মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। একটি শিশুর কাছে প্রথম শিক্ষক হলো তার মা। মায়ের সান্নিধ্যেই একটি শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, নৈতিক, মানবিক, নান্দনিক, আধ্যাত্মিক ও আবেগিক বিকাশ সাধিত হয়। সেই কথার প্রমাণ করলেন ফিলিস্তিনের এক মা।
এই মায়ের কাছেমাত্র দুই বছরে পবিত্র কুনআন হিফজ করেছেন তার ছোট্ট মেয়েটি। ফিলিস্তিনের গাজায় তাদের বসবাস। সারার বাবা-মা পেশায় চিকিৎসক। মাত্র ছয় বছর বয়সে বাবা ও মায়ের তত্ত্বাবধানে কুরআন পাঠ শুরু করে সে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা মুবাশির জানায়, মেয়ের অসামান্য কৃতিত্ব অর্জনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন শিশুর মা বাসমাহ আল-আগা। চিকিৎসা পেশায় যুক্ত থেকেও সব সময় তিনি মেয়ের তত্ত্বাবধান করতেন।
তিনি আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, মেয়ের কুরআন হিফজ সম্পন্ন হওয়ায় তিনি যতটা আনন্দিত হয়েছেন, এমন আনন্দ তিনি জীবনে কখনো অনুভব করেননি।
বাসমান আরো জানান, তিনি ও তার স্বামী গাজা অঞ্চলের হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল হওয়ায় সেখানে তাদের কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তদুপরি তারা ঘরোয়া কাজের সময় মেয়ের কুরআন পাঠ শুনতেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করতেন।
তিনি বলেন, ‘মেয়েকে উৎসাহ দিতে আমিও তার সঙ্গে কুরআন মুখস্ত করা শুরু করি। কিন্তু সে আমার চেয়ে অনেক এগিয়ে যায়। বিষয়টি আমাকে অনেক বেশি আনন্দ দেয় ও অনুপ্রেরণা জোগায়।
মাদরাসায় যাওয়ার আগে সারাহ প্রথমে নুরানি কায়দা পড়া শুরু করে। এরপর কুরআন মুখস্ত শুরু করে। প্রতিদিন সে আধা পৃষ্ঠা বা এক পৃষ্ঠা মুখস্ত করত। এরপর ধীরে ধীরে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। একপর্যায়ে সে এক দিনে ১০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত মুখস্ত করে।
কুরআন মুখস্ত সম্পন্ন হওয়ায় আনন্দের কথা জানায় সারাহ। অনেক কষ্ট ও ক্লান্তির পর বাবা-মাকে সম্মানের মুকুট পরিয়ে দিতে পেরে সে পুলকিত। সে বলে, ‘সব সময় সে তার মাকে বলত, একদিন তাদের সব কষ্ট ও ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। তখন তারা অনেক আনন্দ অনুভব করবে। আল্লাহ তার মায়ের কোনো প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে দেবেন না।’
সারাহর বাবা জামিল আল-আগা জানান, কুরআন হিফজ প্রকল্পের শুরু হয়েছিল আরো অনেক আগ থেকে। যখন তিনি জীবনসঙ্গী হিসেবে একজন উত্তম নারীকে বেছে নিয়েছিলেন। মূলত তার স্ত্রী সন্তানদের কুরআন শিক্ষার পুরো বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এখানে ক্ষান্ত হব না। সারাহর ছোট বোনরাও কুরআন হিফজ শুরু করেছে। আমার আশা, আমার সব মেয়েই কুরআনের হাফেজ হবে। যেন কিয়ামতের দিন রাসুল সা. তাদের নিয়ে গর্ব করতে পারেন।’
সূত্র : আলজাজিরা মুবাশির
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: