‘গুজব যুদ্ধে’ও পিছিয়ে নেই ইসরায়েল

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:১৫

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি


ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) ১০ অক্টোবর, মঙ্গলবার অফিসিয়ালি একটি ভিডিও প্রকাশ করে। যেখানে দাবি করা হয়, ৪ সশস্ত্র ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসীর সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাদের গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই ৪ ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী নিহত হন। আইডিএফ’র এই দাবির সত্যতা যাচাই করেছে আল জাজিরার ডিজিটাল ইনভেস্টিগেশন টিম ‘সানাদ’।

জানা যায়, ভিডিওতে কিছু অসঙ্গতি খেয়াল করে, স্যাটেলাইট ইমেজ এবং ক্রোনোলজিক্যাল অর্ডার ব্যবহার করে ‘সানাদ’ এর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

যেখানে দেখানো হয়েছে, ইসরায়েলের জিকিম বিচ এলাকায় নিহত ওই চার ফিলিস্তিনি ছিলেন নিরস্ত্র। তারা হাত উঁচু করে আত্মসমর্পণও করে। ইসরায়েলি সেনা সদস্যরা ট্যাঙ্কে করে তাদের দিকে এগিয়ে আসে। মাত্র ৪ মিটার দূর থেকে ঠান্ডা মাথায় তাদের গুলি করে ইসরায়েলি সেনারা। এরপর লাশগুলো নিজেদের মতো করে সুবিধাজনকভাবে রাখে। পাশে রাখা হয় অস্ত্র।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন দ্বারাও প্রতিবেদনটির সত্যতা জাচাই করা হয়।   

আইডিএফর এই ফুটেজ বেশ কয়েকটি পশ্চিমা গণমাধ্যম কোনো ধরনের যাচাই বাছাই ছাড়াই প্রচার করে। অথচ আল জাজিরার ইনভেস্টিগেশনে এটাকে ‘ওয়ার ক্রাইম’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

গাজায় হাসপাতালে ভয়াবহ হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। দেখা দেয় তীব্র প্রতিক্রিয়া। এমন প্রেক্ষাপটে ঘটনার শুরু থেকেই এ হামলার জন্য ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী প্যালেস্টানিয়ান ইসলামিক জিহাদকে (পিআইজে) অভিযুক্ত করে আসছে ইসরায়েল।

এ নিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং আইডিএফ বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য প্রচার করে আসছে। এসব বক্তব্যও লুফে নিয়েছে পশ্চিমা গণমাধ্যম। হাসপাতালে অমানবিক এই হামলা নিয়েও আল জাজিরা ডিজিটাল ইনভেস্টিগেশন করেছে। এতে হামলার আগে থেকে হামলা পর্যন্ত প্রতিটি সেকেন্ড, শব্দ, শব্দের উৎপত্তিসহ নানা বিষয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

আল জাজিরার এই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, হামলার সময় এবং তার আগে-পরে ফিলিস্তিন থেকে কোনো রকেট ছোড়া হয়নি। অথচ ইসরায়েল দাবি করে আসছিল, ইসলামিক জিহাদের ছোড়া রকেট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গাজার হাসপাতালে আঘাত হানে। অবশ্য হাসপাতালে হামলা নিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিও একটি অনুসন্ধান করেছে। তবে তারা এখনও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি।

এর আগে, হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শিশুদের শিরশ্ছেদ এবং নারীদের ধর্ষণের যে অভিযোগ পশ্চিমা গণমাধ্যমে এসেছিল তারও কোনো তথ্য প্রমাণ হাজির করতে পারেনি তেল আবিব কিংবা ওয়াশিংটন। এই ৪০ শিশুর শিরশ্ছেদের ঘটনা প্রথম সামনে আনেন ইসরায়েলি টেলিভিশন চ্যানেল আই২৪ নিউজের একজন প্রতিবেদক। এরপর সিএনএনসহ পশ্চিমা গণমাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। অবশ্য আই২৪ নিউজ ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ঘনিষ্ঠ টেলিভিশন চ্যানেল হিসেবে পরিচিত।

ইসরায়েলি প্রভাবশালী দৈনিক হারেৎজ’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আই২৪ নিউজে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সাবেক ৩৫ সদস্যকে বিভিন্ন বিভাগে চাকরি দেওয়া হয়েছে। তবে সিএনএন’র রিপোর্টার সারা সিদনার ৪০ ইসরায়েলি শিশুর তথ্য প্রচারের ঘটনায় এক টুইট বার্তায় জানান, এই তথ্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমাকে জানানো হয়। কিন্তু পরে তারা এর সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি।

অন্যদিকে, তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সিকে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ৪০ শিশুকে শিরশ্ছেদের কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য তাদের কাছে নেই। এসব ঘটনা প্রবাহকে ‘ডিসইনফরমেশন ওয়ার’ বা ‌‌’গুজব যুদ্ধ’ বললে ভুল হবে?


সূত্র : এস টু জে নিউজ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: