কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে গত দুই দশকে কমপক্ষে চার লাখ ৬০ হাজার আমেরিকান নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আগে অনুমিত সংখ্যার চেয়ে দ্বিগুণ অকাল মৃত্যুরও কারণ এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র। নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।
এ ধরনের দূষণের কারণ পিএম২.৫ নামের সূক্ষ্ম কণা। যা সাধারণত গাড়ি, কারখানা, আগুনের ধোঁয়া ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত হয়। এ কণার প্রাদুর্ভাব হাঁপানি, হৃদরোগ, কম ওজন নিয়ে জন্ম ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
গবেষকরা ১৯৯৯ থেকে ২০২০ সালের স্বাস্থ্যতথ্য ও পিএম২.৫ নির্গমনের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে নতুন এ সিদ্ধান্তে পৌঁছান। প্রথমবারের মতো তারা দেখতে পান যে কয়লার পিএম২.৫ অন্যান্য উৎস থেকে আসা সূক্ষ্ম দূষণকারীর চেয়ে দ্বিগুণ মারাত্মক ক্ষতিকারক।
সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত এ গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করা হয়। কারণ পরিবেশগত মান নিয়ে সরকারি নীতি আসার পর মৃত্যুর হার কমে আসে।
গবেষণা দলের প্রধান লেখক জর্জ মেসন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক লুকাস হেনেম্যান বলেন, কয়লাজনিত বায়ু দূষণ আমাদের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকারক। এই ধরনের প্রমাণ পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা এপিএর মতো নীতিনির্ধারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষকরা ৪৮০টি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২০ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছেন। তারা বায়ু দূষণ ও স্বাস্থ্যগত প্রভাবগুলো ব্যবহার করেছিলেন। পাশাপাশি বায়ুর গতিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রভাব যুক্ত করেন গবেষণায়।
বেশিরভাগ মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত বিদ্যুৎ কেন্দ্র মিসিসিপি নদীর পূর্বে ওহাইও ও পেনসিলভানিয়ার মতো শিল্পোন্নত রাজ্যে অবস্থিত। যেখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ঐতিহাসিকভাবে ঘনবসতি এলাকার কাছে নির্মিত। প্রতিটি একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কমপক্ষে ৫০০ জনের মৃত্যুর সঙ্গে যুক্ত ছিল। আর কমপক্ষে ১০টি কেন্দ্র পাঁচ হাজারেরও বেশি মৃত্যুর সঙ্গে যুক্ত ছিল।
১৯৯৯ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে মোট চার লাখ ৬০ হাজার বিদ্যুৎ কেন্দ্র-সম্পর্কিত মৃত্যুর প্রায় ৮৫ শতাংশ ঘটেছে। প্রতি বছর গড়ে ৪৩ হাজারেরও বেশি। নতুন পরিবেশগত নিয়ম অনুসারে সালফার ফিল্টার ইনস্টল করায় মৃতের সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। ২০২০ সাল নাগাদ পিএম২.৫ জনিত মৃত্যু ৯৫ শতাংশ কমে এক হাজার ৬০০ জনে দাঁড়ায়।
ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইআইএ) অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে কয়লার ব্যবহার ভীষণভাবে হ্রাস পেয়েছে। তবে এখনো ২০০টিরও বেশি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে, যা ২০২২ সালে ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। যুক্তরাষ্ট্রে কমে এলেও বিশ্বব্যাপী কয়লা-উৎপাদিত বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়ে চলছে। বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, ভারত ও পোল্যান্ড এ জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: