ক।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: