২০৩৫ সালের মধ্যে চাঁদে পা রাখার লক্ষ্য স্থির পাকিস্তানের

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৬ আগস্ট ২০২৫ ২২:৫৬

ছবি : সংগৃহীত ছবি : সংগৃহীত

আভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা, ঋণের ভারে ডুবে থাকা অর্থনীতি এবং অবিরাম রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিপর্যস্ত পাকিস্তান ২০৩৫ সালের মধ্যে চাঁদে অবতরণের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে। কিন্তু চন্দ্র আরোহণের স্বপ্নের পেছনে একটি পরিচিত বাস্তবতা লুকিয়ে আছে তার সর্বকালের বন্ধু চীনের উপর অপ্রতিরোধ্য নির্ভরতা।

পাকিস্তানের মন্ত্রী আহসান ইকবাল, যিনি বর্তমানে বৈজ্ঞানিক ও কৌশলগত সহযোগিতার জন্য বেইজিংয়ে রয়েছেন, সোমবার শীর্ষ চীনা কর্মকর্তাদের সাথে এক বৈঠকে এই ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের মহাকাশ সংস্থা সুপারকো-কে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যারা কখনও স্বাধীনভাবে কোনও উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেনি, মহাকাশ অভিযান তো দূরের কথা।

চীনের পারমাণবিক শক্তি কর্তৃপক্ষ এবং মহাকাশ সংস্থার প্রধান শান ঝংদেসহ ঊর্ধ্বতন চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ইকবাল সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য জোরালো প্রস্তাব দেন। লক্ষ্য পাকিস্তানের মহাকাশ এবং পারমাণবিক সক্ষমতার ফাঁকগুলো পূরণ করা। পাকিস্তানের প্রতিটি মহাকাশ অভিযান চীনা সহায়তায় পরিচালিত হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবাল সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন যে চীনের যথেষ্ট সহায়তায় তিনটি ‘পাকিস্তানি-নির্মিত’ উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।’

ইসলামাবাদ ২০২৬ সালের মধ্যে চীনের মহাকাশ স্টেশনের সাহায্যে মহাকাশে প্রথম নভোচারী পাঠানোর আশা করছে, নিজস্ব কোনও স্বাধীন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নয়। গত মাসেই জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবিলার লক্ষ্যে চীনের জিচাং স্যাটেলাইট লঞ্চ সেন্টার থেকে একটি নতুন পাকিস্তানি রিমোট-সেন্সিং স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। কিন্তু যদিও এটিতে পাকিস্তানের পতাকা ছিল, তবুও প্রযুক্তিগত দক্ষতা এসেছে চীন এবং সুপারকো-এর সাহায্যের সৌজন্যে। ইকবাল ‘উরান পাকিস্তান’ উদ্যোগেরও সমর্থক ছিলেন, দাবি করেছিলেন যে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ দেশের মহাকাশ উচ্চাকাঙ্ক্ষায় নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছেন।

সুপারকো-এর নেতৃত্বে উরান হল পাকিস্তানের জাতীয় মহাকাশ কর্মসূচি। নির্ভরতা আরও গভীর হচ্ছে। এই বছরের শুরুতে পাকিস্তান ২০২৮ সালে নির্ধারিত আন্তর্জাতিক চন্দ্র গবেষণা কেন্দ্র-এর অংশ হিসেবে চীনের চাং’ই ৮ মিশনে অংশগ্রহণের জন্য স্বাক্ষর করেছে। চাঁদের অধরা দক্ষিণ মেরু অন্বেষণের জন্য সুপারকো ৩৫ কিলোগ্রাম ওজনের একটি দেশীয় রোভার অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নাসার মতে, চাং’ই ৮-এর উদ্দেশ্য হলো স্থায়ী চন্দ্র বিজ্ঞান ঘাঁটি তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি পরীক্ষা করা। পাকিস্তানের জন্য এটি একটি অত্যাধুনিক বৈশ্বিক মিশনের অংশ হওয়ার একটি বিরল সুযোগ। ১৯৬১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর নোবেল বিজয়ী ড. আবদুস সালামের নেতৃত্বে পাকিস্তান তার আনুষ্ঠানিক মহাকাশ কর্মসূচি চালু করে, যিনি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ছিলেন।

তিনি স্পেস অ্যান্ড আপার অ্যাটমোস্ফিয়ার রিসার্চ কমিশন (সুপারকো) প্রতিষ্ঠা করেন, যা সেই সময়ে পাকিস্তানকে মহাকাশ গবেষণায় প্রাথমিক প্রবেশকারীদের মধ্যে একটি হিসেবে স্থান দেয়। তবে, সুপারকো তখন থেকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জনে সংগ্রাম করে আসছে, যার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল দীর্ঘস্থায়ী তহবিলের অভাব।

বাজেট ছিল মাত্র ৩৬ মিলিয়ন ডলার। নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জগুলো স্থবিরতাকে আরও জটিল করে তুলেছে। গত এক দশক ধরে সুপারকো-এর নেতৃত্বে অভিজ্ঞ বিজ্ঞানীদের পরিবর্তে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক জেনারেলরা রয়েছেন, যার ফলে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

তাছাড়া, পাকিস্তানের খুব কম বিশ্ববিদ্যালয়ই মহাকাশ বিজ্ঞান বা প্রকৌশলে বিশেষায়িত প্রোগ্রাম অফার করে, যার ফলে দক্ষ পেশাদারদের অভাব দেখা দেয়। সামর্থ্যের দিক থেকে পাকিস্তান স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য চীনের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: