বাদশাহ আলমগীরের অমর কীর্তি যে ফতোয়া গ্রন্থ

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:১৯

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি


ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী বাদশাহ আওরঙ্গজেব আলমগীরের অমর কীর্তি। মোগল সম্রাটদের ভেতর তিনি ছিলেন সবচেয়ে ধর্মপরায়ণ শাসক।

বাদশাহ আওরঙ্গজেব ও ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী নিয়ে শায়খ তানতাভি বলেছেন, ‘তিনিই প্রথম (সম্রাট), যিনি একই কিতাবে ইসলামী শরিয়তের বিধি-বিধান সংকলনের কাজ করেছেন, যা পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রের সংবিধান হিসেবে গৃহীত হয়। তাঁরই নির্দেশ ও তত্ত্বাবধানে একটি ফাতাওয়ার কিতাব লেখা হয়, যাকে তাঁর নামের দিকে সম্পৃক্ত করে ‘ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী’ বলা হয়। পরবর্তী সময়ে এটি ‘আল ফাতাওয়া আল হিন্দিয়া’ নামে প্রসিদ্ধ হয়, যা আহকামবিষয়ক ইসলামী ফিকহের এক অনবদ্য এবং অত্যন্ত সুবিন্যস্ত গ্রন্থ।’ (রিজালুম মিনাত তারিখ, পৃষ্ঠা ২৩৬)

আবুল ফজল মুরাদি (রহ.) বাদশাহ আলমগীর ও ফাতাওয়া আলমগীরীর ব্যাপারে বলেন, ‘এবং তিনি তাঁর দেশের হানাফি আলেমদের নির্দেশ দিলেন, যেন তাঁর নামে শরিয়তের বিধি-বিধান সম্পর্কিত বিষয়ে হানাফি মাজহাবের অধিক গ্রহণযোগ্য (রাজেহ) ফাতাওয়া গ্রন্থ সংকলন করা হয়। অতঃপর তাঁরা তা বহু খণ্ডে সংকলন করার পর নাম দিলেন ‘ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী’। তা হিজাজ, মিসর, সিরিয়া ও রোমের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাদৃত হলো। এবং এর দ্বারা উম্মতরা ব্যাপক উপকৃত হলো। এই কিতাব (বিভিন্ন দেশের) মুফতিদের প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হলো।” (সিলকুদ দুরার ফি আয়ানিল করনিস সানি আশার, আবুল ফজল মুরাদি : ৪/১১৩)

ফাতাওয়া আলমগীরী বা ফাতাওয়া হিন্দিয়া মূলত ইসলামী শরিয়তের বিভিন্ন বিধি-বিধানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হানাফি মাজহাবের জাহির’র রিওয়াইয়া (প্রকাশ্য মত) এবং রাজেহ (অধিক সমর্থনপ্রাপ্ত) মত গ্রহণ করেছে। হানাফি মাজহাবের প্রখ্যাত ফিকহি কিতাব ‘হিদায়া’-এর বিন্যাসের আলোকে বিন্যস্ত করা হয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে নাদের তথা বিরল ও বিচ্ছিন্ন মতও উল্লেখ করা হয়েছে। এই কিতাব সংকলনের কাজ করেন প্রায় দুই হাজার আলেম। (আস সাকাফাতুল ইসলামিয়া ফিল হিন্দ, শায়খ আবদুল হাই আল হাসানি, পৃষ্ঠা ১১০-১১১)

ফাতাওয়া হিন্দিয়ার ভূমিকায় বলা হয়েছে, আওরঙ্গজেব (রহ.) ৫০০ ফকিহ আলেমকে নিয়োগ দেন। তাঁদের মধ্যে ৩০০ জন দক্ষিণ এশিয়া, ১০০ জন ইরাক এবং ১০০ জন হিজাজ থেকে আগত। দিল্লি ও লাহোরে সংকলনকর্মে শেখ নিজাম বোরহানপুরী (রহ.) দলের নেতৃত্ব দেন।

তাঁদের আট বছরব্যাপী পরিশ্রমের মাধ্যমে ফাতাওয়া আলমগীরী প্রণীত হয়। এই গ্রন্থে বিভিন্ন সম্ভাব্য পরিস্থিতির সাপেক্ষে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, দাস, যুদ্ধ, সম্পদ, আন্তর্ধর্মীয় সম্পর্ক, বিনিময়, কর, অর্থনীতি ও অন্যান্য আইন এবং আইনি নির্দেশনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/৩)

আরবি ভাষায় লিখিত ছয় খণ্ডে সমাপ্ত এই ফতোয়া গ্রন্থটির উর্দু, ফারসিসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তৎকালীন উপমহাদেশের সর্বত্র বিচারালয়ে এই গ্রন্থ অনুসৃত হতো। (ইসলামী বিশ্বকোষ ১৪/৫৫৮-৫৬৪)



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: