শর্তসাপেক্ষে আসাদের সাথে আলোচনায় বসতে রাজি এরদোয়ান

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১৯ জুলাই ২০২৩ ১৯:৪৩

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ : সংগৃহীত ছবি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ : সংগৃহীত ছবি


সিরিয়ায় সুন্নি মুসলিমদের উপর গণহত্যা চালানো খুনি প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সাথে আলোচনায় বসতে রাজি আছেন বলে জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। ১৭ জুলাই, সোমবার উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রে ৩ দিনের সফরে বের হওয়ার আগে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান।

এরদোয়ান বলেন, তুরস্ক কখনো কারো জন্য আলোচনার দরজা বন্ধ রাখে না। বাশার আল আসাদের জন্য আলোচনার দুয়ার খোলা রয়েছে। আমরা তার সাথে আলোচনায় বসতে রাজি। প্রয়োজনে আমরা (সিরিয়া, রাশিয়া, ইরান ও তুরস্ক) ৪ দেশের মধ্যে একটি শীর্ষ সম্মেলনেরও আয়োজন করবো। তবে তারা আমাদের সম্পর্কে কি ভাবছে এটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তুরস্ক সিরিয়া থেকে তুর্কি সেনা প্রত্যাহারের শর্ত মেনে নিবে না। এতে আলোচনাও ফলপ্রসূ হবে না।

উল্লেখ্য, তুরস্ক আসাদ সরকার বিপক্ষীয়দের সবচেয়ে বড় সামরিক ও রাজনৈতিক মিত্রে পরিণত হয়েছে। এমনকি তুর্কি সীমান্ত সংলগ্ন সিরিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় সামরিক ঘাঁটিগুলোও তুরস্কের দখলে।

উত্তর সিরিয়ায় তারা কয়েক ডজন সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করার পাশাপাশি হাজার হাজার তুর্কি সেনা মোতায়েন করে রেখেছে। রাশিয়া সমর্থিত খুনি আসাদের বাহিনী থেকে বিধ্বস্ত আরব দেশটির উত্তরপশ্চিমাঞ্চলকে নিরাপদ রেখেছে এসব তুর্কি সেনারা। বেশ কয়েকবার দখলের পায়তারা হলেও ওই বাহিনীকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয় তুরস্ক।

ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত ও মৃত্যুপুরী সিরিয়ার বিশেষত উত্তরাঞ্চল হয়ে উঠে সাধারণ সিরিয়দের একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়স্থল। স্বৈরাচারী খুনি শিয়া আসাদের বিরোধীরাও এই অঞ্চলে নিজেদের নিরাপত্তা খুঁজে পায়।

এবছরের শুরুতে এরদোয়ান বলেছিলেন, শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আসাদের সাথে দেখা করার সম্ভাবনা রয়েছে তার। কিন্তু মার্চ মাসে আসাদ ঘোষণা দেন যে, তুর্কি দখলদারিত্বের অবসান না ঘটলে এরদোয়ানের সাথে আলোচনার কোনো মানেই হয় না।

এবিষয়ে তুরস্কের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, দেশের দক্ষিণাঞ্চল সুরক্ষিত রাখতেই সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সেনা মোতায়েন করে রেখেছে আঙ্কারা। কারণ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ওয়াপিজির কার্যক্রম সিরিয়া থেকে পরিচালিত হয়। যা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পিকেকের সিরিয় শাখা। আর পিকেকে এমন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যারা ১৯৮৪ সাল থেকে তুরস্কের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ পরিচালনা করে যাচ্ছে। তাদের হামলায় এখন পর্যন্ত হাজার হাজার নিরীহ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে।

এরদোয়ান বলেছিলেন, আমরা সেখানে দখলদারিত্বের উদ্দেশ্যে নয় বরং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান করছি। ক্রমাগত সন্ত্রাসবাদী হামলার শিকার হতে থাকা সীমান্ত থেকে কোন যুক্তিতে আমরা সেনা সরিয়ে নিতে পারি?

নজিরবিহীন গণহত্যা শুরুর পর সিরিয়ার সাথে আরব দেশগুলোর সম্পর্কচ্ছেদ ঘটেছিলো। সম্প্রতি চীনের মধ্যস্থতায় খুনি আসাদ বাহিনীকে সমর্থন দেওয়া শিয়া রাষ্ট্র ইরান ও আসাদ বিরোধীদের সমর্থন দেওয়া রাষ্ট্র সৌদির মাঝে বিরোধ নিষ্পত্তি হলে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির সাথে তুরস্ক সহ আরব দেশগুলোর সম্পর্ক পুন:স্থাপনের পথ উন্মুক্ত হয়।

মে মাসে অনুষ্ঠিত আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনে সিরিয়ার সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের প্রেক্ষিতে গত ১৬ জুলাই, রবিবার ইরাকী প্রধানমন্ত্রীও ২০১১ সালের পর থেকে প্রথমবারের মতো সিরিয়া সফরে যান এবং আসাদ সরকারের সাথে বৈঠক করেন। তবে তুরস্কের সাথে দেশটির উত্তেজনা এখনো রয়ে গিয়েছে, যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। এজন্য ২০২২ সালের শেষ দিকে মস্কোতে বৈঠকেও মিলিত হয়েছিলো দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

সূত্র: আল জাজিরা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: