পবিত্র কোরআনের প্রতি মুগ্ধ ছিলেন আধুনিক রুশ সাহিত্যের জনক

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২০ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:২১

আলেকজান্ডার সের্গেইয়েভিচ পুশকিনের কাল্পনিক ছবি : সংগৃহীত ছবি আলেকজান্ডার সের্গেইয়েভিচ পুশকিনের কাল্পনিক ছবি : সংগৃহীত ছবি

রাশিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি এবং আধুনিক রুশ সাহিত্যের জনক আলেকজান্ডার সের্গেইয়েভিচ পুশকিন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার। পুশকিনের সংক্ষিপ্ত জীবনে লেখা সাহিত্য বৈচিত্র্যে ভরপুর। ক্লাসিক্যাল ওড, রোমান্টিক কবিতা, প্রেমের কবিতা, রাজনীতির কবিতা, ঐতিহাসিক নাটক, জীবনমুখী গদ্য, উপন্যাসিকা, ছোটগল্প, রূপকথা, ভ্রমণকথা, কাব্যিক উপন্যাসসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন তাঁর সাহিত্য।

আলেকজান্ডার পুশকিনকে বলা হয় আধুনিক রুশ ভাষার গোড়াপত্তনকারী। তিনি রাশিয়ার ক্লাসিক কবিতার উচ্চমার্গীয় ভাষা ত্যাগ করেন এবং অতীতের কাব্যশৈলীর ভাষা আর মানুষের মুখের প্রাত্যহিক ভাষার মাঝখানের বিভাজন তুলে ফেলেন।
১৭৯৯ সালের ৬ জুন রাশিয়ার মস্কোতে একটি অভিজাত পরিবারে পুশকিন জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম ছিল সের্গেই লভোভিচ পুশকিন আর মায়ের নাম নাদেজদা (নাদিয়া) ওসিপোভনা গ্যানিবাল।

অমুসলিম হয়েও সত্য ও সুন্দরের প্রতি টান ছিল। একসময় সত্যানুসন্ধানী লেখক হয়ে ওঠেন। তিনি ইসলামকে পড়তে শুরু করেন।

পুশকিন ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে রুশ অনুবাদে পবিত্র কোরআন অধ্যয়ন করেন। ফরাসি ভাষায়ও তিনি কোরআন পড়েছিলেন। সেই সময় তিনি তাঁর ভাইকে একটি চিঠি লিখেছিলেন।

সেখানে লেখা ছিল : ‘আমি কোরআনের শব্দ নিয়ে ব্যস্ত।’কিন্তু পুশকিন শুধু কোরআনের অনুবাদ পড়েই সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি আরবি ভাষায় পবিত্র কোরআনের তিলাওয়াত শোনার আগ্রহ পোষণ করতেন। ইসলাম নিয়ে পড়তে পড়তে কোরআন ও নবীজির সিরাত দ্বারা বেশ প্রভাবিত হয়েছিলেন।

পুশকিন মুসলিমদের খুব কাছাকাছি অবস্থান করেছিলেন। মুসলিমদের সঙ্গে তাঁর কথোপকথন হতো। মুসলমানদের প্রার্থনা, তাদের ওঠাবসা, আচার-আচরণ—সব কিছু খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তিনি তাঁর অনেক কবিতায় সম্মানের সঙ্গে ইসলাম ও মুসলমানদের কথা উল্লেখ করেছেন।

তাঁর এক কবিতায় ফিলিস্তিনের কথাও উল্লেখ করেছেন। তাঁর কোরআন অধ্যয়নের পরবর্তী রচনায় মুসলিম জীবন ও সংস্কৃতির প্রতি মুগ্ধতার নিদর্শন পাওয়া যায়। কোরআনের ছাপ ও ছায়া তাঁর নানা কবিতায় প্রতিবিম্বিত হয়। পবিত্র কোরআন ও নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ছিল। মানবিক মর্যাদার প্রতি সম্মান জানানো, পার্থিব জীবনের ভোগ-বিলাসে বিলীন হওয়া, কিয়ামতের ভয়াবহতাসহ নানা রকম কোরআনি ভাবনা তিনি নিজের কবিতায় ফুটিয়ে তুলেছেন।

তিনি এক কবিতায় কোরআনের প্রতি তাঁর মুগ্ধতার কথা স্বীকার করেন। তিনি লিখেছেন, ‘কোরআনের সৌন্দর্যে আমি প্রশান্তি খুঁজে পাই।’ Podrayhaûya Quran তাঁর এক অনবদ্য কবিতা সংকলন। Ants Oras-এর অনুবাদে ইংরেজিতে তা প্রকাশিত হয় imitations of the koran নামে। তাঁর এই দীর্ঘ কবিতা ১৭৪ পঙক্তি দিয়ে গঠিত। ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে এটি প্রকাশিত হয় ।

পুশকিনের এই কবিতার ভাষা অত্যন্ত কঠিন। তাঁর নিজ হাতে লেখা এই কবিতার পাণ্ডুলিপির কয়েকটি পাতা সংরক্ষিত আছে, যা থেকে মনে হয় তিনি প্রথমবারেই এটির চূড়ান্ত রূপ দিয়েছেন। কেননা এখানে তেমন কোনো কাটাকাটি কিংবা সংশোধন দেখতে পাওয়া যায় না। কখনো কখনো কিছু শব্দ ঠিক কী অর্থ ব্যবহার করেছেন তা বোঝাও যায় না। এখানে ছন্দের বৈচিত্র্য অত্যন্ত ব্যাপক, কিন্তু ছন্দের প্রচলিত নিয়ম-কানুন অনুসরণ করা হয়নি। বর্ণনাভঙ্গি ও বক্তব্যে নাটকীয়তা বিদ্যমান এবং অনেক ক্ষেত্রে বক্তব্যের তাৎক্ষণিক মোড় পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। অথচ পুশকিনের অন্যান্য কবিতার ভাষা তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ।

এই কাব্যে ইসলামের ভাবধারা তীব্রভাবে ফুটে ওঠে। এর ওপর দস্তয়েভস্কি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, ‘পুশকিনের এই কাব্যে কি আমরা একজন প্রকৃত মুসলিমকে দেখতে পাই না? কোরআন, তরবারি ও একটি দৃঢ়বিশ্বাসের শক্তি ও মহিমা দেখতে পাই না?’ সরলরেখা প্রকাশন থেকে ২০২১ সালে পাদরাঝানিয়া কারানু (আল-কোরআনের অনুকরণ) নামে এর বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয়।

১৮২০-২১ সালে তিনি লেখেন The Prisoner of the Caucasus কাব্যগ্রন্থ। প্রকাশিত হয় ১৮২২ সালে। ১৮২১ থেকে ১৮২৩ সালের মধ্যে রচনা করেন Fountain of Bakhchisarai. পুশকিনের বিখ্যাত এক কবিতা ‘পয়গম্বর’। A Z Foreman-সহ অনেকেই একে The Prophet নামে অনুবাদ করেছেন। মহানবীর ওপর ওহি নাজিলের বিষয় ও তাঁর অন্তরলোকের বিষয়টি মহানবীর জবানিতে পুশকিন তাঁর এ কবিতায় এনেছেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: