‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুমোদন

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৯ অক্টোবর ২০২৫ ২০:৪৩

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন পেয়েছে ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’।

বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এ আইনের অনুমোদন ও বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ প্রণয়ন করা হয়েছে ব্যক্তিগত উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা, বিশ্বস্ততা, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য। এটি ডিজিটাল অর্থনীতির সম্ভাবনা সুরক্ষিত করতে এবং দায়িত্বশীল উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই অধ্যাদেশটি উপাত্ত সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ, মজুত, ব্যবহার, স্থানান্তর, প্রকাশ, বিনষ্টকরণসহ ডিজিটাল সেক্টরের উন্নয়নে সহায়ক হবে।

‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ:

  • ধারা: ৫৭টি ধারা রয়েছে এই অধ্যাদেশে।

  • ব্যক্তিগত উপাত্তের মালিকানা: অধ্যাদেশে ব্যক্তিগত উপাত্তকে ব্যক্তির মালিকানাধীন হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এবং তার সম্মতিতে উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের বিধান রাখা হয়েছে।

  • সম্মতির প্রক্রিয়া: ব্যক্তিগত উপাত্ত সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য উপাত্তধারীকে উদ্দেশ্য, ধারণ-মেয়াদ, স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত করা হবে এবং তার সম্মতি নেওয়া হবে।

  • শিশুদের উপাত্ত: শিশু বা সম্মতি প্রদানের অক্ষম ব্যক্তির উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের জন্য পিতামাতা বা আইনগত অভিভাবকের সম্মতি প্রয়োজন হবে।

  • উপাত্তধারীর অধিকার: উপাত্তধারী যেকোনো সময় তার সম্মতি প্রত্যাহার করতে পারবেন এবং এর মাধ্যমে তাদের অধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।

  • সংবেদনশীল উপাত্ত: সংবেদনশীল ব্যক্তিগত উপাত্ত শর্তসাপেক্ষে প্রক্রিয়াকরণের বিধান রাখা হয়েছে।

  • উপাত্তের প্রবেশাধিকার: উপাত্ত-জিম্মাদার প্রক্রিয়াকৃত উপাত্তে উপাত্তধারীর প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে।

  • ব্যক্তিগত উপাত্তের সীমাবদ্ধতা: ব্যক্তিগত উপাত্ত সংগ্রহের উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে তা ব্যবহার করা যাবে না।

  • স্বতন্ত্র নিরীক্ষক: এই অধ্যাদেশের অধীনে গঠিত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের কার্যক্রমের নিরীক্ষা করা হবে।

  • ব্যক্তিগত উপাত্তের শ্রেণীবিভাগ: সরকার ব্যক্তিগত উপাত্তকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করেছে:

    1. পাবলিক বা উন্মুক্ত ব্যক্তিগত উপাত্ত

    2. অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিগত উপাত্ত

    3. গোপনীয় ব্যক্তিগত উপাত্ত

    4. সীমাবদ্ধ ব্যক্তিগত উপাত্ত

  • আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: এই অধ্যাদেশের অধীনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যক্তিগত উপাত্ত বিনিময় এবং সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার সুযোগ রাখা হয়েছে।

  • অভিযোগ ও জরিমানা: উপাত্তধারীর অধিকার লঙ্ঘিত হলে প্রশাসনিক জরিমানা এবং ক্ষতিপূরণের বিধান রাখা হয়েছে।

  • দণ্ডবিধি: অসৎ উদ্দেশ্যে প্রক্রিয়াকরণ, বেআইনি প্রবেশ, অপব্যবহার, বা সংবেদনশীল উপাত্তের অননুমোদিত প্রক্রিয়াকরণে দণ্ড আরোপ করা হবে।

  • উপাত্তের মেয়াদ: উপাত্ত-জিম্মাদার নির্দিষ্ট মেয়াদের অতিরিক্ত সময়ের জন্য উপাত্ত ধারণ করতে পারবেন না।

এই অধ্যাদেশটি ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ, যা ডিজিটাল যুগে মানুষের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: