তারল্য সংকটে ভুগছে বাংলাদেশের ৮ ব্যাংক : গভর্নর আব্দুর রউফ

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১৯ জুন ২০২৩ ১১:৪৪

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার : সংগৃহীত ছবি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার : সংগৃহীত ছবি


বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, এখন পর্যন্ত আটটি ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে যাতে তারা সংকট থেকে বের হয়ে আসতে পারে, সে ব্যাপারে কাজ করছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ১৮ জুন, রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

আব্দুর রউফ বলেন, বেসিক ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামি ব্যাংকের মতো কয়েকটি ব্যাংক মিলিয়ে মোট ৮টি ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে। ব্যাংকগুলোকে জরিমানা করা নয়, বরং তারা যাতে ব্যাংকিং ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারে সেটিই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য।

তারল্য সংকটে ভোগা ব্যাংকগুলোর নাম প্রকাশ করতে বলা হলে গভর্নর বলেন, ‘তিনটির নাম তো বলেই দিলাম। বাকিগুলো ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক।’

সম্প্রতি ইসলামি ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের ছেলে আহসানুল আলম মারুফ (২৮) চেয়ারম্যান হয়েছেন। এত অল্প বয়সে চেয়ারম্যান হওয়াকে কীভাবে দেখছেন–জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, ‘আমি যতদূর জানি এর আগেও তিনি একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। কে কোন ব্যাংকের চেয়ারম্যান হবেন তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মতির প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগে সম্মতি জানায়। চেয়ারম্যান পদ ব্যাংকের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।

বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতিকে কোনোভাবেই দুর্বল বলা যাবে না উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে দেশের রেমিট্যান্স ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। পরিসংখ্যান দেখলে বাংলাদেশের অর্থনীতি দুর্বল হয়েছে–এ কথা বলার কোনো সুযোগ নেই।

নতুন টাকা ছাপানোর ব্যাপারে আব্দুর রউফ বলেন, টাকা ছাপানো মানেই যে খারাপ এমন কিছু নয়। কথা হচ্ছে ছাপানো টাকা কোন খাতে খরচ করা হচ্ছে তা নিয়ে। অনেক সময় তারল্য দেখা দিলে ব্যাংক বন্ড কিনে সেটা সামাল দেয়। মূলত বন্ড কেনা বা নানা মাধ্যমে সরকারকে ঋণ দিয়ে ব্যাংক এক রকমের প্রাইভেট খাতকে সতেজ রাখার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের রিজার্ভের টাকা দিয়ে ঋণপত্র (এলসি) খুলে এখনও বিলাসবহুল পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। বিগত বছরে এত কড়াকড়ির পরও রেকর্ড সংখ্যক বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করা হয়ছে। এসব রুখতে লেন্ডিং হার বাড়িয়ে দেয়া হবে। এতে অপ্রয়োজনীয় আমদানির পরিমাণ কমে আসবে। এতদিনের যে লেন্ডিং রেট গ্যাপ ছিল, এটি কোনো অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নয় বরং রাজনৈতিক।

বিদেশের বাজারে রফতানির আটকে থাকা টাকার অঙ্ক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকে বলেন ১০ বিলিয়ন ডলার রফতানির টাকা বিদেশের বাজারে আটকে আছে। প্রথমত, টাকার অঙ্ক ২ বিলিয়ন ডলার; দ্বিতীয়ত, এটি আটকে থাকা নয়। ১৮০ দিনের মধ্যে রফতানির টাকা দেশে আসার নিয়ম। সে হিসেবে এমন কোনো বড় অঙ্কের অর্থ আটকে নেই, যা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে।

বর্তমান বাজারের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বিগত মুদ্রানীতি ব্যর্থ হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে গভর্নর বলেন, মুদ্রানীতি সফল বা ব্যর্থ হওয়ার বিষয় নয়। একটা মুদ্রানীতি কাজে না লাগলে পরের অর্থবছর নতুন মুদ্রানীতি দেয়া হবে। সারা বিশ্বে এটাই নিয়ম। মুদ্রানীতি ব্যর্থ হয়েছে বলতে গেলে, চলতি অর্থবছর ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশের মুদ্রানীতি ব্যর্থ হয়েছে বলতে হবে।

বাংলাদেশের ঘোষিত নতুন মুদ্রানীতি নিয়ে গভর্নর বলেন, এবারের মুদ্রানীতি বিগত মুদ্রানীতির থেকে আলাদা। আগেকার মুদ্রানীতি মূলত টাকা সরবরাহের দিকে জোর দিয়ে প্রস্তুত করা হতো। এবারের মুদ্রানীতিতে টাকা সরবরাহ নয় বরং মূল্যস্ফীতি কমাতে সুদহারের ওপর জোর দিয়ে করা হয়েছে।

এবারের মুদ্রানীতিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ নীতি মেনে রিজার্ভের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। এ ছাড়া পাশাপাশি প্রথাগত নীতি মেনেও রিজার্ভ নির্ধারণ করা হবে বলে জানান গভর্নর।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: