টানা ছয় মাস ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রবাসী আয়

জানুয়ারিতে রেকর্ড ৩% প্রবৃদ্ধি রেমিট্যান্সে

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:২৫

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে ২ দশমিক ১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ২৬ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। এ নিয়ে টানা ছয়মাস ২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রেমিট্যান্স পেল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছরের জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত বছরের জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। মাসের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স আসার গতি ভালো ছিল। এ কারণে সদ্য বিদায়ী মাস জানুয়ারিতেও দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো রেমিট্যান্স। এ হিসাবে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৮৬১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা এসেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হুন্ডির চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। অর্থ পাচার হ্রাস পাওয়ার ফলে আগে যে-সব অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো হতো, এখন তা আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে আসছে। এছাড়া, আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে ডলারের দরের ব্যবধান কমে এক টাকার মধ্যে সীমিত হয়েছে, যা ডলারের আনুষ্ঠানিক দর বৃদ্ধি এবং হুন্ডির চাহিদা হ্রাসের কারণে সম্ভব হয়েছে। এসব কারণে বৈধ পথে রেমিট্যান্স বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সদ্য বিদায়ী জানুয়ারি মাসের পুরো সময়ে এসেছে প্রায় ২১৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। আলোচ্য সময়ে সরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫১ কোটি ১১ লাখ ৩০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে ১১ কোটি ৬০ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এ সময়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৫৫ কোটি ১৫ লাখ ৭০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে প্রায় ৬৫ লাখ ডলার।

তবে আলোচ্য সময়ে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি এমন ব্যাংকের সংখ্যা ৮টি। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- কমিউনিটি ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক এবং পদ্মা ব্যাংক। এছাড়া বিদেশি খাতের ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।

এর আগে গত ডিসেম্বর মাসে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার বা ২৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩১ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকার বেশি। একক মাস হিসেবে আগে কখনোই এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। এর আগে করোনাকালীন ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স আসে প্রায় ২৬৪ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেশি। গত বছরের ডিসেম্বরে এসেছিল ১৯৯ কোটি ১০ লাখ ডলার।

২০২৪ সালের পুরো বছরের মধ্যে জুলাই ছাড়া প্রত্যেক মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে প্রবাসী বাংলাদেশীরা কম হারে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এই মাসেও গতানুগতিক রেমিট্যান্স আসলে পুরো বছরের প্রত্যেক মাসে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসার রেকর্ড হতে পারতো। যেখানে ২০২৩ সালে মাত্র দুই মাসে রেমিট্যান্স ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল।

এদিকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বরে) এক হাজার ৩৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৯৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার বেশি। গত অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৮০ কোটি ডলার।

প্রসঙ্গত, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৩ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। রেমিট্যান্সের এ অঙ্ক এ যাবতকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আহরণ। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে, যার পরিমাণ ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) এরই মধ্যে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বাকি পাঁচ মাসে ৯ বিলিয়ন ডলার আসলে একক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসা অতিতের সব অর্জন ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হতে পারে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: