৩ মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার নির্দেশ

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:৩৮

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় তিন মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়ে রায় দিয়েছেন দেশটির হাইকোর্ট।

রায়ে আদালত বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব অনুসারে বিশেষত তিন মাসের মধ্যে সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হলো।

বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রায় দেন।

রায়ে অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাসংক্রান্ত ১৯৭২ সালের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করেছেন হাইকোর্ট।

৭২ সালের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুসার, বিচারকর্ম বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগে দায়িত্ব পালরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি দান ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃংঙ্খলাবিধান সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত থাকবে।

বিদ্যমান সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বিচারকর্ম বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল-নির্ধারণ, পদোন্নতি ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলাবিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি তা প্রয়োগ করে থাকেন।

১৯৭২ সালের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে, অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিষয় সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত ছিল।

১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এই দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত করা হয়। পরে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ‘এবং সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তা প্রযুক্ত হবে’ শব্দগুলো যুক্ত করা হয়।

১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ৩৯ ধারা অনুসারে ১১৬ অনুচ্ছেদের সংশোধন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বাতিল করা হলো। একইভাবে ১৯৭৫ সালের চতুর্থ সংশোধনী আইনের ১৯ ধারার মাধ্যমে ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনও সাংঘর্ষিক বলে বাতিল করা হলো।

সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী ও ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ের নজির অনুসারে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ১১৬ অনুচ্ছেদ যেভাবে ছিল, সেভাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিভাইভ (পুনরুজ্জীবিত) ও সংবিধানে পুনর্বহাল হবে। এই আদালতের রায়ের দিন থেকে এটি কার্যকর হবে।

এ ছাড়া ২০১৭ সালের জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।

এর আগে বিদ্যমান সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ এবং ২০১৭ সালের জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং বিচার বিভাগীয় পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা চেয়ে গত বছরের ২৫ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের সাত আইনজীবী রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত বছরের ২৭ অক্টোবর রুল দেন। রুলে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ এবং এ-সংক্রান্ত ২০১৭ সালের জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বিচার বিভাগীয় পৃথক সচিবালয় কেন প্রতিষ্ঠা করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে। আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

এরপর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৪ জানুয়ারি রুল শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। গত ২৯ জানুয়ারি এ মামলায় অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূইয়াকে নিয়োগ দেন আদালত। এই বেঞ্চে রুল শুনানি ও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল। এর মধ্যে গত ২৫ মার্চ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। পরে প্রধান বিচারপতি বিষয়টি শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি আহমেদ সোহেলের নেতৃত্বাধীন বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে দেন। বিচারপতি আহমেদ সোহেলের নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চে গত ২৩ এপ্রিল রুলের ওপর শুনানি শুরু হয়, যা গত ১৩ আগস্ট শেষ হয়। সেদিন আদালত রায়ের জন্য ২ সেপ্টেম্বর তারিখ রাখেন।

রুল যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করে রায় দেন আদালত। একই সঙ্গে সংবিধান ও আইনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা জড়িত থাকায় আপিলের জন্য সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে সার্টিফিকেট ইস্যু করেছেন আদালত।

আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন।

রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদি হাসান শুনানিতে অংশ নেন।

অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূইয়া এবং ইন্টারভেনর (পক্ষ) হিসেবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: