নিউ ইয়র্ক সিটির একটি ডে-কেয়ার সেন্টারে গত ১৫ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার এক শিশুর মৃত্যু হয় এবং আরো তিন শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশুরা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানানো হলে, জরুরি বিভাগের কর্মীরা দ্রুত তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। ঘটনাটি ঘটনার পরে ওই ডে-কেয়ার সেন্টারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। অবশেষে নিউইয়র্ক পুলিশ বিপুল পরিমান মাদক খুঁজে পেয়েছে ডে-কেয়ার সেন্টারটিতে।
ডে-কেয়ার সেন্টারের মেঝেতে একটি লুকানো দরজা অবিষ্কার করে পুলিশ। তার নিচেই লুকানো ছিল মাদক। ফেন্টানাইলসহ অন্যান্য ওষুধ এবং প্যারাফারনালিয়ার পাওয়া যায় সেখানে। নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের প্রকাশিত ছবিগুলোতে বাদামি এবং সাদা পাউডারে ভরা এক ডজনেরও বেশি প্লাস্টিকের ব্যাগ দেখা যায়।
পুলিশ বলেছে, যে পরিমান মাদক উদ্ধার হয়েছে তা ৫ লাখ মানুষকে হত্যা করতে পারে। এ ছাড়া তদন্তকারীরা ওষুধ প্যাকেট করার জন্য একটি যন্ত্রও আবিষ্কার করেছে। আরো তদন্ত চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, শিশুরা যে ঘরে ঘুমাত সেখানেই মাদুরের নিচে মাদক লুকানো ছিল।
এই জায়গাটিতেই ছোট শিশুটি মাদকের সংস্পর্শে আসে। ১ বছর বয়সী শিশু নিকোলাস ডমিনিসি সেখানেই ঘুমাত। ঘুমের সময় ফেন্টানাইল মাদকের অতিরিক্ত মাত্রা তার শরীরে প্রবেশ করে এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে নিকোলাস। মাত্র এক সপ্তাহের জন্য ডিভিনো নিনো নার্সারিতে ছিল সে। এ ঘটনায় আরো শিশু শক্তিশালী মাদকের সংস্পর্শে আসার কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আক্রান্তদের একজনের প্রস্রাব পরীক্ষা করে মাদকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে।
নার্সারিটির মালিক গ্রেই মেন্ডেজ (৩৬) এবং তার ভাড়াটিয়া কারলিস্টো অ্যাসেভেডো ব্রিটো (৪১)। তারা উভয়ই মাদকদ্রব্য রাখার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। জামিন ছাড়াই তাদের আটক করা হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তারা প্রত্যেকেই যাবজ্জীবন কারাভোগের সম্মুখীন হবেন।
ম্যানহাটনের ইউএস অ্যাটর্নি ড্যামিয়েন উইলিয়ামস এই সপ্তাহে বলেছেন, “অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা চারটি শিশুকে বিষ প্রয়োগ করেছে এবং তাদের একজনকে হত্যা করেছে। কারণ তারা ডে- কেয়ার সেন্টার থেকে মাদকের ব্যবসা চালাচ্ছিল।”
এদিকে মেন্ডেজের একজন আইনজীবী বলেছেন, তার মক্কেল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার স্বামীর চাচাতো ভাই ব্রিটো নার্সারিতে যে মাদক রেখেছিলেন তা তিনি জানতেন না। কিন্তু কিছু ফুটেজ এবং ফোন রেকর্ড দেখে পুলিশ বলেছে, শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়লে মেন্ডেজ তার স্বামীকে বেশ কয়েকবার ফোন করেছিলেন। এর আগে তিনি ৯১১ নম্বরে যোগাযোগ করেন। এরপর তার স্বামী এসে নার্সারি থেকে বেশ কয়েকটি শপিং ব্যাগ লুকিয়ে ফেলেন। প্রসিকিউটরদের মতে, মেন্ডেজ গ্রেপ্তারের আগে তার ফোন থেকে প্রায় ২০ হাজার বার্তা মুছে ফেলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে কর্তৃপক্ষ তা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তার স্বামীকে এখনও খুঁজছে পুলিশ। ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ক্যামেরায় ধরা পড়ে সে।
ফেন্টানাইল হেরোইনের চেয়ে ৫০ গুণ বেশি শক্তিশালী ব্যথানাশক ওষুধ। এর কারণে আমেরিকান মাদক গ্রহনকারীদের মৃত্যুও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১০ সালে দেশটিতে ৪০ হাজারের কাছাকাছি মানুষ মাদকের অতিরিক্ত মাত্রায় মারা গিয়েছিল এবং সেই মৃত্যুর ১০ শতাংশ এরও কম ফেন্টানাইলের সঙ্গে জড়িত ছিল। ২০২১ সাল নাগাদ ১লাখের বেশি মানুষ মাদকের অতিরিক্ত মাত্রায় মারা গিয়েছিল, যাদের মধ্যে আনুমানিক ৬৬ শতাংশ ফেন্টানাইলের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
সূত্র: বিবিসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: