পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য ৫০০ টাকা করে ভাতা বৃদ্ধির যে ঘোষণা দিয়েছেন তাতে ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়েছেন ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা সাফেরি সিদ্দিকিসহ অন্যরা। একইসঙ্গে ওই ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করেছেন ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী এমপি।
২১ আগস্ট, সোমবার বিকেলে কোলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের এক সভায় বক্তব্য রাখার সময়ে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য ৫০০ টাকা করে মাসিক ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে তিনি পুরোহিতদের জন্যও ৫০০ টাকা করে ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণা দেন।
ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য ৫০০ টাকা করে মাসিক ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ইমামদের একটা বড় অংশের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ওই ইস্যুতে ২২ আগস্ট, মঙ্গলবার ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা সাফেরি সিদ্দিকি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী ইমাম সাহেবদের সম্মান না দিয়ে তাদেরকে অপমান করেছেন। মাত্র ৫০০ টাকা ভাতা বাড়ানোর বিষয়টি লজ্জার! কারণ, ওয়াকফ সম্পত্তির আয় থেকে দেওয়া হয়। তিনি দিল্লি, হরিয়ানা, তেলেঙ্গানা, গুজরাট প্রভৃতি রাজ্যে অনেক বেশি টাকা ভাতা দেওয়া হয় বলে দাবি করেছেন। একইসঙ্গে তিনি রাজ্যে যেসব ওয়াকফ সম্পত্তি আছে তার বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের হিসাব দাবি করেছেন।
এ সম্পর্কে পীরজাদা সাফেরি সিদ্দিকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে বলেন, সমস্ত ইমাম সমাজকে কোলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ডেকে তিনি তাদের সম্মান দিলেন না, তাদেরকে অপমান করলেন!
তিনি বলেন, ৫০০ টাকা ভাতা বাড়িয়েছেন, ছি! এটা লজ্জা! ৫০০ টাকা ভাতা, লজ্জা! দিল্লিতে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ভাতা হচ্ছে ১৮ হাজার টাকা, হরিয়ানায় ১৬ হাজার টাকা, তেলেঙ্গানায় ১২ হাজার টাকা, গুজরাটে ১২ হাজার টাকা। আর আপনি এতগুলো ইমাম সাহেবদের ডেকে নিয়ে এসে অপমান করলেন! ৫০০ টাকা ভাতা! আপনি টাকাটা দিচ্ছেন কোথা থেকে? ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে দিচ্ছেন। আমাদের টাকা আপনি আমাদের দিচ্ছেন। আমাদেরকে হাতিয়ার বানিয়ে? কিছু রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে বানিয়ে? ইমাম সাহেবদের একচোখো, একপেশে বানিয়ে দিচ্ছেন? এটা লজ্জা! আমি মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাবো সমস্ত ওয়াকফ সম্পত্তি আপনার নিয়ন্ত্রণে আছে। প্রতি বছরে ওয়াকফ সম্পত্তির কত আয় হয়, কত ব্যয় হয় তার সমস্ত হিসাব আপনি দিন।
ওই ইস্যুতে ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের মিসকিন বানানোর চেষ্টা করবেন না। তাদের হাতে সামান্য কিছু পয়সা ধরিয়ে দিয়ে তাদেরকে মুসলিম সমাজে আপনার প্রতিনিধি বানাবেন না। মুসলিম সমাজে ইমাম-মুয়াজ্জিন যখন আপনি আমি কেউ ছিলাম না তখনও ছিল, আজও আছে, যখন আপনি আমি কেউ থাকব না তখনও থাকবে। ইসলাম সেই শাশ্বত ধর্ম, সেই যেদিন থেকে শুরু হয়েছে, সেদিন থেকে মসজিদ আছে মক্তব আছে, সেদিন থেকে ইমাম আছে, মুয়াজ্জিন আছে। কারও দয়াতে চলেনি বলেও মন্তব্য করেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী এমপি।
উল্লেখ্য ২০১২ সালে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ভাতা প্রদান চালু হয়। এতদিন ইমাম সাহেবরা ২৫০০ টাকা করে মাসিক ভাতা পেতেন। এবার তা বেড়ে হল ৩ হাজার টাকা। মুয়াজ্জিনদের ভাতা ১০০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। কমপক্ষে ৫০ হাজার ইমাম-মুয়াজ্জিন এই ভাতা পেয়ে আসছেন। এ ছাড়া, রাজ্যের প্রায় ৩০ হাজার পুরোহিত মাসে ১ হাজার টাকা করে ভাতা পেয়ে আসছিলেন। এবার থেকে তারা পাবেন ১ হাজার ৫০০ টাকা। এক্ষেত্রে ইমামদের বক্তব্য হল- দীর্ঘ ১২ বছর পর মাত্র ৫০০ টাকা ভাতা বৃদ্ধি করায় তারা অপমানিত হয়েছেন। ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে পর্যাপ্ত ভাতা দিতে অসুবিধা কোথায়? কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য হল টাকাটা আমরাই দিই, ওয়াকফ বোর্ড তা বিতরণ করে থাকে।
সূত্র : পার্সটুডে
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: