মরুভূমির 'গোলাপের শহর' সৌদি আরবের সৌন্দর্য আর সুগন্ধির স্মারক

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৩৫

ছবি : সংগৃহীত ছবি : সংগৃহীত

মরুভূমির গোলাপের সুগন্ধি বোতলে ধারণ করার শিল্পে নিখুঁত দক্ষতা অর্জন করেছেন সৌদি আরবের বাসিন্দা খালাফুল্লাহ আল-তালহি। গোলাপ বড়ই পছন্দ করেন তিনি। নিজের বাচ্চাদের চেয়েও গোলাপের যত্ন নেন বেশি। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। সেখানে বলা হয়েছে, গোলাপের শহর নামে পরিচিত সৌদির তাইফ শহর।

তাইফে ৮০০ খামারে প্রায় ৩০ কোটি গোলাপ উৎপাদন করা হয়। আল-তালহির ধারণা অনুযায়ী এর মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ লাখ গোলাপের ফলন তিনি নিজেই করেন। বসন্তের মৃদু আবহাওয়ার আগমনের সঙ্গে সঙ্গে তাইফে গোলাপ ফুঁটতে দেখা যায়। যা বিশাল মরুভূমির দৃশ্যকে গোলাপী রঙের প্রাণবন্ত ছায়ায় সজ্জিত করে।

একদল শ্রমিক ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফুলগুলো তোলেন। এরপর গোলাপের পাঁপড়িগুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখেন। পরে তা সেদ্ধ করা হয়। মানুষের কাছে অতি পরিচিত এই ফুলটির সুগন্ধ প্রক্রিয়াজাত করা একটি জটিল বিষয়। বাষ্প করে তা সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে তা থেকে তৈরি হয় সুগন্ধি তেলে।

"আমি গোলাপ ভালোবাসি এবং আমার নিজের সন্তানদের চেয়েও আমি তাদের যত্ন বেশি করি," পশ্চিম সৌদি আরবের তাইফে তার ফুলের খামার থেকে ৮০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ এএফপিকে বলেন।

দীর্ঘদিন ধরে পবিত্র কাবা শরীফের দেয়াল ধোয়ার কাজে গোলাপ জল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ওই গোলাপ জল তৈরি করা হয় গোলাপ থেকে। এছাড়া তাইফের গোলাপ থেকে তৈরি সুগন্ধি সৌদি আরবে আসা হজ্জযাত্রীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। স্থানীয়ভাবে এর ব্যাপক চাহিদার কারণে সীমিত পরিমাণে গোলাপ রপ্তানি করা হয়।

তালহি বলেন, এখানে অনেক গোলাপ প্রেমি আছেন যারা শুধু গোলাপেরই সুগন্ধি পছন্দ করেন। ট্রেন্ডইকোনোমির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সৌদি আরব ১৪১ মিলিয়ন ডলারের সুগন্ধি পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে গোলাপ জলও আছে। ফুল কাটার মৌসুমে তালহির খামার থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ফুল তোলা হয়। তালহি বলেন, আমরা খামারেই জন্মেছি এবং এগুলো নিয়েই আছি। তবে গ্রীষ্মের তীব্র তাপ, অতি শীত ও অপ্রত্যাশিত বন্যা তাইফের গোলাপ বাগানের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জলবায়ুু বিজ্ঞানীরা সতর্কতা জারি করেছেন যে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে তাপপ্রবাহ, ভারী বৃষ্টিপাত ও খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পাবে। শুষ্ক জলবায়ু ও বিশাল মরুভূমির কারণে সৌদি আরব বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। আটল্যান্টিক কাউন্সিল ধারণা করছে, উচ্চ তাপমাত্রা ও পর্যাপ্ত সেচের পানির অভাবে ২০৫০ সাল নাগাদ গমের উৎপাদন ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমে যাবে। এছাড়া খেজুর ও অন্য ফসলের উৎপাদনও হ্রাস পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর সঙ্গে গোলাপ উৎপাদনও কমে যেতে পারে।

তালহির মতে, তাইফের আশেপাশের মরুভূমির আবহাওয়াও এর ব্যতিক্রম নয়। "গত বছর এবং তার আগের বছর, প্রচণ্ড ঠান্ডা ছিল। কিছু কৃষক তাদের ক্ষেত থেকে একটি ফুলও সংগ্রহ করতে পারেনি। সৌভাগ্যক্রমে, এই ঋতুটি আরও সহনশীল হয়েছে, আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু এই বছর পরিস্থিতি খুবই মৃদু,"।

যদিও আবহাওয়া এখন কম নির্ভরযোগ্য হতে পারে, তালহি নিজেই স্থিতিশীলতার উৎস হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তার ক্রমবর্ধমান বয়স সত্ত্বেও, অষ্টাদশ বছর বয়সী এই ব্যক্তি প্রতিদিন সূর্যোদয়ের আগে উঠে তার কর্মীদের সাথে ক্ষেতে কাজ করেন এবং প্রায়শই তিনি গভীর রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করেন। "এই খামারটি আমার আত্মা এবং স্পন্দিত হৃদয়," তিনি এএফপিকে বলেন। "মহান আল্লাহর ইচ্ছায়, মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই আমাকে এর থেকে আলাদা করতে পারবে না।"



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: