সাইপ্রাসে মসজিদ-কবরস্থানে বেড়েছে হামলা, পার পেয়ে যাচ্ছে উগ্রবাদীরা

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:০৯

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি


সাইপ্রাসের অংশ গ্রিক সিপ্রিয়ট প্রশাসনিক অঞ্চলের মসজিদ, কবরস্থানসহ ইসলামিক নিদর্শনগুলোতে হামলার সংখ্যা ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে। এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন স্বতন্ত্র এই অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা তুর্কি রিপাবলিক অফ নর্দার্ন সাইপ্রাসে (টিএনআরসি) এক শীর্ষ কর্মকর্তা। সংবাদমাধ্যম আনাদোলুর সঙ্গে কথা বলার সময়, সাইপ্রাস ফাউন্ডেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইভিকেএফ) জেনারেল ম্যানেজার ইব্রাহিম বেন্টার এই অঞ্চলের মসজিদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক হামলায় উদ্বেগ জানিয়েছেন।

১৯৭৪ সালে তুরস্ক-গ্রিস যুদ্ধে সাইপ্রাসের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সাইপ্রাস থেকে একটি অংশ তুরস্ক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করে। একেই বলা হয় গ্রিক সিপ্রিয়ট প্রশাসনিক অঞ্চল। তবে এ অঞ্চল স্বাধীন দেশ হিসেবে এখনো স্বীকৃতি পায়নি। গ্রিসের সিপ্রিয়টরা এখনো পুরো দেশকে সাইপ্রাস বলে দাবি করলেও তুর্কিরা এটাকে তুর্কি সাইপ্রাস নামে জানে। এটা সাইপ্রাস এর উত্তর অংশ হওয়ায় এটাকে নর্থ সাইপ্রাসও বলা হয়। নর্থ সাইপ্রাস ও গ্রিক সাইপ্রাস একই সঙ্গে হলেও দুই দেশের সবকিছুই আলাদা। এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের কোনো কিছুরই মিল নেই।

তিনি জানিয়েছেন, `সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হামলা বেড়েছে এবং একটি শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। বেন্টার বলেন, গত শনিবারের একটি ঘটনাকে `খুব ভয়াবহ উল্লেখ করে তিনি বর্ণনা করেন হামলাকারী দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করে মসজিদটি পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন।

মসজিদটি তখন খালি থাকায় বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা এড়ানো গিয়েছে। তিনি গ্রিক সিপ্রিয়ট প্রশাসনের শহরগুলোতে মসজিদ এবং তুর্কি-ইসলামিক নিদর্শনগুলোর ওপর হামলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান।

বেন্টার উল্লেখ করেন, এ অঞ্চলে অনেক গির্জা রয়েছে এবং সাইপ্রাসে অটোমানদের বিজয়ের সাড়ে চারশ বছরে গোটা দ্বীপে ভিন্ন ধর্মের উপর কোন হামলা বা নিপীড়ন হয়নি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রিক সিপ্রিয়ট প্রশাসনের মসজিদ এবং ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভের বিরুদ্ধে অসংখ্য হামলার কথা উল্লেখ করে বেন্টার বলেন, `আমাদেরকে এখনও পর্যন্ত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার বা শাস্তির বিষয়ে জানানো হয়নি।`

`গ্রিক অংশের বা দক্ষিণের প্রশাসন এমন হামলায় প্রতিবাদ করে না । প্রশাসনের এই নমনীয়তা ও নিস্ক্রিয়তা হামলাকারীদের সাহস বাড়ায়। এবং এমনসব ধর্মীয় পবিত্র স্থাপনায় হামলায় কোনো ঝুঁকি নেই এমন অনুভূতি তাদের মধ্যে সৃষ্টি করে।

যদি আক্রমণকারীরা জানত যে তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে, যদি তারা (কর্তৃপক্ষ) এই ধরনের হামলার জন্য কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করত তবে এমন ন্যাক্কারজনক হামলা বন্ধ হয়ে যেত। তিনি উল্লেখ করেন, পবিত্র স্থানে হামলা আন্তঃসাম্প্রদায়িক শান্তি নষ্ট করে।

গত ১০ বছরে ২০টির বেশি মসজিদে হামলা হয়েছে। টিআরএনসির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রেকর্ড অনুযায়ী, গ্রিক সিপ্রিয়ট প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোতে গত দশকে ২০টিরও বেশি মসজিদে হামলা চালানো হয়েছে।

২০১২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত, লিমাসোল শহরের কোপরুলু হাচি ইব্রাহিম আগা মসজিদে অগ্নিসংযোগসহ পাঁচটি হামলা হয়েছে, যেখানে গত শনিবার মোলোটভ ককটেল নিক্ষেপ করা হয়।
গত তিন বছরে তিনটি হামলা হয়েছে। গত ১০ বছরে গ্রিক সিপ্রিয়ট প্রশাসনের ডেনিয়া গ্রামে অবস্থিত একটি মসজিদে দুটি হামলা ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করা হয়।

২০১৩ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির অর্থায়নে পুনঃস্থাপনের সময় দেনা মসজিদে হামলা হয়। ২০১৬ সালে একই মসজিদকে লক্ষ্য করে তিনটি মোলোটভ ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। লারনাকা শহরের অটোমান/তুর্কি কবরস্থানেও সমাধির পাথর ধ্বংস করা হয় এবং সেখানে আবর্জনা ফেলা হয়।

হামলাকারীরা ২০২০ সালে লারনাকার তুজলা মসজিদের আঙ্গিনায় মোলোটভ ককটেল নিক্ষেপ করে, মসজিদের দেয়ালে একটি বাইজেন্টাইন পতাকা ঝুলিয়ে দেয় এবং ইসলামবিরোধী স্লোগান লিখে।

সূত্র : আনাদোলু



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: