জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা ১৭ মিনিটে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সর্বদলীয় এ বৈঠক শুরু হয় প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে। ইতিমধ্যে বৈঠকে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যরা।
বৈঠক শুরুর আগে অনিশ্চয়তা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বিএনপির প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল বৈঠকে যোগ দিয়েছেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া অন্য দলের নেতৃবৃন্দের মধ্যে আছেন- গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মাদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল ও সংগঠনটির মূখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আব্দুল কাদেরের নেতৃত্বে তিন সদস্য, ইসলামি আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমানের নেতৃত্বে দুই সদস্য, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।
এছাড়া যোগ দিয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ মার্কসবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা ও জাতীয় গণফ্রন্টের কামরুজ্জামান।
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে জাতীয় ঐক্যে পৌঁছাতে অন্তর্বর্তী সরকার বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠকের ঘোষণা দেয়।
মঙ্গলবার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বিষয়টি তুলে ধরে বলেছিলেন, “গত ১২/১৩ দিন ছাত্রদের ঘোষণাপত্র অনুকরণে একটা ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্টেক হোল্ডারদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি। সবার সাথে আমাদের কথা বলা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াত, নারী সংগঠন, শিক্ষক সংগঠন বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সাথে, ছাত্রদের সাথে আমরা কথা বলেছি।
“তারা সবাই প্রক্লেমেশনের বিষয়ে একমত আছেন যে ঘোষণাপত্রটি দিতে হবে। কিন্তু ঘোষণাপত্রটি কবে এবং এর ভিতরে কী কী কন্টেন্ট থাকবে সে বিষয়ে আমরা ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে পারিনি। আগামী বৃহস্পতিবার আশা করি সবাই মিলে একটা সর্বদলীয় বৈঠক হবে।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। গত ২৯ ডিসেম্বর ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে আনে তারা। বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর ওই ঘোষণাপত্র প্রকাশের কর্মসূচিও দেয় তারা।
এ বিষয়ে ২৯ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নাৎসি বাহিনীর মত অপ্রাসঙ্গিক এবং ১৯৭২ সালের সংবিধানের ‘কবর’ রচনা করা হবে।”
প্রথমে সরকার এর সঙ্গে যুক্ত না হলেও পরে এ প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানায়। তখন ৩১ ডিসেম্বর ঘোষণাপত্র প্রকাশের কর্মসূচি বদল করে সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
পরে সরকার ঘোষণাপত্র তৈরির কাজ শুরু করে। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা শুরুর কথা বলেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ। তবে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এ নিয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: