
অমর একুশে বইমেলার শেষ সপ্তাহ চলছে, কালই এর শেষ দিন। মেলা প্রাঙ্গণে জনসমাগম বেড়েছে অনেক বেশি। বিশেষ করে মেলায় ইসলামিক বইয়ের স্টলগুলোতে দর্শনার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। মেলার অন্য অংশে ক্রেতার তুলনায় দর্শনার্থী বেশি হলেও ইসলামি বইয়ের স্টলগুলোতে তার চিত্র ঠিক উল্টো। এসব স্টলগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া, তাদের অধিকাংশই বই কিনেই ঘরে ফিরছেন বলে জানান বিক্রয়কর্মী ও প্রকাশকরা।
সম্প্রতি বইমেলার ইসলামি বইয়ের স্টলগুলো ঘুরে এই চিত্র লক্ষ্য করা যায়। এই ২৪ দিনে বইমেলায় সর্বমোট ২ হাজার ৬১৬টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে, যার মধ্যে গতকাল একদিনে সংযুক্ত হয়েছে ৯৮টি বই।
বইমেলা ঘুরে দেখা যায়, মেলার মন্দির গেট দিয়ে ঢুকতেই বেশ কয়েকটি ইসলামি বইয়ের স্টল। তাছাড়া, উদ্যানের লেকের পাশেও কিছু ইসলামি বইয়ের স্টল লক্ষ্য করা যায়। স্টলগুলোর আশেপাশে প্রচুর জনসমাগম দেখা যায়। অধিকাংশই পাঠক এবং বই কেনায় ব্যস্ত বলেও পরিলক্ষিত হয়। ইসলামি বইয়ের স্টলগুলোর মধ্যে গার্ডিয়ান পাবলিকেশনস, সমকালীন, সমর্পণ, মোহাম্মদী লাইব্রেরি, আইসিএস পাবলিকেশন উল্লেখযোগ্য।
সমর্পণ প্রকাশনী থেকে বই কেনা সালমান বলেন, ফ্যাসিবাদের আমলে আমরা ইসলামি বইয়ের স্টলগুলো পেতাম না। কিছু স্টলের অনুমতি দেওয়া হলেও তাদের এক কোনে ফেলে রাখা হতো। এখন সবগুলো স্টলের অনুমতি আছে এবং ইসলামপ্রিয় পাঠক বই কিনতে পারছে।
সমকালীন প্রকাশনীর সামনে কথা হয় রফিক নামের একজন পাঠকের সঙ্গে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ইসলামি বই মেলা থেকে নিষিদ্ধ করার সুযোগ খুঁজতো। কিন্তু তার পতন হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা এখন বইমেলায় অবাধ বিচরণ করছে, মনমতো বই কিনতে পারছেন।
গার্ডিয়ান প্রকাশনীর এক বিক্রয়কর্মী বলেন, আমাদের বই ইসলামি জগতে সাড়ে ফেলেছে। বরাবরের মতই আমাদের বই ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে।
বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের প্রকাশনী আইসিএসের এক বিক্রয়কর্মী বলেন, আমাদের স্টলে প্রথম দিন থেকেই মানুষের ভিড় লেগে আছে। শুধু আমাদের সংগঠন না, বাইরের মানুষই বেশি আসছে। সবাই খুঁজে খুঁজে আমাদের স্টল বের করে বই কিনছেন। আমরা একদিনে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৭ হাজার টাকার বই বিক্রি করতে পেরেছি। কোনোদিনই লাখ টাকার কমে বিক্রি হচ্ছে না।
সত্যায়ন প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী তারেকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বই সবসময়ই মেলায় জনপ্রিয়তা পায়। আমাদের বেশ কিছু বই ভালো চলছে। ক্রেতারা অন্য স্টলে বই এর সাথে ছবি তুলতে গেলেও আমাদের এখানে বই কিনতেই আসে।
মোহাম্মদী লাইব্রেরির প্রকাশনীটির প্রকাশক সাদিক উল্লাহ বলেন, আমরা গত ১৭ বছর ধরে মেলার বাইরে। ২০০৮ সালে আমরা সর্বশেষ মেলায় এসেছিলাম। আমাদের মেলা থেকে দূরে রাখা হতো। আমাদের বলা হতো, বায়তুল মোকারম মসজিদে সব ইসলামি প্রকাশনা নিয়ে পৃথক বইমেলার আয়োজন করা হবে।
আইসিএস পাবলিকেশনের পরিচালক মোবাশ্বের হোসেন বলেন, আমরা বইমেলায় এত বছর পরে এসেও ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। মানুষ আসছে এবং বই কেনার জন্যই আসছে। খালি হাতে ফেরা দর্শনার্থীর সংখ্যা নিতান্ত কম। শুধু জামাত-শিবিরের জনশক্তি না, সাধারণ পাঠকরাও আসছেন আমাদের বই কেনার জন্য।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: