ফাইল ছবি
গুগলের ডিজিটাল বিজ্ঞাপন ব্যবসা ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দিতে শুক্রবার এক ফেডারেল বিচারকের কাছে আবেদন জানিয়েছে সরকার।
সরকারি আইনজীবীদের যুক্তি, তাদের ব্যবসায়িক পদ্ধতি বদলানোর জন্য টেক জায়ান্টটির দেয়া প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করা যায় না।
গুগলের অ্যাড টেক ‘স্ট্যাক’ (যেসব টুলের মাধ্যমে ওয়েবসাইট পাবলিশাররা বিজ্ঞাপন বিক্রি করে এবং বিজ্ঞাপনদাতারা বিজ্ঞাপন কেনেন) নিয়ে করা একটি মামলায় সরকারি আইনজীবীরা তাদের চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
এ বছর গুগলের জন্য এটি দ্বিতীয় প্রধান অ্যান্টিট্রাস্ট (একচেটিয়া ব্যবসার বিরুদ্ধে) আইনি পরীক্ষা।
এর আগে সেপ্টেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক এই টেক জায়ান্টের বিশ্বব্যাপী সার্চ ইঞ্জিন ব্যবসা ভেঙে দেয়ার একই রকম দাবি খারিজ করে দিয়েছিলেন বিচার বিভাগের (ডিওজে) এক বিচারক।
অ্যাপল, অ্যামাজন ও মেটাসহ অন্যান্য বড় টেক কোম্পানিগুলোর বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য কমানোর জন্য সরকারের বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ এই মামলাগুলো।
এখন পর্যন্ত এসব মামলার ফলাফল মিশ্র। চলতি সপ্তাহে আরেক বিচারক মেটার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সরকারের মামলা খারিজ করেছেন।
শুক্রবার যুক্তিতর্কের আগে দাখিল করা এক নথিতে বিচার বিভাগ (ডিওজে) ও একাধিক অঙ্গরাজ্য অভিযোগ তোলে, গুগল দু’টি আন্তঃসংযুক্ত বিজ্ঞাপন প্রযুক্তির বাজারে বেআইনিভাবে একচেটিয়া অবস্থান দখল করেছে।
তাদের দাবি, গুগল এক দশক ধরে নানা রকম বেআইনি কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
সরকারের মামলায় বলা হয়েছে, গুগল একইসাথে বিজ্ঞাপন বাজারের একাধিক দিক নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রকাশকদের বিজ্ঞাপন বিক্রির প্ল্যাটফর্ম, লেনদেনের এক্সচেঞ্জ এবং বিপুল বিজ্ঞাপনদাতার চাহিদা সবই তাদের দখলে।
ডিওজে জানিয়েছে, গুগল এক সময় এই ব্যবস্থাকে তুলনা করেছিল গোল্ডম্যান স্যাকস এর নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের মালিক হওয়ার সাথে।
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল গেইল স্লেটার এক্সবার্তায় লিখেছেন, ‘আমরা সমস্যার সমাধান করতে এসেছি। আমরা বলব, গুগলের একচেটিয়া আধিপত্য ভেঙে দেয়াটাই সেরা সমাধান। এতে নতুন প্রতিযোগী তৈরি হবে।’
গুগল পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেছে, প্রস্তাবিত পদক্ষেপ চরম সরকারি হস্তক্ষেপ। এতে প্রকাশক, বিজ্ঞাপনদাতা ও ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কোম্পানির দাবি, তাদের সমন্বিত বিজ্ঞাপন টুলগুলো দক্ষতা ও উদ্ভাবন বাড়ায়। আর এসব সেবা ভেঙে ফেলা প্রযুক্তিগতভাবে প্রায় অসম্ভব।
এ বছর মামলার দায়ভারসংক্রান্ত প্রাথমিক রায়ে ফেডারেল বিচারক লিওনি ব্রিঙ্কেমা জানান, গুগল ইচ্ছাকৃতভাবে পাবলিশার অ্যাড সার্ভার এবং অ্যাড এক্সচেঞ্জ উভয় বাজারেই একচেটিয়া ক্ষমতা দখল করেছে। এর পরই চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক শুরু হয়।
প্রসিকিউটররা এখন ব্যাপক পদক্ষেপ চাইছেন। এর মধ্যে রয়েছে গুগলের অ্যাডএক্স এক্সচেঞ্জ বিক্রি করতে বাধ্য করা এবং গুরুত্বপূর্ণ নিলাম প্রযুক্তি ওপেন-সোর্স (উন্মুক্ত) করে দেয়া।
আমেরিকান ইকোনমিক লিবার্টিজ প্রজেক্টের লরেল কিলগোরের মতে, বিচারক ব্রিঙ্কেমা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে তার সিদ্ধান্তটি পরে বাতিল হতে পারে। কারণ, গুগল নিশ্চিতভাবেই আপিল করবে। ফলে এই প্রক্রিয়াটি বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকবে।
১১ দিনের এই বিচারে ১৯ জন সাক্ষী এবং সাতজন বিশেষজ্ঞের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে।
সার্চ ইঞ্জিন মামলায় বিচারক বলেছিলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) উত্থান গুগলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার কারণ।
তবে অ্যাড টেক মামলায় ডিওজে আইনজীবীরা বিপরীত যুক্তি দিয়ে বলেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর অগ্রগতি গুগলের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার বদলে আরো বেশি সুপ্রতিষ্ঠিত করবে।
এই মামলার চূড়ান্ত রায় আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দেয়া হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: