কারোর চাহিদা বিবেচনায় শাপলা কলি যুক্ত করা হয়নি : ইসি সচিব

কথা বলছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। ছবি : সংগৃহীত | ৩০ অক্টোবর ২০২৫ ২১:১২

কথা বলছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। ছবি : সংগৃহীত কথা বলছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। ছবি : সংগৃহীত

শাপলা আর শাপলা কলির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কারোর চাহিদা বিবেচনায় শাপলা কলি যুক্ত করা হয়নি বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।

তিনি বলেন, কোনো দলের বিবেচনায় নয়, প্রতীক নিয়ে বিরূপ মতামত আসায় শাপলা কলি যুক্ত করেছে কমিশন নির্বাচন। কিছু কিছু প্রতীক নিয়ে বিরূপ মন্তব্য আসায় বিধিমালা সংশোধন করা হয়েছে। এই বিবেচনায় আগের যে ১১৫টি প্রতীক ছিল সেখান থেকে ১৬টি প্রতীক বাদ দিয়ে নতুন করে কিছু প্রতীক তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। এবার সংশোধিত তালিকায় ১১৯টি প্রতীক শিডিউলভুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, শাপলা কলির সাথে আরও কিছু নতুন প্রতীক যুক্ত করা হয়েছে। এখানে নতুন করে বিতর্কের তো যৌক্তিক কোনো কারণ দেখছি না।

এর আগে, নির্বাচন কমিশনের প্রতীকের তালিকা সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে ‘শাপলা কলি’ অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সই করা এ-সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১৯৭২ সালের আর্টিক্যাল ৯৪ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নির্বাচন কমিশন, ‘নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮’ এর নিম্নরূপ অধিকতর সংশোধন করিল, উপরি-উক্ত বিধিমালার বিধি ৯ এর উপ-বিধি (১) এর পরিবর্তে নিম্নরূপ উপ-বিধি (১) প্রতিস্থাপিত হইবে।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, এই বিধির অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে, কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে, অনুচ্ছেদ ২০ এর দফা (১) এর অধীন, স্থগিতকৃত প্রতীক ব্যতীত, নিম্নবর্ণিত প্রতীকসমূহ হইতে, প্রাপ্যতা সাপেক্ষে, যে কোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করা যাইবে।

প্রজ্ঞাপনে প্রদত্ত প্রতীকগুলো হলো— আনারস, গাভি, টেলিভিশন, বই, রেল ইঞ্জিন, আম, গামছা, ডাব, বক, রিকশা, আলমিরা, গোলাপ ফুল, ড্রেসিং টেবিল, বাঘ, লিচু, ঈগল, ঘণ্টা, ঢেঁকি, বটগাছ, লাঙল, উট, ঘুড়ি, তারা, বাইসাইকেল, শাপলা কলি, উদীয়মান সূর্য, ঘোড়া, তালা, বালতি, সোনালি আঁশ, একতারা, চাকা, থালা, বেবি টেক্সি, সেলাই মেশিন, কাঁচি, চাবি, দাঁড়িপাল্লা, বৈদ্যুতিক পাখা, সোফা, কবুতর, চিরুনি, দালান, বৈদ্যুতিক বাল্ব, সিঁড়ি, কলম, চিংড়ি, দেয়ালঘড়ি, মই, সিংহ, কলস, চেয়ার, দোতলা বাস, মগ, সূর্যমুখী, কলার ছড়ি, কাঁঠাল, চশমা, দোয়াত-কলম, মাইক, হরিণ, কাপ-পিরিচ, ছড়ি, দোলনা, মোটরগাড়ি (কার), হাত (পাঞ্জা), কাস্তে, জগ, নোঙর, ছাতা, ধানের শীষ, মশাল, হাতঘড়ি, কেটলি, জাহাজ, নৌকা (স্থগিত), ময়ূর, হাতপাখা, হাঁস, কুমির, টর্চলাইট, পাগড়ি, মাছ, হাতি, কম্পিউটার, টিউবওয়েল, পানির ট্যাপ, মাথাল, হাতুড়ি, কুড়াল, টেবিল, পালকি, মিনার, হারিকেন, কুলা, টেবিল, প্রজাপতি, মোমবাতি, হ্যান্ডশেক, কুঁড়েঘর, টেবিলঘড়ি, ফলের ঝুড়ি, মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোন, হুঁকা, কোদাল, খেজুরগাছ, ট্রাক, ফুটবল, মোড়া, হেলিকপ্টার, ট্রাক্টর, ফুলকপি ও মোরগ।

এদিকে দলীয় প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’ই চেয়ে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গত জুনে নিবন্ধন আবেদনের সময় শাপলার পাশাপাশি কলম ও মোবাইল ফোন চেয়েছিল দলটি। পরবর্তী সময়ে দুই প্রতীক থেকে সরে এসে কেবল শাপলাতেই জোর দেয় এনসিপি। তবে রাজনৈতিক দলের জন্য তৈরি করা প্রতীক তালিকায় শাপলা না থাকায় এনসিপির আবেদন বারবারই নাকচ করে দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

তারও আগে এনসিপির আগে মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যও চেয়েছিল শাপলা প্রতীক, কিন্তু সে আবেদনও খারিজ করে দিয়েছিল ইসি। রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকলেও প্রতীক নিয়ে ইসির সঙ্গে গত কয়েক মাস ধরেই টানাপোড়েন চলছে এনসিপির। এ নিয়ে দফায় দফায় চলে চিঠি চালাচালি, সাক্ষাৎ-বৈঠক।

সবশেষ গত ৭ অক্টোবর আবারো শাপলা চেয়ে নির্বাচন কমিশনকে প্রতীকের সাতটি নমুনাচিত্র পাঠায় এনসিপি। তবে এটিও আমলে নেয় না ইসি। পাল্টা চিঠি দিয়ে কমিশনের সাফ বক্তব্য, বিধিমালার তালিকা থেকেই কোনো একটিকে বেছে নিতে হবে প্রতীক হিসেবে। বলা হয়েছিল, জবাব না পেলে নিজেদের সিদ্ধান্তেই প্রতীক বরাদ্দ দেবে কমিশন।

গত ১৯ অক্টোবর প্রতীক পছন্দের শেষ দিন ছিল। তবে সে সময়ও শাপলা ছাড়া অন্য প্রতীক নেবে না বলে জানায় এনসিপি। অবশেষে আজ প্রতীকের তালিকা সংশোধন করে ‘শাপলা কলি’ যুক্ত করে ইসি।

গত ২৭ অক্টোবর দুপুরে নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছিলেন, ‎বিধিমালায় শাপলা প্রতীক না থাকায় এনসিপিকে সেটি দেওয়ার সুযোগ নেই, এটি আমরা আগেও বলেছি। নির্বাচন কমিশন স্ববিবেচনায় অন্য প্রতীক দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: