উত্তর প্রদেশে মসজিদ সমীক্ষা স্থগিত, শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে বললেন প্রধান বিচারপতি

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:১২

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি


উত্তর প্রদেশের সাম্ভালে মুঘল যুগের শাহী জামা মসজিদে সমীক্ষা নিয়ে নিম্ন আদালতের রায় ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। এর আগ পর্যন্ত মসজিদে কোনো সমীক্ষা চালানো যাবে না। মসজিদ কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি শেষে ২৯ নভেম্বর দুপুরে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।  ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

মসজিদ কমিটিকে এলাহাবাদ হাইকোর্টের শরণাপন্ন হওয়ার নির্দেশ দেন ভারতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ। এ সময় এলাহাবাদ হাইকোর্টকে মসজিদ কমিটির আবেদনের তিন কার্যদিবসের মধ্যে শুনানির নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট।সুপ্রিম কোর্ট শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন এবং হাইকোর্ট বিষয়টি শুনানির সুযোগ না পাওয়া পর্যন্ত ট্রায়াল কোর্টকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

ভারতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না বলেছেন, ‘শান্তি ও সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা এটি মুলতবি রাখব। আমরা চাই না কোনো কিছু ঘটুক। আমাদের পুরোপুরি নিরপেক্ষ থাকতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে।’

সুপ্রিম কোর্ট এলাহাবাদ হাইকোর্টকে মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়ের করা আবেদন প্রাপ্তির তিন কর্মদিবসের মধ্যে শুনানির নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া, আদালত উল্লেখ করেছেন যে, ৮ জানুয়ারির জন্য নির্ধারিত ট্রায়াল কোর্টের শুনানি হাইকোর্ট বিষয়টি পর্যালোচনা না করা পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।

সাম্ভালের শাহি জামা মসজিদের জায়গায় একসময় একটি মন্দির ছিল দাবি করে গত ১৯ নভেম্বর স্থানীয় আদালতে মামলা করা হয়। পিটিশনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বাবরনামা’ ও ‘আইন-ই-আকবরি’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে, ১৫২৯ সালে সম্রাট বাবর এই স্থানে থাকা মন্দির ধ্বংস করেছিলেন। পরে আদালত বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য জরিপ পরিচালনার নির্দেশ দেয়। ২৪ নভেম্বর জরিপ শুরু হলে মসজিদ ধ্বংসের শঙ্কায় প্রতিবাদ শুরু করলে তা সহিংসতায় রূপ নেয়। এ ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যু এবং বহু লোক আহত হন।

পরে মসজিদ কমিটি নিম্ন আদালতের রায়ে বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। আবেদনে বলা হয়, স্থানীয় আদালত একপেশে আদেশ দিয়ে জরিপের নির্দেশ দিয়েছে। কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া বা বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়াই এটির বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এভাবে জরিপের আদেশ দেওয়ার ফলে দেশব্যাপী ধর্মীয় স্থাপনার বিষয়ে যেসব মামলা চলছে, তাতে তীব্র প্রভাব পড়বে। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং দেশের ধর্মনিরপেক্ষ সত্তায় ক্ষতি হতে পারে বলে অভিযোগ করেন তারা।

সমীক্ষার সমর্থকেরা বলেন, এটি ঐতিহাসিক সত্য উন্মোচনের একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। অন্যদিকে সমালোচকেরা এটিকে উসকানিমূলক এবং ধর্মীয় স্থানগুলোর পবিত্রতা লঙ্ঘন হিসেবে দেখছেন। ১৯৯১ সালের প্লেসেস অব ওয়ারশিপ অ্যাক্টে এ ধরনের স্থাপনার সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে মসজিদে সমীক্ষা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান অনেকেই। সমাজবাদী পার্টির সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান বারক ১৯৯১ সালের উপাসনালয় আইন উল্লেখ করে জরিপের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সাম্ভালের শাহী জামা মসজিদ একটি ঐতিহাসিক স্থান। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল, ১৯৪৭ সালের মতোই উপাসনালয়ের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে। ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য এটি একটি ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ভারতে মসজিদ ঘিরে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬ভারতে মসজিদ ঘিরে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬
উত্তর প্রদেশ কংগ্রেস প্রধান অজয় রাই বলেন, যোগী আদিত্যনাথ সরকারের আমলে রাজ্যে সহিংসতার ঘটনা দিনে দিনে বাড়ছে। তবে বিজেপি পাল্টা জবাব দিয়ে বলেছে, যাঁরা বিচারিক আদেশ মানেন না, তাঁরা আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন।

দলীয় মুখপাত্র নলিন কোহলি বলেন, ‘কেউই আইন ভাঙার অধিকার রাখে না। যদি আদালত কোনো আদেশ দেয়, তা কার্যকর করা হবে। যারা আদেশ সংশোধনের ইচ্ছা রাখে, তাদের জন্য বিচার প্রক্রিয়া উন্মুক্ত।’

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: