ফাইল ছবি
থ্যাংকস গিভিং ডে থেকে শুরু হয়ে নববর্ষ পর্যন্ত প্রায় দেড় মাস সময়কে যুক্তরাষ্ট্রে উৎসবের মৌসুম ধরা হয়। এবার লম্বা এ ছুটির মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্রবাসীদের অনেকেই উপহার কিনতে সঞ্চয় ভাঙছেন। ছাড় বা কম দামের পণ্য খুঁজছেন ক্রেতাদের বড় একটি অংশ। মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান তেমন বড় না হলেও ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ও অর্থনৈতিক স্থবিরতায় চাপ বাড়ছে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির সাধারণ ভোক্তাদের ওপর। এ কারণেই উৎসবের ব্যয় নির্বাহে তাদের সঞ্চয় ভাঙতে হচ্ছে বলে বার্তা সংস্থা এপি ও এনওআরসি সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চ পরিচালিত এক যৌথ জরিপে উঠে এসেছে।
প্রাপ্তবয়স্ক যুক্তরাষ্ট্রবাসীদের বড় অংশ জানিয়েছেন, কয়েক মাস ধরেই গ্রোসারি পণ্য, বিদ্যুৎ ও উপহারের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। প্রায় অর্ধেক যুক্তরাষ্ট্রবাসী বলেছেন, যেসব উপহারের কথা আগে ভেবে রেখেছিলেন, সেগুলো কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে। সমসংখ্যক ভোক্তা জানিয়েছেন, তারা বড় অংকের কেনাকাটা পিছিয়ে দিচ্ছেন বা অপ্রয়োজনীয় খরচ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি কমাচ্ছেন তারা।
পণ্যের মূল্য কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েই হোয়াইট হাউজে ফিরেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কিন্তু এখন মূল্যস্ফীতিই তার জনপ্রিয়তায় বাগড়া দিচ্ছে। একই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। এবারের জনমত অনেকটাই ২০২২ সালের ডিসেম্বরের এপি-এনওআরসির জরিপের মতো।
ক্ষমতায় আসার পর পরই আমদানির ওপর বড় অংকের শুল্ক চাপিয়েছেন ট্রাম্প। শুল্কের এ চাপ শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের ঘাড়েই চেপেছে। এতে বেড়েছে মূল্যস্ফীতির গতি। অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিয়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। সব মিলিয়ে পণ্যের দাম অনেক নাগরিকের জন্য হতাশাজনক স্তরে রয়ে গেছে। ট্রাম্প অবশ্য বলে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্রে কোনো মূল্যস্ফীতি নেই এবং অর্থনীতি ভালোই চলছে। জনমত যে ভিন্ন কথা বলছে, তা নিয়েও তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে সম্প্রতি ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আসলে কী হচ্ছে তা মানুষ কবে বুঝবে? কবে জরিপগুলো যুক্তরাষ্ট্রের মহান এ সময়কে প্রতিফলিত করবে এবং মাত্র এক বছর আগে পরিস্থিতি কতটা খারাপ ছিল, তা দেখাবে?’
৬৮ শতাংশ বা অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ‘খারাপ’ অবস্থায় রয়েছে। গত ডিসেম্বরে ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে ফেরার আগে পরিচালিত জরিপেও ফল একই ছিল।
শুল্কনীতির কারণে দাম বাড়া প্রসঙ্গে সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘শিশুদের জন্য কম পুতুল ও পেন্সিল কেনা উচিত।’ জরিপে দেখা যায়, নির্বাচনে ট্রাম্পকে ভোট দেয়া ভোটারদেরও মন্তব্যটি পছন্দ হয়নি।
জরিপে দেখা গেছে, কেনাকাটার সময় প্রায় অর্ধেক নাগরিক স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি কম দামের পণ্য খুঁজছেন। প্রায় ৪০ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা অন্য সময়ের তুলনায় বেশি সঞ্চয় ভাঙছেন। রিপাবলিকান সমর্থকদের তুলনায় খরচ কমানো বা কম দামের পণ্য খোঁজার কথা বেশি বলেছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির ভোটাররা। তবে অনেক রিপাবলিকান সমর্থক বাজেটে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি কাটছাঁটের কথা জানিয়েছেন। জরিপের আওতাভুক্ত রিপাবলিকান সমর্থকদের প্রায় ৪০ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা আগের তুলনায় কম দামের পণ্য খোঁজ করছেন বেশি। জরুরি নয় এমন পণ্য কেনার কথা জানিয়েছেন প্রায় সমসংখ্যক।
বাইডেন প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ২০২২ সালেও ছুটির কেনাকাটা ও অর্থনীতি নিয়ে প্রায় একই রকম হতাশা অনুভব করেছিল যুক্তরাষ্ট্রবাসীরা। ওই বছর গ্রীষ্মে মূল্যস্ফীতি চার দশকের সর্বোচ্চে পৌঁছে। গত তিন বছরে মূল্যস্ফীতি অনেকটা কমলেও তা এখনো ফেডারেল রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এক শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি, প্রায় ৩ শতাংশ। একই সঙ্গে শ্রমবাজারও কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার আপাতদৃষ্টে কম মনে হলেও ক্রমবর্ধমান বৈষম্য এবং অর্থনীতির বিশালায়তন ও বৈচিত্র্যময়তার কারণে সাধারণ ভোক্তাদের ওপর এর অভিঘাত অনেক বেশি। জরিপ ইঙ্গিত দিচ্ছে, অনেক পরিবার শুধু মূল্যস্ফীতি নয় বরং দামের সামগ্রিক স্তর নিয়ে উদ্বিগ্ন। প্রায় ১০ জনে ৯ যুক্তরাষ্ট্রবাসী অর্থাৎ ৮৭ শতাংশ বলেছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোয় গ্রোসারি পণ্যের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিতে উঠেছে। প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ ও ছুটির উপহারের দাম বেশি। প্রায় অর্ধেক যুক্তরাষ্ট্রবাসী বলেছেন, জ্বালানি তেলের দামও বেশি মনে হয়েছে।
নেতিবাচক মনোভাব সত্ত্বেও ভোক্তা ব্যয় মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে। তবে ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে অনেক ক্রেতার আচরণ বদলেছে। ইলিনয়ের আর্লিংটন হাইটসের ৩৩ বছর বয়সী খণ্ডকালীন অধ্যাপক অ্যান্ড্রু রাসেল আগে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে অনলাইনে উপহার কিনতেন। কিন্তু শুল্ক আরোপের কারণে এবার তিনি স্থানীয়ভাবে কেনাকাটা করেছেন। তার আশঙ্কা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) অতিবিনিয়োগ এমন এক বুদবুদ তৈরি করেছে, যা ফেটে গেলে শেয়ারবাজার বড় ধাক্কা খেতে পারে।
খুব কম যুক্তরাষ্ট্রবাসীই মনে করেন, আগামী বছর অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে। অর্থাৎ ট্রাম্পের নীতিগুলো এখনো মানুষের আস্থা জোগাতে পারেনি। প্রায় ৪০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রবাসী প্রাপ্তবয়স্ক মনে করেন, আগামী বছর অর্থনীতি আরো খারাপ হবে। প্রায় ৩০ শতাংশের মতে, পরিস্থিতি খুব একটা বদলাবে না। মাত্র প্রায় ২০ শতাংশ মনে করেন অবস্থার উন্নতি হবে, এক্ষেত্রে রিপাবলিকান সমর্থকরা তুলনামূলক বেশি আশাবাদী। ২০২৪ সালে প্রায় ৪০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রবাসী মনে করতেন, পরের বছর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: