যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই রাজ্যের মাউইয়ে ভয়াবহ দাবানলের আগুনে পুড়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ জন। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার মৃত্যের ছিল ৩৬, যা বেড়ে এখন ৫৩ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া ভয়াবহ এই আগুনে ভষ্মীভূত হয়ে গেছে রাজ্যটির মাউই দ্বীপ।
হাওয়াইয়ের গভর্নর জোশ গ্রিন একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, হাজার হাজার মানুষের অবিলম্বে আবাসনের প্রয়োজন এবং তিনি অনুমান করেছেন প্রায় ১ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। গ্রিন বলেন, ‘লাহাইনা পুনর্নির্মাণ করতে অনেক বছর সময় লাগবে। কর্মকর্তারা হোটেল এবং পর্যটক ভাড়ার সম্পত্তিতে সদ্য গৃহহীনদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে শুরু করেছে। আমাদের হাজার হাজার মানুষের জন্য ঘর বানাতে হবে।’
দাবানলের ফলে মানুষ অগ্নিদগ্ধ, ধোঁয়ায় শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ এবং অন্যান্য আঘাতের শিকার হয়েছেন। অনুসন্ধান এবং উদ্ধার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ দ্বীপ ছেড়ে গেছে।
১০ আগস্ট, গতকাল হাওয়াই ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে আগুন জ্বলতে শুরু করে। এতে বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ইউটিলিটি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। সেই সঙ্গে মাউই দ্বীপের ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষ ঝুঁকিতে পড়েছে।
দাবানল দুই হাজার একরের বেশি জমি পুড়িয়ে দিয়েছে বলে রাষ্ট্রীয় সংস্থা জানিয়েছে। তারা বলেছে, ‘উচ্চ ও দমকা বাতাস এবং শুষ্ক অবস্থা হাওয়াইয়ের বেশির ভাগ অংশকে লাল পতাকা সতর্কতার অধীনে রেখেছিল, যা বুধবার শেষ হয়েছে এবং বিগ আইল্যান্ড ও মাউইতে আরো আগুন জ্বলছে।’ এদিকে দ্রুত গতিশীল অগ্নিশিখা থেকে বাঁচতে অনেক মরিয়া বাসিন্দা সাগরে ঝাঁপ দিয়েছিল।
এর আগে কর্মকর্তারা বলেছিলেন, গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত লাহাইনা শহরে ২৭০টিরও বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় ঐতিহাসিক এ শহর। বর্তমানে হাজার হাজার পর্যটক মাউই ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের মধ্যে অনেকেই ফ্লাইটের অপেক্ষায় বিমানবন্দরে ক্যাম্পে অপেক্ষা করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, সমুদ্রসৈকত শহরের কেন্দ্রস্থলে আগুন জ্বলছে এবং কালো ধোঁয়ার বিশাল কুণ্ডলী উঠছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার ফ্রেসনো থেকে আসা পর্যটক ভিক্সে ফনক্সাইলিংহাম বলেছেন, তিনি লাহাইনার ফ্রন্ট স্ট্রিটে তার স্ত্রী এবং বাচ্চাদের সঙ্গে একটি ভাড়া গাড়িতে আটকা পড়েছিলেন। তখন আগুন তাদের কাছাকাছি চলে এসেছিল। ফলে পরিবার গাড়ি ছেড়ে এবং প্রশান্ত মহাসাগরে ঝাঁপ দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা প্রায় চার ঘন্টা ভেসে ছিলাম। আমাদের ছুটি একটি দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছিল। আমি সর্বত্র বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম, চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম এবং কিছু লোক তাও করতে পারেনি। আমার খুব দুঃখ হচ্ছিল।’
মাউই কাউন্টি কতৃপক্ষ একটি বিবৃতিতে বলেছে, লাহাইনার আগুন ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রন আনা গেছে। লাহাইনার আগুন দ্বীপের পশ্চিম দিকের সমস্ত আশেপাশের এলাকাগুলো ছাইতে পরিণত হয়েছে। লাহাইনা হল মাউয়ের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। প্রতি বছর ২ মিলিয়ন পর্যটক বা দ্বীপের প্রায় ৮০ শতাংশ পর্যটক সেখানে যায়।
সূত্র : রয়টার্স
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: