জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ

বক্তব্যের মাঝে দু’বার পড়ে গেলে বসেই বক্তব্য রাখেন আমির শফিকুর রহমান

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১৯ জুলাই ২০২৫ ২০:২৯

ছবি : সংগৃহীত ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে সভাপতির সমাপনী বক্তব্য দিচ্ছিলেন দলের আমির শফিকুর রহমান। বক্তব্যের এক পর্যায়ে হঠাৎ তিনি পড়ে যান। নেতা-কর্মীদের সহযোগিতায় উঠে দাঁড়ালেও আবারও অসুস্থ হয়ে পড়ে যান তিনি। পরে বসেই নিজের বক্তব্য শেষ করেন জামায়াত আমির।

আজ শনিবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের সমাবেশের মঞ্চে এ ঘটনা ঘটে। সমাবেশে ছিল বিপুল উপস্থিতি। এতে জামায়াতের জ্যেষ্ঠ নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারাও বক্তব্য দেন। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার এবং আহতদেরও অনেকে বক্তব্য দেন।

বিকেল পাঁচটার পর সমাপনী বক্তব্য দিতে ওঠেন দলের আমির শফিকুর রহমান।

ডায়াসে দাঁড়িয়ে বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘একটা লড়াই হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, আরেকটা লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। জামায়াত যে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়বে, তার প্রথম প্রমাণ হচ্ছে...।’ এ কথা শেষ করার আগে তিনি পড়ে যান।

নেতাদের সহযোগিতায় কিছুক্ষণের মধ্যেই উঠে দাঁড়িয়ে জামায়াত আমির বলেন, ‘সবাই নিজ নিজ জায়গায় অবস্থান গ্রহণ করুন। আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করি, আবার আপনাদের সামনে দাঁড়াতে পেরেছি। আমি বলেছিলাম, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ আমরা সবাইকে নিয়ে গড়ব। আমরা কথা দিচ্ছি, আল্লাহর মেহেরবানি ও জনগণের ভালোবাসা নিয়ে জামায়াত যদি সরকার গঠন করে, তাহলে...।’ এ কথা শেষ করার আগেই আবারও অসুস্থ হয়ে তিনি ধীরে ধীরে নিচে বসে পড়েন। এ সময় মাইকে বলা হয়, আমিরে জামায়াত একটুখানি অসুস্থ হয়েছেন গরমের কারণে। কিন্তু তিনি বারবারই চেষ্টা করছিলেন বক্তব্য দেওয়ার জন্য। ডাক্তাররা বলছেন, তাঁর আর বক্তব্য রাখা ঠিক হবে না।

এরই মধ্যে জামায়াতের আমির নিচে বসেই মাইকে আবার বক্তৃতা শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ যত সময় হায়াত দিয়েছেন, তত সময় মানুষের জন্য লড়াই করব, ইনশা আল্লাহ। এ লড়াই বন্ধ হবে না। বাংলার মানুষের মুক্তি অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। বলছিলাম, জামায়াত যদি আল্লাহর ইচ্ছা এবং জনগণের ভালোবাসায় দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পায়, তাহলে মালিক হবে না, সেবক হবে, ইনশা আল্লাহ। আজ আমি ঘোষণা দিচ্ছি, লক্ষ জনতাকে সঙ্গে নিয়ে জামায়াত থেকে যারা আগামী দিনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হবেন...।’

জামায়াত আমির বলতে থাকেন, ‘যদি আল্লাহর ইচ্ছায় ও জনগণের ভালোবাসায় জামায়াত থেকে সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেন, তাহলে কোনো এমপি-মন্ত্রী আগামী দিনে সরকারি কোনো প্লট গ্রহণ করবেন না। কোনো এমপি ও কোনো মন্ত্রী ট্যাক্সবিহীন কোনো গাড়ি চড়বেন না। কোনো এমপি ও কোনো মন্ত্রী নিজের হাতে কোনো টাকা চালাচালি করবেন না। কোনো এমপি ও কোনো মন্ত্রী যদি তাঁর নির্দিষ্ট কোনো কাজের জন্য বরাদ্দ পেয়ে থাকেন, কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের কাছে তাঁরা তার প্রতিবেদন তুলে ধরতে বাধ্য থাকবেন।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘চাঁদা আমরা নেব না, দুর্নীতি আমরা করব না। চাঁদা আমরা নিতে দেব না, দুর্নীতি সহ্য করব না। এই বাংলাদেশটাই আমরা দেখতে চাই। যুবকদের স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, তোমাদের সঙ্গে আমরা আছি।’

বক্তব্যের শেষাংশে জামায়াত আমির বলেন, ‘আল্লাহর ইচ্ছা, শরীর আমাকে সাময়িকভাবে সহযোগিতা করেনি। এটাও আল্লাহর ইচ্ছা যে এখন আল্লাহ আমাকে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছেন। আমার মউত আল্লাহ-নির্ধারিত সময় থেকে এক সেকেন্ড আগে হবে না এবং হায়াত যা দিয়েছেন, তার এক সেকেন্ড আগেও আমি যাব না।’

বক্তব্য শেষে জামায়াত আমির নেতাদের সঙ্গে মঞ্চে দাঁড়ান। তখন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে অনেকে যেমন অসুস্থ হয়েছেন, আমাদের আমিরে জামায়াতও সাময়িক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। মহান আল্লাহ তাআলা তাঁকে কথা বলা ও সমাপ্ত ঘোষণার তৌফিক দিয়েছেন।’ এ সময় জামায়াত আমিরকে দুই পাশ থেকে ধরে ছিলেন দুজন নেতা।

সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর পদ্ধতি) নির্বাচনসহ সাত দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামী এই সমাবেশের আয়োজন করেছে। সারা দেশ থেকে দলটির নেতা–কর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন। বেলা দুইটায় আয়োজনের মূল পর্ব শুরু হয়। আমিরের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শেষ হয়।

জামায়াত সূত্র জানা গেছে, সমাবেশস্থল থেকে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: