বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক শিক্ষক প্রবীণ ইসলামী ব্যক্তিত্ব মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৮৭ বছর।
২ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় ধানমণ্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা চলাকালে মারা যান তিনি।
তাঁর ছেলে মুহাম্মদ আরিফুর রহমান সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। বৃহস্পতিকবার রাত ১০টায় উত্তরা ৩ নং সেক্টরের ফ্রেন্ডস ক্লাব মাঠে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১০ নং সেক্টরের কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। গত অর্ধশতাব্দি ধরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলাম প্রচারে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
তিনি ছিলেন মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ও মাওলানা শাহ আবরারুল হক (রহ.)-এর খলিফা। আলেম না হলেও তিনি ছিলেন শীর্ষ আলেমদের আস্থাভাজন। সবার কাছে তিনি প্রফেসর হজরত নামে পরিচিত ছিলেন।
জন্ম ও পড়াশোনা : মুহাম্মাদ হামিদুর রহমান ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
গ্রামের স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি নিয়মিত মক্তবে পড়তেন এবং মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের শিক্ষকদের সেবা করতেন। তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) ছিলেন রেলওয়ে বিভাগের সরকারি চাকরিজীবী। তবে তাঁর অন্তরে ছিল পবিত্র কোরআনের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা। তাই সময় পেলেই তিনি কোরআন পড়তেন এবং সন্তানদের মধ্যেও এর ভালোবাসা তৈরি করেন। ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ১৯৫৫ সালে তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হন।
প্রথম বর্ষের শুরুতেই তাঁর বাবা মারা যান। ১৯৫৭ সালে তিনি আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট) ভর্তি হন।
কর্মজীবন : কর্মজীবনে প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরবর্তীতে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কম্পানিতে চাকরি করেন। আজিমপুরে থাকাকালে খ্যাতিমান আলেম মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সান্নিধ্যে পবিত্র কোরআনে বিশেষ পারিদর্শিতা অর্জন করেন। ১৯৬৫ সালে হজরত কম্পানি থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে ইংল্যান্ডে ৯ মাস অবস্থান করেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে তিনি দাড়ি রাখা শুরু করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তাঁর পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। সব ছেলেই সবাই হাফেজ ও আলেম। ১৯৬৯ সালে কম্পানির চাকরি ছেড়ে অনেক কম বেতনে বুয়েটে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন।
হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য লাভ : ১৯৭৪ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন। পাঁচ বছর পর তিনি খিলাফত লাভ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সফরসঙ্গী হিসেবে পবিত্র হজ পালন করেন। ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সময় বুয়েট কর্তৃপক্ষ তাঁকে ছুটি দিতে না চাইলে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। সফর থেকে দেশে ফেরার পর হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) তাঁকে মাদরাসায় পড়ে আলেম হওয়ার পরামর্শ দেন এবং মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করতে বলেন। পরবর্তীতে মাদরাসা করলেও পুরোপুরি মাদরাসায় পড়তে না পারায় তিনি সবসময় আক্ষেপ করতেন। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলি থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
আমেরিকা ও ইউরোপ সফর : ২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সময় নিয়ে সফর করেন। এ সময় তিনি নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন, অস্টিনসহ বিভিন্ন রাজ্যে অনুষ্ঠিত প্রোগ্রামগুলোতে ইংরেজিতে আলোচনা করেন। ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। তার বিদেশ সফরসহ বিভিন্ন বিষয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে ১৬টি বই প্রকাশিত হয়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: