যুদ্ধবিরতি শুরুর আগে অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি বাহিনী কী ধরনের বর্বরতা চালিয়েছে, তা দেখেছে পুরো বিশ্ব। গেল দেড় মাসে গাজায় যত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, তার বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এমনকি হাসপাতালের ইনকিউবেটরে থাকা শিশুরাও রেহাই পায়নি ইসরাইলি বাহিনীর হাত থেকে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দাবি পুরোপুরি উল্টো।
সম্প্রতি ইসরাইলের বর্বরতা আড়াল করতে বাইডেন তার একাধিক বক্তব্যে বলেছেন, ‘হামাস ইসরাইলি শিশুদের শিরশ্ছেদ করেছে।’
অথচ তার নিজ কার্যালয় হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘এ বিষয়ে তাদের কাছে সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ নেই। একটি ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলেও, নিরপেক্ষভাবে এর সত্যতা যাচাই করা হয়নি।’
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, যাচাইহীন তথ্যের ভিত্তিতে ‘শিশু হত্যার’ মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে আমেরিকান প্রেসিডেন্টকে বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সে কথা শোনেননি। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা।
ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়, ‘বাইডেন তার বক্তব্যে বলছেন, হামাস শিশুদের শিরশ্ছেদ করেছে। অথচ তথ্যটি যাচাইহীন হওয়ায় তাকে এই মন্তব্য করার আগে সীমাজ্ঞানের বিষয়টি মনে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টারা। তবুও প্রেসিডেন্ট একই কথা বলে যাচ্ছেন।’
এমন পরিস্থিতিতে বিবৃতি দিয়ে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমে শিশুদের শিরশ্ছেদের যে তথ্য উঠে এসেছে, তা তাদের পক্ষে বা অন্য কোনো নিরপেক্ষ উৎস থেকে যাচাই করা হয়নি। সুতরাং এটা সত্য বলে ধরে নেয়ার কোনো কারণ নেই।’
আল জাজিরা বলছে, ‘শিশু হত্যা’ ইস্যুতে বাইডেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন বলে মনে হচ্ছে। এমনকি, গাজায় আসলেই এত শিশু নিহত হয়েছে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি। তার দাবি, ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গাজায় নিহত শিশুদের সংখ্যা বাড়িয়ে বলছে।
এদিকে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এছাড়াও এখনো নিখোঁজ রয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। সোমবার (২৭ নভেম্বর) গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজার ১৫০ শিশু এবং ৪ হাজার নারী রয়েছেন। এছাড়াও এখনো অগণিত মরদেহ গাজার রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, গাজায় এখনো অন্তত ৭ হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা ৪ হাজার ৭শ জনের বেশি। এছাড়াও আহত হয়েছেন ৩৬ হাজারেরও বেশি মানুষ, যার মধ্যে ৭৫ শতাংশই নারী ও শিশু।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: