যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ফাঁস হওয়া একটি নথিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েল নীতির কড়া সমালোচনা উঠে এসেছে। পররাষ্ট্র দপ্তর ইসরায়েল নীতি নিয়ে কর্মকর্তাদের মতামত জানতে নথিটি তৈরি করেছিল। অতিগোপনীয় নথিটি ফাঁস হয়েছে। খবর পলিটিকোর।
নথিতে কূটনীতিকরা মতপ্রকাশ করেছেন, হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইসরায়েলের অগ্রহণযোগ্য কর্মকাণ্ডের প্রকাশ্য সমালোচনা করা। তারা মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নীতি কূটনীতিকদের কাছে ক্রমেই আস্থা হারাচ্ছে। প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত ব্যক্তিদের মনোভাব যাচাই করে আস্থা হারানোর বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া গেছে। এভাবে চলতে থাকলে প্রশাসনের কর্মীদের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কূটনীতিকরা। এতে বাইডেন প্রশাসনের পক্ষে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক নীতি তৈরি করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
নথিতে কূটনীতিকরা যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে যুদ্ধবিরতিতে সমর্থন দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। তা ছাড়া ইসরায়েলের ব্যাপারে আমেরিকান প্রশাসনিক নীতি ও জনগণের মনোভাবের মধ্যে ভারসাম্য তৈরির কথাও বলা হয়েছে। কূটনীতিকরা মনে করেন, ইসরায়েলের সামরিক কৌশল ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলি বাহিনীর কঠোর নীতির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন কিছু রাখঢাক রাখতে চায়। তাদের দাবি, এগুলো প্রকাশ্যে আসা উচিত।
নথিতে বলা হচ্ছে, ইসরায়েলের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক গোপনীয়তা জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে। এতে প্রশাসনের ব্যাপারে ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে। বিষয়টি বিশ্বব্যাপী আমেরিকান স্বার্থকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে বলে মনে করেন কূটনীতিকরা।
নথির বার্তায় বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের সমালোচনা করতে হবে। ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সীমাহীন দখলদারিত্ব, প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনি ভূমি দখল করে বসতি স্থাপন এবং অবৈধ অভিযান পরিচালনা করে সহিংসতা সৃষ্টির প্রকাশ্যে সমালোচনা করা উচিত আমেরিকান প্রশাসনের। কারণ, ইসরায়েলের এই ক্রমবর্ধমান সহিংসতা আমেরিকান মূল্যবোধের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। ফলে বিশ্বব্যাপী আমেরিকান মূল্যবোধের ক্ষতি হচ্ছে।
পলিটিকোর দাবি, নথিতে যে মতামত এসেছে, আমেরিকান পররাষ্ট্র দপ্তরের অনেক কর্মকর্তা একই মনোভাব পোষণ করেন। বিশেষ করে দশকের পর দশক চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের ব্যাপারে অনেক কর্মকর্তা উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন। নথিতে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের অতীতের বিবৃতির কথা তুলে ধরে বলা হয়, বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনও এ যুক্তিগুলোকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেন।
খবরে বলা হচ্ছে, ম্যাথিউ মিলার গত মাসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, ‘আমেরিকান পররাষ্ট্র দপ্তরে নানা মতের লোকবল রয়েছে এবং এ বৈশিষ্ট্যই এই দপ্তরের একটি শক্তি। আমরা প্রত্যেকের স্বতন্ত্র মতামতকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। তাদের মতপ্রকাশের ব্যাপারে উৎসাহ দিয়ে থাকি।’
তবে নথিতে কূটনীতিকরা মতপ্রকাশ করেছেন, গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। এ ধরনের হামলা থেকে নিজেদের রক্ষা করার অধিকার ইসরায়েলের রয়েছে। তবে এর মানে এই নয় যে পাল্টা হামলায় গাজার হাজার হাজার বেসামরিক ও নারী-শিশু হত্যার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য হবে। অগ্রহণযোগ্য কর্মকাণ্ড কিংবা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জন্য ইসরায়েল কিংবা হামাস উভয়কে দায়ী করার মানসিকতা যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের থাকতে হবে বলে মনে করেন কূটনীতিকরা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: