সোহরাব রোস্তম – মহাকবি আবুল কাসেম ফেরদৌসী

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২২ আগস্ট ২০২৩ ১২:৪০

সোহরাব রোস্তম – মহাকবি আবুল কাসেম ফেরদৌসী : সংগৃহীত ছবি সোহরাব রোস্তম – মহাকবি আবুল কাসেম ফেরদৌসী : সংগৃহীত ছবি

গল্প - সোহরাব রোস্তম 
লেখক - মহাকবি আবুল কাসেম ফেরদৌসী
অনুবাদক - মমতাজউদদীন আহমেদ

পর্ব-১

ইরানের পরাক্রমশালী রাজা ফেরিদুর কনিষ্ঠপুত্র রাজা ইরিজির কন্যা পরীচেহেরের পুত্র শাহ মনুচেহের যখন ইরানের রাজা হলেন তখন তাঁর সৈন্যদলে নামকরা বীর যোদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন শাম নামে একজন বীর যোদ্ধা। শাম বহু যুদ্ধে জয়লাভ করেছেন, কিন্তু তাঁর কোনো পুত্রসন্তান নেই। তাই মনে অনেক দুঃখ। পুত্রের আশায় বীর শাম দেবতার মন্দিরে মাথা ঠুকে মরেন। অবশেষে দেবতার আশীর্বাদে বীর শাম এক পুত্র লাভ করলেন। পুত্রের নাম রাখলেন জাল।

বলিষ্ঠদেহ জাল দেখতে সুন্দর কিন্তু তার মাথার সব চুল ধবধবে সাদা। সাদা রঙের চুলওয়ালা ছেলে অভিশাপ ডেকে আনতে পারে। এইরকম নানা আশঙ্কার কথা শুনে শাম নিজের হাতে নিজের পুত্রকে ফেলে এলেন আলবুরুজ পর্বতে। কিন্তু দেবতারা ছিল শিশু জালের প্রতি দয়াশীল। ঈগল পাখির মতো ঠোঁট এবং সিংহের মতো পা-বিশিষ্ট সি-মোরগ পাখি উড়ে এসে ঠোঁটে ঝুলিয়ে জালকে নিয়ে গেল। জাল পাখির বাসায় বড় হতে লাগল।

পুত্রকে ফেলে এসে বীর শাম পুত্রশোকে কাতর হয়ে দিনাতিপাত করছিলেন। তিনি আবার দেবতার মন্দিরে ছেলের জন্য মাথা ঠুকতে লাগলেন। সি-মোরগ পাখি জালকে ফেরত দিয়ে গেল এবং যাবার সময় নিজের পাখনা থেকে একটি পালক ছিঁড়ে উপহার দিয়ে বলল-‘বিপদের সময় এ পালকটি আগুনে তাতালেই আমি সাহায্যের জন্য ছুটে আসব’।

বাদশাহ মনুচেহের কিশোর জালকে দেখে খুশি হলেন। জালকে উপহার দিলেন তেজি ঘোড়া এবং শামকে দিলেন জাবুলিস্তানের শাসনভার। ক্রমে ক্রমে জাল অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠল। পিতা শাম গেলেন রাজার আদেশে মাজেন্দ্রানের দৈত্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে করতে। যুবক জাল জাবুলিস্তানের শাসনভার পরিচালনা করছে।

একবার যুবক জাল গেলেন কাবুল-রাজা মেহেরাবের রাজ্যে বেড়াতে। রাজা মেহেরাবের সুন্দরী কন্যা রুদাবার সঙ্গে প্রণয় হলো জালের এবং অবশেষে সকলের সম্মতি নিয়ে জাল ও রুদাবার বিবাহ সম্পন্ন হলো।

আনন্দে দিন কাটে নব দম্পতির। কিছুদিনের মধ্যে রুদাবারের হলো কঠিন অসুখ। কত ওষধ, বদ্যি, কিন্তু অসুখ সারে না। জাল তখন সি-মোরগের পালক ধরল আগুনের তাপে। সি-মোরগ উড়ে এসে হাজির হলো। সি-মোরগ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে রোগিণীর রোগ পরীক্ষা করে বলল-ওহে ভাগ্যবান জাল তুমি অতি সত্বর পিতা হতে চলেছ। তোমার পত্নী রুদাবা এমন এক সন্তানের মা হতে চলেছে, যে সন্তানের নাম পৃথিবীতে খ্যাত হবে তার বীরত্ব ও সাহসের গুণে।’

সি- মোরগের কথা মিথ্যা হবার নয়। জাল এক শক্তিমান এবং বলবান পুত্রসন্তান লাভ করলেন। এই ছেলেই মহাবীর রোস্তম। ইরানের জাতীয় ইতিহাসে যার নাম এখনও অক্ষয় অমর হয়ে আছে।

শৈশবেই রোস্তমের মধ্যে বীরত্বের লক্ষণ ফুটে উঠল। সে তেজি ঘোড়ায় চড়ে দুরন্তবেগে ছুটতে ভালোবাসে, আর ভালোবাসে গদা ও গর্জ নিয়ে যুদ্ধে করতে। সামান্য খাদ্যে তার ক্ষুধা মেটে না। এক দাইমায়ের দুধপান করে তার তৃষ্ণা নিবারণ হয় না। সে পাঁচটি ছাগলের মাংসের কাবাব দিয়ে প্রাত:রাশ সম্পন্ন করে।

একদিন রাজার মত্ত হাতি শিকল ছিড়ে রাজপথে ছুটছে। হাতির পায়ের নিচে পড়ে মানুষ জীবন দিচ্ছে কিন্তু সাহস করে কেউ মত্ত হাতির মুখোমুখি হচ্ছে না। কিশোর রোস্তম গদা নিয়ে পাগলা হাতির সামনে ছুটে এল এবং গদার এক আঘাতে হাতিকে ধরাশায়ী করল। বীর রোস্তম অজেয় সোপান্দি দুর্গে কৌশলে প্রবেশ করে দুর্গের সর্দার ও সিপাহিদের হত্যা করে পিতামহের হত্যার প্রতিশোধ নিয়ে এল। পিতা জাল বীর পুত্র রোস্তমকে আলিঙ্গন করলেন। কেননা তিনি বারবার এ দুর্গ আক্রমণ করতে গিয়ে বিফল হয়েছেন। আজ পুত্রের শৌর্যে পিতার বুক গর্বে ফুলে উঠেছে।

তুরানের সেনাপতি আফরাসিয়াব ইরান আক্রমণ করে রাজা নওদরকে হত্যা করলেন এবং জালের রাজা জাবুলিস্তান আক্রমণের জন্য সৈন্য প্রেরণ করলেন। পিতা জালের সঙ্গে পুত্র রোস্তমও আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য যুদ্ধসাজ পরলেন। আস্তাবলে প্রবেশ করে সবচেয়ে দুরন্ত ও অবাধ্য যে ঘোড়া রখ্‌শ তাকেই নির্বাচন করলেন রোস্তম। রাক্ষস বংশের রখ্‌শ এতদিনে প্রকৃত মনিবকে পেয়ে মহানন্দে হ্রেষাধ্বনি করল। বীর রোস্তম রংধনু রঙের রেশমি পোশাক পরল। মাথায় তাজের ওপর ঝুলাল রেশমের বর্ণাঢ্য রুমাল আর হাতে তুলে নিল পিতামহ শামের সেই বিখ্যাত গদা।

রোস্তম যুদ্ধে চলল, কিন্তু বুকে ও বাহুতে নেই লোহার বর্ম। যে দেখে সে স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে থাকে। যুদ্ধে তুরাণি সৈন্যদের পিছু হটতে হলো। তরুণ রোস্তমের সঙ্গে যুদ্ধ করতে এসে স্বয়ং সেনাপতি আফরাসিয়াব কোনোক্রমে প্রাণ নিয়ে পালালেন।

বীর রোস্তম হলেন ইরানের মহাবীর রোস্তম। রোস্তম ইরানের স্বাধীনতা উদ্ধার করলেন। রাজা কায়কোবাদ রাজসিংহাসনে বসলেন। জনগণ মহাবীর রোস্তমের জয়গানে ইরান মুখরিত করল। সুখে শান্তিতে ইরানবাসী দিনাতিপাত করতে লাগল।

কিন্তু রাজা কায়কোবাদের পর রাজা কায়কাউস রাজা হলেন। কায়কাউস ছিলেন খেয়ালি এবং চাটুকারিতা-প্রিয় রাজা। চাটুকারদের প্রশংসায় বিভ্রান্ত হয়ে কায়কাউস দৈত্যদের রাজ্য পাহাড়ি দেশ মাজেন্দ্রান জয় করতে ছুটে গেলেন। মাজেন্দ্রানের রাজা প্রতিবেশী বন্ধু মহাবলী সফেদ দৈত্যের সাহায্যে রাজা কায়কাউসের বিশাল সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে রাজা কায়কাউসকে বন্দি করে রাখল।

ইরান রাজার এ বন্দিদশার সংবাদ পৌঁছাল জাবুলিস্তানে। মহাবীর রোস্তম রুখশের পিঠে সওয়ার হয়ে ছুটলেন দৈত্যরাজ্য মাজেন্দ্রানে। দীর্ঘ পথ, পায়ে পায়ে বিপদ আর ছলনা। অপরিসীম মনোবলের অধিকারী রোস্তম সমস্ত বাধা অতিক্রম করে অবশেষে আলবুরুজ পর্বত ডিঙিয়ে এলেন মাজেন্দ্রানে। রোস্তমের গদার আঘাতে একে একে শত্রু ভূপাতিত হলো। রাজা কায়কাউস মুক্ত হলেন।

কিন্তু ভয়ংকর লোমশ প্রাণী সফেদ দেও-এর রক্ত না হলে অন্ধ রাজার চক্ষু ভালো হবে না। মহাবীর রোস্তমের সঙ্গে মহাবলী সফেদ দেও সম্মুখযুদ্ধ শুরু করল। মনে হয় এমন প্রলয়ংকর যুদ্ধ পৃথিবীতে কখনও ঘটেনি এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে না।

দুই বীর যোদ্ধাই যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত হলো। অবশেষে মহাবীর রোস্তমের আঘাতে সফেদ দেও-এর কোমর ভেঙে গেল। রোস্তম তলোয়ার দিয়ে সফেদ দেও-এর গলা দ্বিখন্ডিত করলেন। অন্ধ রাজা কায়কাউস দেও-এর রক্তের ফোঁটা পেয়ে দৃষ্টি ফিরে পেলেন। আবার ইরানে শান্তি ফিরে এল। রোস্তম ফিরে গেলেন জাবুলিস্তানে।

মহাবীর রোস্তম একবার প্রিয় ঘোড়া রুখ্‌শের পিঠে চড়ে বেরিয়েছেন শিকার করতে। ঘুরে ঘুরে তিনি এসে পড়েছেন তুরানের কাছে এক জঙ্গলে। সারাদিন ঘুরে ঘুরে মনিব এবং অশ্ব দুজনই ক্লান্ত। বড় গাছের নিচে রোস্তম শুয়ে পড়েছেন। প্রগাঢ় ঘুমে তিনি নিমগ্ন। পাশেই প্রিয় রখশ ঘাস খাচ্ছে।

তখন নিশুতি রাত। রুখশ আপন মনে ঘাস খাচ্ছে। সে সময় একদল তুরানি সে পথ দিয়ে যাচ্ছিল। ঘোড়া চুরি করাই তাদের ব্যবসা। রুখ্‌শকে দেখে ওরা লোভ সামলাতে পারল না। ভুলিয়ে ভালিয়ে সে রাতেই ওরা রখশকে নিয়ে তুরান পালিয়ে গেল। কিন্তু ঘোড়াচোররা জানতেও পারল না তারা কার প্রিয় ঘোড়া নিয়ে পলায়ন করছে।

সকালের সূর্যের স্নিগ্ধ আলোয় এবং অরণ্যে পাখির কূজন শুনে মহাবীর রোস্তমের ঘুম ভাঙল। তিনি অভ্যাস মতোই প্রিয় রখ্‌শের নাম ধরে ডাকলেন। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই। এমন তো কখনও হয়নি! রোস্তম এখানে সেখানে খুঁজলেন, অবশেষে বনের প্রান্তে ধুলোর মধ্যে রখ্‌শের খুরের দাগ দেখে ঠিকই বুঝলেন তুরানি ঘোড়াচোররা তার প্রিয় রখশকে নিয়ে পালিয়েছে।

খুরের দাগ অনুসরণ করে ক্রোধে উন্মত্ত মহাবীর রোস্তম সামেনগান শহরে উপস্থিত হলেন। মহাবীর রোস্তমকে চেনে না কে? যারা কোনোদিন চোখে দেখেনি তারাও এই বিশালদেহী মহাবীরকে দেখেই বুঝতে পারল ইনিই ইরানের বীর রোস্তম। বীরের ক্রোধবহ্নি-মিশ্রিত চক্ষু দেখে সকলে প্রাণভয়ে ছুটে পালাল। সামেনগান অধিপতির নিকট সংবাদ গেল তিনি দ্রুত ছুটে এলেন মহামান্য অতিথিকে অভ্যর্থনা জানাতে। ইতোমধ্যেই সামেনগান অধিপতি তার নগরকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য চতুর্দিকে লোক-লস্কর ছুটিয়ে দিয়েছেন ঘোড়াচোরদের গ্রেফতার করার জন্য।

সামেনগান অধিপতির বিনীতবাক্যে আপাতত তুষ্ট হয়ে রোস্তম এলেন প্রাসাদে রাজ-অতিথি হয়ে। রোস্তমের সম্মানে বিরাট ভোজের আয়োজন হলো। নৈশভোজ শেষ করে পরিতুষ্ট রোস্তম গেলেন রাজশয্যায় বিশ্রাম গ্রহণ করতে।

হাতির দাঁতের পালঙ্কে শুয়ে শুয়ে রোস্তমের চোখে তন্দ্রার ভাব এসেছে, তখন মনে হলো এক অপরূপ সুন্দরী তাঁর শয্যাপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। সুন্দরীর স্নিগ্ধ সরল রূপমাধুর্য দেখে রোস্তম বিমোহিত হলেন। রোস্তমের তন্দ্রা কেটে গেল। তিনি তাড়াতাড়ি শয্যা ত্যাগ করে দেখলেন স্বপ্নে আর বাস্তবে কোনো ভেদ নেই সত্যিই এক অপরূপ সুন্দরী কন্যা তার শিয়রের প্রান্তে দন্ডায়মান। রোস্তম বললেন, কে তুমি রমণী? রমণী সলজ্জ নেত্র তুলে বলল,আমি তহমিনা। সামেনগান অধিপতি আমার পিতা। আপনার বীরত্ব ও শৌর্যের কথা শুনে এতদিন আপনাকে নিয়ে স্বপ্নের মধুর জাল বুনেছি। আপনার বীরত্বকে আমি এতকাল অর্ঘ্য নিবেদন করেছি। সত্যিই যখন আজ আপনি আমাদের মহান অতিথি হয়ে এসেছেন, তখন জানাতে এসেছি আমি এতকাল আপনাকেই স্বামীত্বে বরণ করেছি।

এই কথা বলে হাওয়ার দোলায় ভেসে তহমিনা ঘর ছেড়ে চলে গেল। কিন্তু ঘরের বাতাস রেখে গেল তার মধুর দোলা এবং মহাবীর রোস্তমের অন্তরে রেখে গেল এক অনাস্বাদিত মধুর ঝংকার।

মহাবীর রোস্তম আর ঘুমাতে পারলেন না। সকালের প্রথম আলো জানালা দিয়ে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই রোস্তম ছুটে গেলেন সামেনগান অধিপতির কাছে। রোস্তম নিঃসঙ্কোচে প্রস্তাব করলেন, তিনি তহমিনাকে বিবাহ করবেন। সামেনগান অধিপতি যেন হাতে আকাশের চাঁদ পেলেন। মহাবীর রোস্তম হবে তার জামাতা, এ যে ধারণার অতীত। তিনি সানন্দে রাজি হলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে মহাসমারোহে বিয়ের আয়োজন করতে ছুটে গেলেন।

মহা উৎসব, বিপুল আয়োজনের মধ্যে জাঁকজমক সহকারে রোস্তমের সঙ্গে তহমিনার বিবাহ হয়ে গেল। রাত্রির চাঁদ বাতায়নে দাঁড়াল। নিশাবসানের পূর্বে মহাবীর রোস্তম প্রিয় স্ত্রীর চিবুক স্পর্শ করে বললেন-যদি আমাদের পুত্রসন্তান হয় তা হলে এই তাবিজটি তার হাতে পরিয়ে দিও, আর যদি কন্যাসন্তান হয় তাহলে এ তাবিজ তার চুলে বেধে দিও। এ তাবিজের ভেতর আমি নিজের নাম স্বাক্ষর করে রেখেছি।

তহমিনা ছলছল চোখে স্বামীর দিকে তাকায়। রোস্তম সেই জলভরা চোখ মুছিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি বীরের স্ত্রী, কান্না তোমার শোভা পায় না। আমি আজই ইরান ফিরে যাব, শত্রুরা আবার প্রিয় ইরানের স্বাধীনতা হরণের জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে।

তহমিনা বিচ্ছেদ ব্যথায় কাতর হয়ে হয়তো কিছু বলতে চেয়েছিল। কিন্তু মহাবীর রোস্তম বাধা দিয়ে বললেন বীরের প্রকৃত স্থান যুদ্ধের ময়দান, যুদ্ধেই তোমার স্বামীর প্রকৃত পরিচয় ফুটে উঠবে।

প্রিয় অশ্ব রখ্‌শের পিঠে চড়ে মহাবীর রোস্তম ইরানের পথে চলে গেলেন। ঝরোকার ওপর চোখ রেখে হতভাগিনী তহমিনা স্বামীর চলে যাওয়া দেখল। যতক্ষণ পর্যন্ত স্বামীর মাথার সোনার মুকুট দেখা গেল, তহমিনা অপলক দৃষ্টিতে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাকল। তারপর যখন আর কিছুই দেখা গেল না, শুধু অশ্রুধারায় তার দৃষ্টি আচ্ছন্ন হয়ে এল। তখন স্বামীর ফেলে যাওয়া শয্যায় আছড়ে পড়ে ব্যাকুল ভাবে কাঁদাল। ইরানের অগ্নিদেবতা কি জানতে পেরেছিল তহমিনা কেঁদে কেঁদে বলেছিল-ওগো আমার ভাগ্যদেবতা, আমাকে তুমি পুত্রসন্তানের মা হতে দাও, যেন পুত্রের মুখ দেখে আমি বীর স্বামীকে হারানোর দুঃখ ভুলে থাকতে পারি।

হয়তো তহমিনার করুণ আবেদন সৃষ্টিকর্তা শুনেছিল। যথাসময়ে সুন্দরী তহমিনার কোল আলো করে এক পুত্রসন্তান এল। সকলেই মহাখুশি। সামেনগান অধিপতি নাতির নাম রাখলেন সোহরাব। মহাবীর রোস্তমের পুত্র সোহরাব। কিন্তু মা তহমিনার বুক সেদিন ক্ষণকালের জন্য হলেও কেঁপে উঠেছিল। তহমিনা যদিও ছেলের হাতে রোস্তমের দেয়া তাবিজ পরিয়ে দিলেন কিন্তু রোস্তমের কাছে দূত মারফত সংবাদ পাঠালেন তাদের একটি কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে।

দূতমুখে কন্যার সংবাদ পেয়ে রোস্তম বিমর্ষ হলেন। আশা করেছিলেন তিনি পুত্রের পিতা হবেন। রোস্তম একরকম জোর করেই তহমিনার কথা ভুলে থাকতে চাইলেন।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: