আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের নৈতিকতা মন্ত্রণালয় দাড়ি না রাখায় নিরাপত্তা বাহিনীর ২৮০ জনের বেশি সদস্যকে বরখাস্ত করেছে। এছাড়া গত বছরে ‘অশ্লীল কর্মকাণ্ডের’ অভিযোগে ১৩ হাজারের বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে। ২০ আগস্ট, মঙ্গলবার তালেবান কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
নৈতিকতা মন্ত্রণালয় হিসেবে পরিচিত পাপ দমন ও পুণ্যের প্রচার মন্ত্রণালয় তাদের কার্যক্রমের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আটককৃতদের প্রায় অর্ধেককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রণালয় আটককৃতদের অপরাধের ধরন বা তাদের লিঙ্গ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি।
মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও আইন পরিচালক মোহিবুল্লাহ মোখলিস এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত বছরে তারা ২১ হাজার ৩২৮টি বাদ্যযন্ত্র ধ্বংস করেছে এবং হাজার হাজার কম্পিউটার অপারেটরকে বাজারে ‘অশ্লীল ও অনৈতিক’ চলচ্চিত্র বিক্রি থেকে বিরত রেখেছে।
তিনি আরও জানান, ২৮১ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকে দাড়ি না রাখার কারণে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের ইসলামি আইন অনুসারে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
২০২১ তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর এই নৈতিকতা মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। তখন নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয় বাতিল করা হয়। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন নারীদের ওপর বিভিন্ন বিধিনিষেধ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করায় তালেবান শাসকদের সমালোচনা করে আসছে।
জাতিসংঘের আফগানিস্তান মিশন জানিয়েছে, নৈতিকতা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মাঝে মাঝে নারী আটক করেছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইসলামি পোশাকবিধি না মানার অভিযোগে আটক করা হয়। কখনও কখনও তাদের কয়েক ঘণ্টার জন্য আটক রাখা হয়েছে।
তালেবান এই অভিযোগগুলোকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করেছে। গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, তারা ইসলামি আইন এবং আফগান রীতিনীতি অনুসারে এসব নিয়ম প্রয়োগ করছে।
নারীদের পোশাক ও পুরুষ অভিভাবক ছাড়া দূরপথে ভ্রমণ সম্পর্কিত কোনও তথ্য মন্ত্রণালয় সরবরাহ করেনি। তবে জানিয়েছে, ইসলামি পোশাকবিধি অনুসরণ নিশ্চিত করতে একটি নতুন পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। যা দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কান্দাহারে অবস্থিত সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতার তত্ত্বাবধানে থাকবে।
মোখলিস জানান, সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশনা অনুযায়ী, নারীদের হিজাব (ইসলামি পোশাক) পরিধানের জন্য একটি খসড়া পরিকল্পনা তৈরি ও অনুমোদিত হয়েছে।
এর আগে, নৈতিকতা মন্ত্রণালয় বলেছিল, নারীদের পুরোপুরি মুখ ঢেকে রাখা উচিত বা বোরকা পরা উচিত। এই নিয়ম না মানলে তাদের পরিবারের পুরুষ সদস্যদের টার্গেট করা হবে, সরাসরি নারীদের নয়।
তালেবান ক্ষমতা দখলের আগেও আফগানিস্তানের রক্ষণশীল সমাজে বেশিরভাগ নারী প্রকাশ্যে তাদের চুল ঢেকে রাখতেন। তবে কাবুলের মতো শহরগুলোতে অনেকেই সাধারণত মুখ ঢাকতেন না বা বোরকা পরতেন না।
মোখলিস আরও জানান, তারা নারী বিক্রির দুই শতাধিক ঘটনা প্রতিহত এবং নারীর বিরুদ্ধে আড়াই হাজারের বেশি সহিংসতার ঘটনা প্রতিরোধ করেছেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: