নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের পরও সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখেছে নেদারল্যান্ডসের ইসলামিক স্কুলগুলো। এর মধ্যে কয়েকটি দেশসেরা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। ডাচ বার্তা সংস্থার সূত্রমতে, গত ১৯ জুন দেশটির শিক্ষা কর্তৃপক্ষ বছরের সেরা ৪২টি স্কুলের একটি তালিকা প্রকাশ করে। এতে দুটি ইসলামিক স্কুলের নাম রয়েছে। যার একটি আলফেন আ্যাান ডেন রিজন শহরে অবস্থিত আল-নুর স্কুল, অপরটি আমস্টারডামের গৌদে অবস্থিত আল-কলম স্কুল।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সূত্রে আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, মাত্র ৪২ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের নেদারল্যান্ডসে ইসলামিক স্কুলের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। বর্তমানে দেশটির ১২টি অঙ্গরাজ্যে ৬২টি ইসলামিক স্কুল রয়েছে। এসব স্কুলে শুধু প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত পাঠদান করে।
অর্থাৎ সেখানে কেবল শিশুদের জন্য ইসলামী পাঠক্রম রয়েছে। এরপর থেকে ডাচ পাঠক্রমের পাশাপাশি অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে সংক্ষিপ্ত পরিসরে ইসলামী মূল্যবোধ এবং মৌলিক আরবি ভাষা বিষয়ে পড়ানো হয়। ডাচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন হওয়ায় পাঠ্যসূচিতে বিস্তৃত পরিসরে বাইরের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার তেমন সুযোগ নেই। তবে ইসলামিক স্কুল কর্তৃপক্ষ মাধ্যমিক স্তরেও নিজস্ব কারিকুলাম বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।
এসব ইসলামিক স্কুলে প্রায় ২০ দেশের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে থাকে। এর মধ্যে তুর্কি ও মরক্কোর শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কেননা ডাচ মুসলিমদের মধ্যে তাদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি এবং তারাই সবচেয়ে বেশি সময় সেখানে বসবাস করছে। তারা ছাড়াও আরব, আফ্রিকান ও ফার্সিভাষী অনেক শিক্ষার্থী এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ে। এ ক্ষেত্রে নিম্ন আয়ের পরিবারের পরিবহন খরচের কিছু অংশ দেশটির কিছু সিটি কাউন্সিল বহন করে থাকে। অন্যদের পুরো খরচ বহন করতে হয়।
নেদারল্যান্ডসের ইসলামী শিক্ষা নিয়ে একটি গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশ করেছে দেশটির সামাজিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। বইটিতে গবেষক মোহসেন আল জামজামি নেদারল্যান্ডসের ইসলামী শিক্ষার উত্থান ও বিকাশ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাতে ইসলামী শিক্ষাকে ইউরোপে মুসলিম সহাবস্থানের অন্যতম উপকরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই পাঠ্যক্রমে ইউরোপীয় সামাজিক ভিত্তির প্রভাব রয়েছে। ফলে তা একটি নমুনা হিসেবে গ্রহণ করতে বলা হয়। তা ছাড়া অভিবাসীদের মূলকে আঁকড়ে ধরা এবং নতুন প্রজন্মের গুণগত মানের মধ্যে সমন্বয় সাধনকে সমাধান হিসেবে তুলে ধরা হয়।
ডাচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সব নির্দেশনা পালন করলেও এসব প্রতিষ্ঠানকে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। বিশেষত দেশটির কট্টরপন্থী দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে এসব স্কুল বন্ধ এবং নতুন প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমোদন না দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। তবে তাদের এসব দাবি কখনো বাস্তবতার মুখ দেখেনি।
আল-আমানাহ কমিটির তত্ত্বাবধানে ১২টি ইসলামিক স্কুল রয়েছে।
এর প্রধান আবদুল করিম আল-সালিহি জানিয়েছেন, ইসলামিক স্কুলের চ্যালেঞ্জগুলো অনেক সময় মুসলিমদের মধ্য থেকে তৈরি হয়। কারণ ডাচ মুসলিমদের অনেকের ইসলামিক স্কুল সম্পর্কে জানাশোনায় ঘাটতি রয়েছে। ফলে আমরা দুই পক্ষের চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে যাই। ফলে অনেক মুসলিম নিজ সন্তানদের এসব স্কুলে ভর্তি করানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। মুসলিম অভিবাসী ও ইসলামিক স্কুল নিয়ে গির্ট ওয়াইল্ডার্সের নেতৃত্বাধীন পার্টি ফর ফ্রিডমের নেতাদের ঘৃণাত্মক বক্তব্য সবার মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করে। অনেক সময় ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিতকরণের বিষয়েও আপত্তি করে থাকে শিক্ষা কর্তৃপক্ষ। তবে সব কিছুই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এবং তাদের নির্দেশনা অনুসরণ করে সব চ্যালেঞ্জের সমাধান করা হয়।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: