বেইজিংয়ে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক

বাংলাদেশের মর্যাদা রক্ষায় পাশে থাকবে চীন

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২২ জানুয়ারী ২০২৫ ১৫:২২

ছবি: সংগৃহীত ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় মর্যাদা রক্ষায় সর্বোতভাবে পাশে থাকবে চীন। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে বেইজিং। চীন সফররত পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে মঙ্গলবার বেইজিংয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এমনটাই জানালেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।

তৗহিদ হোসেন প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে সোমবার থেকে চীনে রয়েছেন। বৈঠকে চীনের তরফে খোলাসা করেই বলা হয়, জাতীয় অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়নের পথ অন্বেষণ এবং বাংলাদেশিরা নিজদের খেয়ালখুশি মতোই তাদের প্রয়োরিটি বা পছন্দ ঠিক করবে। বাংলাদেশের যেকোনো যৌক্তিক সিদ্ধান্ত বা পছন্দে যথাযথ সম্মান দেখাবে চীন। বেইজিং সফররত সরকারি প্রতিনিধিদলের সদস্যদের সঙ্গে আলাপে এ তথ্য জানা গেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার গৃহীত সংস্কার কার্যক্রমকেও স্বাগত জানিয়েছে চীন। সেইসঙ্গে তারা বাংলাদেশে চীনা-ধাঁচের আধুনিকীকরণকে উৎসাহিত করেছে। চীন মনে করে করে এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে তার প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য উদাহরণ হতে পারে।

বিআরআই-এর আওতায় সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ককে গভীর করার অঙ্গীকার:

এদিকে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং উচ্চাভিলাষী আন্তঃআঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্প ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ বা বিআরআই-এর সুফল পেতে চায় বাংলাদেশ। এর আওতায় পারস্পরিক সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ককে আরও গভীরতর করার অঙ্গীকার করেছে দুই দেশ। বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ং ই এবং সফররত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের মধ্যকার বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে চীনের প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যম ‘দ্য চায়না ডেইলি’। সেই রিপোর্ট মতে, বৈঠকের পর লিখিত বিবৃতি দিয়েছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে এটি উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা বেইজিংস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস কোনো কিছু প্রচার করেনি।

উল্লেখ্য, গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হওয়ার পর এই প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে মো. তৌহিদ হোসেন চীনে রয়েছেন। ৫ মাসে তিনি বিদেশে বহুপক্ষীয় বিভিন্ন আয়োজনে অংশ নিলেও কোনো দেশে এটিই তার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। চায়না ডেইলির রিপোর্ট মতে, বৈঠকের পর প্রদত্ত বিবৃতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, চীনের পররাষ্ট্রনীতিতে প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ এবং এ দেশের জনগণের সবসময়ই গুরুত্ব রয়েছে। আধুনিকায়ন বা আধুনিক সভ্যতা সম্পর্কে চীনের যে ধারণা-তা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ব্যাপক সংস্কার এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম-যারা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বিষয়ক সমঝোতার সমর্থক।

বিবৃতিতে দুই দেশের মধ্যকার বিভিন্ন বৃহৎ প্রকল্প, ‘ছোটো কিন্তু সুন্দর’ জীবিকা নির্বাহ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা এবং উদীয়মান নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্বেষণে উভয়ের পারস্পরিক সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক আরও সুসংহত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ওয়াং ই। তিনি দু'দেশের ঐতিহ্যমন্ডিত সহযোগিতা সুসংহত করার তাগিদ অনুভব করেন।

১৯৭৫ সালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় চীন। চলতি বছর দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্ণ হবে। বৈঠক শেষে এক বার্তায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাংলাদেশের জন্য এমন এক ঐকমত্য, যা বাংলাদেশের সব সরকার এবং পুরো জাতি সমর্থন করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে সমর্থন করা এবং দীর্ঘ ৫ দশক ধরে বিভিন্ন ইস্যুতে নিঃস্বার্থভাবে সহযোগিতা করার জন্য বেইজিংকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তৌহিদ হোসেন। সেইসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ সবসময়ই ‘এক চীন’ নীতিতে আস্থাশীল।

বৈঠকে ওয়াং ই বলেন, আপনি দায়িত্বগ্রহণের পর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরের গন্তব্য হিসেবে চীনকে বেছে নিয়েছেন, যা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং আপনার ব্যক্তিগতভাবে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রতি উচ্চ মনোযোগের প্রতিফলন। চীন এবং বাংলাদেশ ভালো প্রতিবেশী যারা একে অপরকে সাহায্য করে এবং ভালো অংশীদার যারা উভয়ের সাধারণ মানুষের উন্নয়ন চায়। কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ৫০ বছরে, উভয়পক্ষ সর্বদা একে অপরকে সম্মান করেছে, একে অপরকে সমানভাবে বিবেচনা করেছে। যা উভয়ের জন্য লাভজনক।

চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের সূবর্ণজয়ন্তীর বছর ২০২৫কে ‘চীন-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক বিনিময় বছর’ হিসেবে পালিত হবে। ওয়াং ই বলেন, এই সময়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়নের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। চীন বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব অব্যাহত রাখা তো বটেই, বরং কৌশলগত যোগাযোগ জোরদার, বাস্তব সহযোগিতা গভীর করতে আগ্রহী। চীন এবং বাংলাদেশ উভয়ই উন্নয়নশীল দেশ যাদের বিস্তৃত সাধারণ স্বার্থ রয়েছে। তাদের আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয়ে সংহতি ও সহযোগিতা জোরদার করা এবং আরও ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিসঙ্গত বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখা উচিত। চীন জাতিসংঘ এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থাগুলোর মতো বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানে বৃহত্তর ভূমিকা পালনে বাংলাদেশকে সমর্থন করে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: