২০ বছর পর পাকিস্তান-বাংলাদেশ যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের সভা

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২২ জানুয়ারী ২০২৫ ১৫:৩২

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

প্রায় ২০ বছর পর পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে এ সভা হতে পারে। সভায় উভয় দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি যোগাযোগ বাড়ানোয় বেশি জোর দেওয়া হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ইআরডির কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে জেইসি সভার আলোচ্যসূচিসহ অন্যান্য বিষয়ে কাজ শুরু করেছেন। দুই দেশের মধ্যে সর্বশেষ জেইসি সভা হয় ২০০৫ সালে।

পাকিস্তানের সঙ্গে আসন্ন জেইসি সভার আলোচ্যসূচিতে রাখার জন্য এরই মধ্যে ১৫টি দপ্তরের প্রধানের কাছে প্রস্তাব চেয়ে চিঠি দিয়েছে ইআরডি। যাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে—পররাষ্ট্র, শিল্প, বাণিজ্য, বস্ত্র ও পাট, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এসব মন্ত্রণালয় ও দপ্তর থেকে ইআরডিতে প্রস্তাব আসতে শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেন, ‘জেইসির সভা করার জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। যেকোনো দেশের জিইসি সভার আলোচ্যসূচি ঠিক করার আগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব চাওয়া হয়। পরে সেই প্রস্তাবগুলো থেকে খসড়া আলোচ্যসূচি ঠিক করে তা সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠাতে হয়। ওই দেশও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আমাদের কাছে প্রস্তাব পাঠায়। দুই দেশের অনুমোদনের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সূচি ঠিক করা হয়।’

২০০৫ সালের ১২-১৩ সেপ্টেম্বর দুই দেশের মধ্যে ঢাকায় অষ্টম জেইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এখন পর্যন্ত সেটিই শেষ সভা। ওই সভায় পাকিস্তানের বাজারে শতাধিক পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা চেয়েছিল বাংলাদেশ। অন্যদিকে পাকিস্তান চেয়েছিল মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ)।

২০০৫ সালের পর জেইসির আর কোনো সভা হয়নি। বিশেষ করে গত আওয়ামী লীগ শাসনামলের ১৬ বছরে পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে কোনো জেইসি সভা অনুষ্ঠানের উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি।

দেশে গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, অর্থাৎ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর আগ্রহ দেখায় পাকিস্তান। এ নিয়ে গত কয়েক মাসে ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ অর্থ উপদেষ্টাসহ কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সব সাক্ষাতেই তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির আগ্রহ দেখান। এ ছাড়া গত সপ্তাহে পাকিস্তানি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফপিসিসিআইয়ের নেতাদের নেতৃত্ব একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে। এতে নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির সভাপতি আতিফ ইকরাম শেখ। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য জোরদার করতে তখন বিজনেস কাউন্সিল গঠনের বিষয়ে এফবিসিসিআই ও এফপিসিসিআই একটি সমঝোতা চুক্তি সই করে।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তানের আগ্রহেই মূলত জেইসি সভা হতে যাচ্ছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এই সভা করতে চেয়েছিল পাকিস্তান, কিন্তু প্রস্তুতি ও সময়ের অভাবে তা হয়নি।

গত মাসে ইআরডির পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জিইসি সভার নতুন সময় নির্ধারণে পাকিস্তানকে অনুরোধ করার কথা জানানো হয়। উল্লেখ্য, পাকিস্তানের সঙ্গে জেইসি সভার সমন্বয়ক হলো ইআরডি।

ইআরডির তথ্য অনুসারে, বর্তমানে ১৮টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন (জিইসি) আছে। দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, সৌদি আরব, ইরান, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), রোমানিয়া, তুরস্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: