ছবি : সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একজন ‘ফ্যাসিস্ট’ এবং ‘স্বৈরাচারী’ দাবি করে আবারও নিজের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন জোহরান মামদানি। হোয়াইট হাউসে তাদের দুজনের অপ্রত্যাশিত সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠকের মাত্র কয়েক দিন পরই তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।
এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে রবিবার নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়রকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি এখনো ট্রাম্পকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসেবে দেখেন কি না। মামদানি জবাব দেন, ‘অতীতে যা বলেছি, এখনো তা-ই বিশ্বাস করি।
আমাদের রাজনীতিতে যেখানে মতভেদ আছে, সেখান থেকে পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই বলে আমি মনে করি।’
৪ নভেম্বরের বিজয় ভাষণে মামদানি বলেছিলেন, নিউইয়র্ক দেখিয়েছে যে রাজনৈতিক অন্ধকারের সময়ে এটি ‘আলো’ হয়ে উঠতে পারে। তিনি প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ করে বক্তব্য দেন, ‘কোনো স্বৈরাচারীকে ভয় দেখানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো সেই শর্তগুলো ভেঙে ফেলা, যা তাকে ক্ষমতা সঞ্চয়ে সাহায্য করেছে। তাই ডোনাল্ড ট্রাম্প, জানি আপনি দেখছেন—আপনার জন্য আমার চারটি শব্দ আছে: টার্ন দ্য ভলিউম আপ।’
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্প যেভাবে মামদানির বিরুদ্ধে ‘কমিউনিস্ট উন্মাদ’ আখ্যা দেওয়াসহ তীব্র ভাষায় আক্রমণ চালিয়েছেন, তাতে হোয়াইট হাউস বৈঠকটি নিয়ে তীব্র আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল এবং অনেকে মনে করেছিলেন এটি উত্তেজনাপূর্ণ হবে। কিন্তু এর বদলে বৈঠকটি উষ্ণ কথোপকথনে পরিণত হয়, যেখানে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী যে তিনি ভালো কাজ করতে পারবেন,’ এবং আরো যোগ করেন, ‘আসলে তিনি কিছু রক্ষণশীল মানুষকে বিস্মিত করবেন বলে আমি মনে করি।’
দুজনই আবাসন, খাদ্যমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয়ের বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হন এবং নিউইয়র্কের প্রতি তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা নিয়েও কথা বলেন। ওভাল অফিসে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা যতটা ভেবেছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশি বিষয়ে একমত হয়েছি’, এবং মাঝে মাঝে তিনি প্রেসের চাপযুক্ত প্রশ্ন থেকে মামদানিকে আড়াল করতেও এগিয়ে আসেন।
এনবিসিকে রবিবার মামদানি বলেন, ‘এটি ছিল এমন এক আলোচনা, যেখানে আমরা এজেন্ডাটি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেছি।’
তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট যেভাবে মন্ত্রিসভার বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখিয়েছেন এবং পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টদের প্রতিকৃতিগুলো চিনিয়ে দিয়েছেন, তা তিনি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করেছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে তা নিয়ে বলতে সংকোচ করিনি, পাশাপাশি কিভাবে আমরা বাস্তবায়নের দিকে এগোতে পারি সে বিষয়েও গুরুত্ব দিয়েছি।’
মামদানি আরো ব্যাখ্যা দেন, কেন তিনি সাবেক মেয়র এরিক অ্যাডামস কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশকে পদে বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মামদানি বলেন, ‘তিনি পাঁচটি বড় অপরাধের হার কমিয়েছেন এবং একই সঙ্গে অ্যাডামসের সময় প্রোথিত সেই বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি উপড়ে ফেলার কাজ শুরু করেছেন।’
হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক এজেন্ডা এগিয়ে নিতে ট্রেজারি সেক্রেটারির সঙ্গে কাজ করা ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের পরিচালক কেভিন হ্যাসেট রবিবার এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন এবং বলেন হোয়াইট হাউস এতে সন্তুষ্ট।
সিএনএনের ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ অনুষ্ঠানে সঞ্চালক জেক ট্যাপারকে হ্যাসেট বলেন, ‘আমরা সত্যিই আশ্বস্ত যে (মামদানি) পুলিশ কমিশনারকে বহাল রেখেছেন। নিউইয়র্কের আগের প্রশাসনগুলোতে আমরা দেখেছি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সত্যিই খারাপের দিকে গেছে।’
টিশ র্যাংক-অ্যান্ড-ফাইল কর্মকর্তাদের উদ্দেশে পাঠানো এক ই-মেইলে লিখেছেন, ‘নবনির্বাচিত মেয়র ও আমার সব বিষয়ে একমত না হওয়াটা স্বাভাবিক।’ তিনি যেখানে অ্যাডামসের পাঁচজন নতুন পোশাকধারী কর্মকর্তা নিয়োগের পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছেন, সেখানে মামদানি বলেছেন তিনি জনবল একই মাত্রায় রাখতে চান।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: