
মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকা - মুনা’র সাউথ জোনে এক ঐতিহাসিক দিন উদযাপিত হলো। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) দিনব্যাপী ভার্চুয়াল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কর্মশালা ও সাক্ষাৎকার শেষে মোট ১৯ জন ভাই-বোন ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইমাম দেলাওয়ার হোসাইনের কাছ থেকে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মুনার সদস্যপদ অর্জন করেছেন।
শপথগ্রহণের পূর্বে সদস্য হিসেবে গুণাবলী যাচাই:
সকাল থেকে শুরু হওয়া দিনব্যাপী কর্মশালায় যোগ্যতা যাচাই, ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সম্ভাব্য সদস্যদের প্রস্তুতি মূল্যায়ন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের চ্যাপ্টার থেকে আগত ভাই–বোনেরা এই কর্মশালায় অংশ নেন।
এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সম্মানিত ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইমাম দেলাওয়ার হোসাইন প্রত্যেক সদস্যপ্রার্থীর সাথে সরাসরি মতবিনিময় করেন। তিনি আলাদাভাবে প্রত্যেককে যাচাই করে নিশ্চিত হন—
- তারা মুনার নির্ধারিত পাঠ্যক্রম সম্পূর্ণ করেছেন কি না,
- কোরআন, হাদিস ও ইসলামী সাহিত্যের নির্ধারিত সিলেবাস শেষ করে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করেছেন কি না,
- নির্দিষ্ট সংখ্যক সূরা, আয়াত ও হাদিস মুখস্থ করেছেন কি না,
- নির্দিষ্ট সংখ্যক দারস তৈরী করেছেন কিনা এবং পঠিত বই সমূহের প্রয়োজনীয় নোট প্রস্তুত করেছেন কিনা,
- মুনার সংবিধান ও কর্মপদ্ধতি গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছেন কি না,
- সহযোগী সদস্য হিসেবে সব শর্ত পূরণ করেছেন কি না,
- এবং সর্বোপরি, সক্রিয় সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনে আন্তরিকভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ কি না।
প্রত্যেক ভাই–বোনের যোগ্যতা, প্রতিশ্রুতি ও প্রস্তুতি সম্পর্কে আশ্বস্ত হওয়ার পর সম্মানিত ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট সংবিধান মোতাবেক শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। শপথবাক্য পাঠের মাধ্যমে তিনি সবাইকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুনার পূর্ণাঙ্গ সদস্য হিসেবে ঘোষণা করেন। শপথ পাঠের এই মুহূর্তটি ছিল অতীব তাৎপর্যপূর্ণ, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে সংযুক্ত নবাগত ভাই-বোনেরা ন্যাশনাল প্রেসিডেন্টের নির্দেশে একযোগে দাঁড়িয়ে যান এবং শপথ পাঠ করেন। এই শপথ পাঠের মধ্য দিয়ে পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে এক বিশেষ আধ্যাত্মিক আবহ সৃষ্টি হয়, যা অংশগ্রহণকারীদের হৃদয়ে এক অনন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে গেঁথে যায়।
শপথ গ্রহণকারী নতুন সদস্যবৃন্দ:
১. আফিফা মারিয়াম – আটলান্টা, জর্জিয়া
২. সুমন গাজী – আটলান্টা, জর্জিয়া
৩. বিলকিস খাতুন – আটলান্টা, জর্জিয়া
৪. মোহাম্মদ আলম (আল-আমিন) – ওকলাহোমা সিটি, আলাবামা
৫. ড. আল ইমরান – আলাবামা অধ্যায় (লেক চার্লস, লুইজিয়ানা)
৬. মো. মামুন হাবিব – মন্টগোমারি, আলাবামা চ্যাপ্টার
৭. মো. মুজাহিদুল ইসলাম – মন্টগোমারি, আলাবামা চ্যাপ্টার
৮. মো. ফাহিম সরকার ঈশাত – অবার্ন, আলাবামা চ্যাপ্টার
৯. মাহবুবা ভূঁইয়া – পেনসাকোলা, ফ্লোরিডা (আলাবামা চ্যাপ্টার)
১০. উম্মে সালমা – নিউ অরলিন্স, লুইজিয়ানা (আলাবামা)
১১. মোতাহারা হাবিব – ডালাস ওয়েস্ট চ্যাপ্টার, টেক্সাস
১২. আরমান সাইফুল – হিউস্টন চ্যাপ্টার, টেক্সাস
১৩. আব্দুর মান্নান – হিউস্টন চ্যাপ্টার, টেক্সাস
১৪. ইসরাত জাহান – হিউস্টন চ্যাপ্টার, টেক্সাস
১৫. মোহাম্মদ আল মাহফুজ – ফ্লোরিডা নর্থ চ্যাপ্টার
১৬. জিল্লুর রহমান – ফ্লোরিডা নর্থ চ্যাপ্টার
১৭. মিজানুর রহমান – ডালাস ইস্ট চ্যাপ্টার, টেক্সাস
১৮. ইঞ্জি. মুস্তাক জামান – ডালাস ইস্ট চ্যাপ্টার, টেক্সাস
১৯. চৌধুরী হাসনা সিদ্দিকা (সাকি) – ডালাস ইস্ট চ্যাপ্টার, টেক্সাস
তাৎপর্য
অ্যাসোসিয়েট মেম্বার থেকে পূর্ণ সদস্যে উত্তরণ মুনার সাংগঠনিক কাঠামোয় এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কারণ এটি কেবল আনুষ্ঠানিক সদস্যপদ অর্জনের প্রক্রিয়া নয়, বরং এক প্রকার শৃঙ্খলাবদ্ধ দায়বদ্ধতার অঙ্গীকার। শপথ গ্রহণের মাধ্যমে প্রত্যেক সদস্য কেবল ব্যক্তিগতভাবে ইসলামী জীবনচর্চার প্রতিশ্রুতি দেন না, বরং সমষ্টিগতভাবে মুনার ভিশন ও মিশনের অংশীদার হয়ে ওঠেন।
মুনা একটি সুসংগঠিত, নিয়মতান্ত্রিক ও লক্ষ্যনির্ভর দাওয়াহ সংগঠন। তাই অ্যাসোসিয়েট মেম্বার থেকে মেম্বারে উন্নীত হওয়ার এই ধাপ সংগঠনের জন্য দক্ষ, প্রতিশ্রুতিশীল এবং পরীক্ষিত কর্মীবাহিনী নিশ্চিত করে। এটি সংগঠনের অগ্রযাত্রাকে যেমন সুদৃঢ় করে, তেমনি নতুন সদস্যদেরকে নেতৃত্বের ধারায় যুক্ত করে ভবিষ্যতের দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত করে।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান তাই কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং সদস্যদের যোগ্যতা যাচাই, প্রতিশ্রুতি নবায়ন এবং সংগঠনের উদ্দেশ্য পূরণে সর্বাত্মক সহযোগিতার এক অঙ্গীকারনামা। মুনার অগ্রযাত্রায় এই ধাপের মধ্য দিয়েই সদস্যরা ইসলামী দাওয়াত ও সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অবদান রাখার উপযুক্ত অবস্থানে পৌঁছে যান।
সার্বিক প্রত্যাশা
মুনা মনে করে, নতুন সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি সংগঠনের কর্মীবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে দাওয়াত, শিক্ষা, সেবা ও কল্যাণমূলক কর্মসূচির বাস্তবায়নে নতুন গতি সঞ্চার করবে। শপথগ্রহণের মাধ্যমে যুক্ত হওয়া এই কর্মীবাহিনী মুনার দীর্ঘমেয়াদি ভিশন—আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে সক্রিয় ভূমিকা রাখা—অর্জনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
সদস্যরা মুনার ঘোষিত লক্ষ্য ও কর্মপদ্ধতির আলোকে স্থানীয় পর্যায়ে শিক্ষা, তারবিয়াত, দাওয়াত, মানবসেবা ও সামাজিক কল্যাণমূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হবেন। এর ফলে মুনার কাঠামো হবে আরও মজবুত এবং সামগ্রিক অগ্রযাত্রা পাবে নতুন গতি।
সমাপনী অভ্যর্থনা
পরিশেষে মুনার সাউথ জোনের প্রেসিডেন্ট ড. আমীরুল ইসলাম, ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রফেসর নজরুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ মুকীম নতুন শপথ গ্রহণকারী ১৯ জন সদস্যকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, নতুন এই কর্মীবাহিনী সংগঠনে নতুন রক্ত সঞ্চার করবে এবং সাউথ জোনকে আরও প্রাণবন্ত ও কার্যকর করে তুলবে। তারা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সম্মানিত ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইমাম দেলোয়ার হোসেনের প্রতি, যিনি তাঁর মূল্যবান সময় ব্যয় করে দিনব্যাপী কর্মশালা পরিচালনা, প্রত্যেক সদস্য–প্রত্যাশীর যোগ্যতা যাচাই এবং শেষ পর্যন্ত তাদের শপথ পাঠ করিয়ে সদস্যপদ অনুমোদন প্রদান করেছেন।
সংগঠনের পক্ষ থেকে সকলকে নবাগত সদস্যদের জন্য আন্তরিক দো‘আ করতে আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে তারা তাদের অঙ্গীকার অনুযায়ী দায়িত্বশীল ও কর্মমুখর ভূমিকা রাখতে পারেন এবং মুনার ভিশন–মিশন বাস্তবায়নে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন।
অহিদুল ইসলাম
টেক্সাস থেকে
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: