আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী তালেবানের সঙ্গে বৈঠক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে আফগান শাসক গোষ্ঠীকে মানবাধিকার ইস্যুতে চাপ দিয়েছে দেশটি। ১ আগস্ট, মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারী, মেয়ে এবং ‘অরক্ষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়ের’ মানুষের ‘মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির জন্য দায়ী নীতিগুলো প্রত্যাহার করতে’ আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এছাড়া কাতারে কট্টরপন্থি এই ইসলামপন্থি গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনার সময় তাদের হাতে আটক আমেরিকান নাগরিকদের মুক্তির জন্যও চাপ দিয়েছে দেশটি। তবে তালেবান বলেছে, তারা চায় তাদের নেতাদের ওপর থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হোক।
কট্টরপন্থি এই দলটি ২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানে ক্ষমতায় ফিরে আসে। মূলত সেসময় যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের বিশৃঙ্খলভাবে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরে ক্ষমতা দখল করে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, দোহায় রোববার এবং সোমবার ‘ঊর্ধ্বতন তালেবান প্রতিনিধি এবং প্রযুক্তিগত পেশাদারদের’ সাথে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল ‘আফগান জনগণের অধিকারকে সম্মান করার জন্য এবং দেশের ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য জনগণের দাবির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে’।
যুক্তরাষ্ট্র চায়, মেয়েদের বিরুদ্ধে মাধ্যমিক শিক্ষা এবং নারীদের বিরুদ্ধে কর্মসংস্থানের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তালেবান তা প্রত্যাহার করুক। একই সময়ে আফগানিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের ওপর আক্রমণের প্ল্যাটফর্ম হিসাবে ব্যবহার করার সুযোগ না দিতে তালেবানের যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল সেটিও উল্লেখ করে।
এসময় আফগান বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ‘বড় আকারের সন্ত্রাসী হামলায় হ্রাস পেয়েছে’ বলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে স্বীকার করে নেওয়া হয়।
অন্যদিকে তালেবান বলেছে, তারা চায়- বিদেশে আফগানিস্তানের জব্দকৃত সম্পদ মুক্ত করে দেওয়া হোক। মূলত ২০২১ সালে তালেবান বাহিনী ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ আটকে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
বিবিসি বলছে, দুই দশক ধরে তালেবান গোষ্ঠী ছিল আমেরিকার চিরশত্রু। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী সামরিক অভিযান চালিয়ে তাদের ক্ষমতাচ্যুত করে। কিন্তু এরপর প্রায় দুই দশক ধরে তালেবানের যোদ্ধারা আমেরিকার সৈন্য এবং তাদের মিত্রদের লক্ষ্যবস্তু করে হামলা পরিচালনা করে।
তবে দুই বছর আগে শেষ যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর কাবুল পুনরায় দখলে নিতে তালেবান যোদ্ধাদের মাত্র কয়েকদিন সময় লাগে। অবশ্য কোনও দেশই এখনও তালেবান প্রশাসনকে স্বীকৃতি দেয়নি।
যদিও বাস্তবতা হচ্ছে, তারাই এখন আফগানিস্তানের প্রকৃত শাসক।
সূত্র : বিবিসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: