বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার স্রেব্রেনিকা গণহত্যার পর থেকে বিভিন্ন সময় গণকবরে পাওয়া যায় নিহতদের দেহাবশেষ। ১৯৯৫ সালের ১১ জুলাই সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ডে আট হাজারের বেশি মুসলিম নিহত হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর গণহত্যার বার্ষিকীতে মরদেহ সংগ্রহ করে তা দাফন করা হয়। এখন পর্যন্ত ছয় হাজার ছয় শর বেশি মানুষের দেহাবশেষ সংগ্রহ করে পুনরায় দাফন করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (১১ জুলাই) গণহত্যার ২৮তম বার্ষিকীতে ৩০ জনের দেহাবশেষ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তের পর দাফন করা হয়।
গণহত্যায় মারা যাওয়া বাবাকে ২৮ বছর পর শনাক্তের পর দাফন করতে সক্ষম হন পুত্র মিরসাদা মারদজিক। তিনি বলেন, ‘তার বাবার দেহাবশেষের মধ্যে খুবই কম হাড় উদ্ধার করা গেছে। কারণ তাকে দ্রিনা নদীর কাছে একটি গণকবরে পাওয়া গিয়েছিল।
হয়তো নদী তাকে ধুয়ে ফেলেছে।’
নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে আসাদের একজন রামিজা গান্দিক। তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, নিহত হওয়া অসংখ্য মানুষকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি কিছু লোক এখনও (স্রেব্রেনিকার) গণহত্যাকে অস্বীকার করে।
১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ স্রেব্রেনিকাকে ‘নিরাপদ এলাকা’ ঘোষণা করে। জাতিসংঘ ঘোষিত অঞ্চলটি জেনারেল রাটকো ম্লাডিকের নেতৃত্বাধীন সৈন্য দখল করে সেখানে গণহত্যা চালায়। সার্ব বাহিনী একটি রাষ্ট্র গঠন করতে বসনিয়ান মুসলিম ও ক্রোয়াটদের কাছ থেকে এলাকা দখলের চেষ্টা করে। ১৯৯৫ সালে ডাচ শান্তিরক্ষী সৈন্যদের উপস্থিতিতে স্রেব্রেনিকায় ৮ হাজারের বেশি মুসলিমকে হত্যা করা হয়। সেদিন পুরুষ ও বালকদের বেছে বেছে আলাদা করে হত্যা করে তাদের গণকবর দেওয়া হয়।
পরবর্তী সময়ে সার্ব বাহিনীকে যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
স্রেব্রেনিকার প্রায় ১৫ হাজার নিরস্ত্র বাসিন্দা পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু সার্ব সৈন্যরা তাদের ধরে ছয় হাজারের বেশি মানুষকে নির্দয়ভাবে হত্যা করে। বসনিয়ার ৫৭০টি স্থানে নিহতদের কঙ্কাল পাওয়া যায়। ২০০৭ সালে হেগের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) স্রেব্রেনিকায় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে বলে রায় দেয়। ২০২১ সালে জাতিসংঘের ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় গণহত্যা, নিপীড়ন, মানবতাবিরোধী অপরাধসহ অন্যান্য যুদ্ধাপরাধের কারণে ম্লাডিকের যাবজ্জীবন সাজা বহাল রাখেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: